ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

৫শ’ বছরের গাছ দম্পতি ‘বট-পাকুড়’

  মো. রুহুল আমিন, ধামরাই

প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২০, ১৬:৩০  
আপডেট :
 ২৫ নভেম্বর ২০২০, ১৮:১৭

৫শ’ বছরের গাছ দম্পতি ‘বট-পাকুড়’
ছবি: ‘বট-পাকুড়’ গাছ দম্পতি

গল্প নয় বাস্তব। পাঁচশত বছর আগের কথা। ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের সাইট্রা গ্রামে দেবীদাস বংশের পূর্বপুরুষ তাদের ভিটের উপর রোপণ করেছিলেন একটি বট ও একটি পাকুড় গাছ। সেই বট-পাকুড় দম্পতি এখনো তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, তৎকালীন সময়ের সনাতন ধর্ম বিশ্বাস অনুসারে পাকুড় গাছকে ‘পুরুষ’ আর বট গাছকে মনে করা হতো ‘নারী’। সেই বিশ্বাসে ধর্মীয় অনুসারে দাস বংশের পূর্বপুরুষরা ঢাক-ঢোল, শাখা সিঁদুর পরিয়ে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে বিবাহের উপকরণসহ ব্রাহ্মণ দিয়ে বৈদিক মন্ত্র পাঠ এবং বিয়ের সকল কাজ সম্পন্ন করে বট ও পাকুড় গাছের বিবাহ সম্পন্ন করেন। বিয়ে উপলক্ষে সে সময় বহু লোকের আপ্যায়নের আয়োজনও করেছিলেন দাস বংশের লোকেরা। সেখান থেকেই শুরু হয় বট-পাকুড় গাছের দম্পতি। এখনো স্থানীয়রা পাশাপাশি এই দুই গাছকে স্বামী-স্ত্রী বলে অভিহিত করেন।

সাইট্রা গ্রামের ৭০ বছরের বৃদ্ধ কালু মিয়া, বাচ্চু মিয়া, শ্রী রামা, হরিপদসহ আরো অনেকে বলেন, লোক মুখে জানা যায়, একবার এই বট-পাকুড় গাছের নিচ দিয়ে ইট ভর্তি একটি ট্রাক যাবার সময় গাছের ডালের সঙ্গে আটকে যায়। এ সময় ওই ট্রাক-চালক বটগাছের ডালটি কাটলে তিনি অসুস্থ পয়ে পড়েন। পরে মুরুব্বিদের পরামর্শে বটগাছের নিচে কয়েক কেজি বাতাসা আর মোমবাতি দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলে ট্রাক-চালক সুস্থ হন। প্রায় ৫ বিঘা জমির উপর জুড়ে ছড়িয়ে আছে গাছ দুটি।

ছন্দ রাণী, মহা মায়া রাণী, কালিপদ সরকার জানান, কার্তিক সরকার নামে এক কৃষকের জমিতে গাছের গোড়া ছড়িয়ে পড়লে তিনি ডালটি কেটে দেন। এরপর ঘটে এই ঘটনা। ওই কৃষকও অসুস্থ হয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ওই বটগাছের নিচে একটি মন্দির নির্মাণ করে সেখানে পূজা অর্চনা করতে থাকেন। এরকম অনেক অলৌকিক ঘটনা রয়েছে এই বট-পাকুড় গাছ নিয়ে। এ কারণে ভয়ে এলাকার কেউ ওই গাছের ডাল-পালা বা শেকড় গোড়া কাটেনি। ফলে গাছ দুটি অসংখ্য শিকড় জোড়ে রয়েছে। প্রায় ৫ বিঘা জমি দখল করে দাড়িয়ে আছে স্ব-গর্বে। এখনো নির্জন সময়ে একা একা মানুষ গাছের নিচ দিয়ে যায় না।

এ অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বিশ্বাস করেন এই গাছ দুটি তাদের দেবতা। মুসলিম সম্প্রদায়ও ভালো চোখে দেখেন এই গাছ দুটিকে। হিন্দু সম্প্রদায় বটগাছের নিচে কালী মন্দির নির্মাণ করে সেখানে কালী, সরস্বতী, বুড়ির পূজা এবং দশমী ও বাসন্তী মেলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে থাকে। নানা অসুখ-বিসুখে মানত করেন সকল ধর্মের লোকজন। আবার এ থেকে সুস্থতা ফিরে পেয়েছেন মনে করে এর প্রতি আস্থা রাখার ঘটনাও রয়েছে প্রচুর।

উপজেলার সাইট্রা গ্রামের এই বট-পাকুড় গাছকে ঘিরে এখন ঐতিহাসিক স্থানে পরিণত হয়ে গেছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ এখানে বেড়াতে আসে। ঢাকা শহরসহ আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে পরিবারবর্গ নিয়ে বেড়াতে আসে। অনেক দোকান পাট গড়ে উঠেছে। বাৎসরিক শাক রাইন মেলাও বসে শীতের মধ্যে।

এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের দাবী, সরকার একটু সহযোগিতা করলে এই এলাকা হইতো একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিত পেতো। উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা থাকলে এখানে প্রচুর লোকজন আসতেন। এখানে আসলেই দেখা যাবে প্রকৃতির অপরূপ নির্মল শান্ত এক পরিবেশ। সত্যিকারের গ্রামীণ রূপের ছটা চোখে পড়বে পুরো যাদবপুর ইউনিয়নে। এছাড়া সাইট্রা গ্রামটা একটু বেশিই নির্মল। গ্রামে ঢুকতে পিচ ঢালা পাকা রাস্তার দুই পাশে চিরায়ত গ্রামের সকল উপকরণ পাবেন এখানে। রয়েছে ধান, গম, ভুট্টা, আখ ক্ষেত আর সাথে প্রচুর লেবু ও কলার বাগান।

নির্মল পরিবেশে মানসিক প্রশান্তি আনার জন্য জায়গাটা সেরা। রয়েছে খাবার, পানির সহজ ব্যবস্থা। সাঁতার কেটে, গা ডুবিয়ে গোসলের জন্য রয়েছে নিবির পরিবেশের অনেক পুকুর। বট-পাকুড়ের সুশীতল ছায়ার নিরিবিলি পরিবেশে প্রকৃতির নিবির ছোঁয়ায় মন ভালো করতে কিছুটা সময় পার করার জন্য ৫০০ বছরের পুরনো এই বট ও পাকুড় গাছ দেখতে চলে আসে হাজারো মানুষ।

গাছ দুটি সংরক্ষণ করা এবং পর্যটন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত। হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও সকল ধর্মের মানুষের শ্রদ্ধা ভক্তি রয়েছে এই বট-পাকুড় গাছের দম্পতি নিয়ে।

যেভাবে আসবেন ঢাকার গুলিস্তান থেকে ডি-লিংক, বি আরটিসি, শুভযাত্রা, কাবা পরিবহন, বৈশাখী বাসে ৫০ কি.মি. পরেই ধামরাই ঢুলিভিটা বাসস্ট্যান্ড নেমে সিএনজি, অটোরিকশা করে আসতে পারেন যাদবপুর ইউনিয়নের সাইট্রা এলাকায়।

গাছ দুটি নিয়ে অনেক ইতিহাস রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা ও জনপ্রতিনিধিরা। গাছ দুটি নিয়ে প্রতি বছর সেখানে মেলা হয়। মেলায় যাওয়ার জন্য চারপাশ দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত