‘আমার সততার পরীক্ষার দরকার নেই’
অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্য চলতো এমন ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত থাকা নিয়ে সমালোচনার মুখে বাম নেতা রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘আমার সততার পরীক্ষা নতুন করে দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’ শনিবার সকালে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ওয়ার্কার্স পার্টির দশম কংগ্রেসের উদ্বোধন পর্বে একথা বলেন তিনি।
ক্ষুব্ধ মেনন কংগ্রেসে বলেন, আজকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানের লড়াই চলছে। আমি আজকে যেহেতু ঢাকা-৮ আসনের এমপি… সেই আসন ঘিরেই ক্যাসিনো কাণ্ডের তোলপাড়। মিথ্যা সূত্র উদ্ধৃতি দিয়ে আজকে পত্রিকায় কথা বলা হচ্ছে। আজকে আমার কর্মীদের বলে যেতে চাই, আমার সমস্ত চরিত্র সারা জীবনের অর্জন। আমি আমার জীবনে সৎ ছিলাম, সৎ আছি। আমার সততার পরীক্ষার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।
সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের প্রেক্ষাপটে মেনন বলেন, ‘অর্থনেতিক দুর্বৃত্তপনা রাজনীতিতে জিম্মি করে ফেলেছে। তার প্রমাণ আজকের শুদ্ধি অভিযান। দুর্বৃত্তদের দমন করা না গেলে তারা নিয়ামক শক্তি হয়ে উঠবে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমরা কথা বলছি না, আমরা কথা বলতে পারছি না। ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে পার্লামেন্টে নোটিস গ্রহণ করা হয় না। ক্যসিনো বন্ধের আলোচনা হয় না। এটাই বাস্তব। আজকে সকল মতকে এগিয়ে আসতে দিন। মতপ্রকাশের অধিকার দিয়ে দৃঢ়ভাবে প্রস্তুত করুন ডিজিটাল বাংলাদেশ।’
জুয়ার আখড়া বন্ধে সম্প্রতি র্যাবের অভিযানে ঢাকার মতিঝিলের ইয়ংমেন্স ফকিরাপুলে অবৈধ ক্যাসিনো পাওয়া গিয়েছিল, এই ক্লাবটির সভাপতি হলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মেনন।
একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে মেননের এক বক্তব্যের জন্য তার জোটসঙ্গী আওয়ামী লীগের নেতাদের সমালোচনায় সরব হওয়ার মধ্যে ক্যাসিনো চালিয়ে ক্লাবের অবৈধ আয়েও তার যোগসাজশ রয়েছে বলে মন্তব্য আসে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. ইউনুছ আলী আকন্দ তাকে একটি আইনি নোটিস পাঠান।
গত সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে মেননের সঙ্গে ভোটের লড়াইয়ে নামা জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইউনুস আলীর অভিযোগ, মেনন নিজেই ওই ক্যাসিনো উদ্বোধন করেছিলেন।
শুরু বাম ফ্রন্টে থাকলেও দেড় যুগ আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলে যোগ দেয় ওয়ার্কার্স পার্টি। এই কারণে দলের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভক্তি। এবার কংগ্রেসের আগেও মেননের বিরুদ্ধে আদর্শচ্যুতির অভিযোগ তুলে দল ছেড়েছেন সাত নেতা।
তাদের উদ্দেশে মেনন বলেন, ‘আমাদের নৌকায় তুলে দিয়ে এখন তারা বলছেন, তারা নৌকা মানেন না। নতুন ঐক্যের কথা বলছেন। আমি তাদের বলতে চাই, ওয়ার্কার্স পার্টিই একমাত্র প্রাসঙ্গিক বামপন্থি দল। আমাদের কিছু বন্ধু আমার মতাদর্শ বিচ্যুতির কথা বলেছেন, কমিউনিস্ট আন্দোলনের শতবর্ষে কমিউনিস্ট ঐক্যের কথা বলছেন। আমি বলছি, চক্রান্ত করে, ষড়যন্ত্র করে আর যাই হোক, ঐক্য হয় না। কমিউনিস্ট ঐক্য দূরে থাক, কোনো গণতান্ত্রিক ঐক্য হয় না, ঐক্য হয় রাজপথের লড়াইয়ে।’
মেনন বলেন, ‘বিএনপি-জামাত যখন তাণ্ডব চালাচ্ছিল সারা দেশে, সে প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক প্রয়োজনে আমি মন্ত্রিত্ব নিয়েছিলাম। সেটা কোনো ব্যক্তির সিদ্ধান্ত ছিল না। ওয়ার্কার্স পার্টি কৌশল জানে, সে কৌশল হল কোন পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ