ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

পরিত্যক্ত প্রাসাদে ঘুরে বেড়াত বাঘ!

  ফিচার ডেস্ক

প্রকাশ : ০১ মে ২০২০, ২০:২১

পরিত্যক্ত প্রাসাদে ঘুরে বেড়াত বাঘ!
ছবি: সংগৃহীত

পুরাণে ‘পম্পা’ হলেন উর্বরতার দেবী। তিনি পার্বতীর আর এক রূপ। আবার কন্নড় ভাষায় ‘পম্পা’ শব্দের অর্থ হল বড় অথবা মহান। এই শব্দ থেকেই জন্ম নিয়েছে ‘হাম্পে’ বা ‘হাম্পি’। তুঙ্গভদ্রা নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল এই প্রাচীন সভ্যতা। যে ঐশ্বর্যে টেক্কা দিত সুদূর রোম নগরীকেও।

পম্পানগরীর নাম রামায়ণের কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ডেও বলা হয়েছে। এরপর মৌর্য বংশ, দাক্ষিণাত্যের বাদামির চালুক্য বংশ, হোয়সল বংশ-সহ পরবর্তী শাসকের মানচিত্রেও হাম্পি ছিল উল্লেখযোগ্য নাম। তবে এই নগরীর তার শ্রেষ্ঠ সময় কাটিয়েছে বিজয়নগর সাম্রাজ্যে।

মধ্যযুগে বার বার বহিরাগত শত্রুর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়েছে এই নগরী। চতুর্দশ শতকে কাম্পিলি বংশের ধ্বংসস্তূপের উপরে ১৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে একটু একটু করে মাথা তুলে দাঁড়ায় বিজয়নগর সাম্রাজ্য।

সঙ্গম বংশের প্রথম হরিহর এবং প্রথম বুক্কা রায়া ছিলেন এই সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। ষোড়শ শতকের শুরুতে হাম্পি ছিলো ভারতের অন্যতম বর্ধিষ্ণু শহর। এই জনপদের সঙ্গে তখন তুলনা করা হত বেজিং ও রোম নগরীর প্রাচুর্যের। জলপথে বিজয়নগরবাসীর বাণিজ্য চলত সুদূর পারস্য অবধি।

প্রায় দু শ বছর ধরে বিজয়নগর সাম্রাজ্য তার বিজয়কেতন উড়িয়ে রাখতে পেরেছিল। ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দে তালিকোটার যুদ্ধে বহিরাগত শত্রুদের যৌথ আক্রমণের মুখে পড়ে বিজয়নগর। যুদ্ধে পরাজিত হন এর শেষ স্বাধীন রাজা আলিয়া রামা রায়া। প্রায় ছ’মাস ধরে পুড়েছিল হাম্পি। এরপর হাম্পির ধ্বংসস্তূপেও আক্রমণ চালিয়েছিলেন মরাঠা এবং হায়দর আলির মতো ক্ষমতাশালীরাও। ক্রমে অতীতের বিজয়নগর সাম্রাজ্য চলে যায় অরণ্য আর বিস্মৃতির আড়ালে।

১৮০০ খ্রিস্টাব্দে হাম্পির কথা আবার উল্লেখ করেন ভারতের প্রথম সার্ভেয়র জেনারেল কলিন ম্যাকেঞ্জি। তখন পরিত্যক্ত হাম্পিকে ঘিরে ঘন জঙ্গলে বসবাস কেবল বন্য জীবজন্তুর।

অতীতের শ্রেষ্ঠ নগরী আবার অন্ধকার থেকে দিনের আলোয় ফেরে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে। সে সময় প্রকৃতিবিদ আলেকজান্ডার গ্রিন ল গিয়েছিলেন হাম্পিতে। তিনি প্রচুর ছবি তোলেন এই ঐতিহাসিক ধ্বংসস্তূপের। তবে সেই ছবিগুলি ইংল্যান্ডেই ছিল প্রায় ১৩০ বছর ধরে। ১৯৮০ সালে সেই ছবিগুলি প্রকাশ্যে আসে। ঐতিহাসিকদের কাছে ইতিহাসের একটি অধ্যায়ের উপর থেকে বন্ধ দরজা খুলে যায়। এখন আর্কিওলজক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার তত্ত্বাবধানে কর্নাটকের বল্লরী জেলার হাম্পিতে ৪১.৫ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে বিরাজ করছে ১৬০০ সৌধ।

অনন্য স্থাপত্যের বিরূপাক্ষ মন্দির, বিঠ্ঠল মন্দির বিখ্যাত হাম্পির অসংখ্য মন্দিরের মধ্যে। পাশাপাশি পর্যটকদের সমীহ আদায় করে নেয় কয়েকশো বছরের প্রাচীন জলাশয়, হাতিশাল এবং পদ্ম মহল। স্থাপত্যরীতিতে হিন্দু রীতির পাশাপাশি আছে মুসলিম ও জৈন ঘরানার প্রভাবও। তবে ঐতিহাসিকদের মত, ধ্বংসাবশেষ দেখেও বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সম্পদের আন্দাজ করা কঠিন। পঞ্চদশ শতকে পারস্য থেকে হাম্পি ভ্রমণকারী আব্দুল রজ্জাক বলেছিলেন, সাত স্তরীয় দুর্গ ঘিরে রেখেছিল নগরীকে।

ষোড়শ শতকে পর্তুগিজ ভূপর্যটক ডোমিনগো পায়াস এই নগরীর তুলনা করেন রোমের সঙ্গে। ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দে তালিকোটা যুদ্ধের পরে ইতালীয় পর্যটক এসেছিলেন হাম্পি। বিবরণে বলেছিলেন, তখনও পরিত্যক্ত হাম্পিতে দাঁড়িয়ে আছে ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাসাদ ও ঘরবাড়ি। তবে সেখানে তখন বাস করে বাঘ এবং অন্যান্য হিংস্র পশু।

প্রখ্যাত ঐতিহাসিক উইলিয়াম ডুরান্ট তার ‘আওয়ার ওরিয়েন্টাল হেরিটেজ: দ্য স্টোরি অব সিভিলাইজেশন’ বইয়ে বলেছেন, বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধি, শান্তি ও সংস্কৃতিকে ছিন্নভিন্ন করেছে যুদ্ধ ও ভয়াবহ হিংসা। আনন্দবাজার পত্রিকা।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত