ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

ছাদ নয়, এক টুকরো নির্মল সবুজ উদ্যান

  ফিচার ডেস্ক

প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২১, ০৯:১৬  
আপডেট :
 ০৯ এপ্রিল ২০২১, ১০:৩০

ছাদ নয়, এক টুকরো নির্মল সবুজ উদ্যান
সংগৃহীত ছবি

ইট কাঠের নাগরিক সভ্যতার শহরগুলো থেকে দ্রুতই হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ। কিন্তু মানুষ তার শিকড়কে সহজে ভুলতে পারে না। সবুজে ভরা গ্রাম বাংলায় বেড়ে উঠা নাগরিক সমাজের একটা অংশ সবুজকে ধরে রাখতে চায় আবাসস্থলে। শৌখিন মানুষরা তাদের ঘরবাড়িতে সবুজকে ধরে রাখার জন্য একান্ত নিজস্ব ভাবনা আর প্রচেষ্টায় আপন আপন বাড়ির ছাদে তৈরি করছে ছাদ বাগান। নিজের বাড়ির উঠোন কিংবা ছাদে ফল-ফলাদি উৎপন্ন করার ব্যাপারে অনেকেই এখন আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

কেননা পরিকল্পিত এবং শখের বসে ছাদকৃষি আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুধু ফল-ফসলাদিরই চাহিদা মিটছে না একজন উদ্যোক্তার সৃজনশীলতারও বিকাশ ঘটছে। বিনিয়োগের কথা যেমন ভাবা হয় না ঠিক তেমনিভাবে প্রাপ্তি হিসেবেও রাখা হয় না শখের এই ছাদবাগানে। এমন তাগিদ থেকেই নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে হাউজিং এলাকায় ‘মন বিলাসে’ মোঃ খোরশেদ আলম শুরু করেছিলেন ছাদকৃষি। যে কারোর দেখেই মনে হবে এ যেন ছাদ নয় এক টুকরো নির্মল উদ্যান।

এই শহরে বাস করেও কৃষিকে ভালোবাসা এবং সবুজের ছোঁয়ায় জীবনের প্রশান্তি খুঁজতেই ১০ বছর আগে ছাদকৃষির বিশাল সম্ভার গড়ে তোলেন মো. খোরশেদ আলম। মাত্র ১৬০০ বর্গফুটের ছয়তলার ছাদে সৃষ্টি করেছেন ফুল,ফলমূল,শাকসবজির অনন্য এক ক্ষেত্র। শাক সবজি, ফল-ফুল ও ঔষধি গাছের চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে মো: খোরশেদ আলমের ছাদ কৃষির এই আয়োজন।

চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার কৃষক পরিবারের সন্তান হবার সুবাদে কৃষির সাথে ঘনিষ্ঠতা ছোটবেলা থেকেই। বাবা-চাচার কাছ থেকে পেয়েছেন কৃষি কাজের অভিজ্ঞতা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তার এই ছাদবাগানে প্রায় একশর অধিক ফুল,ফল, শাকসবজির গাছ রয়েছে। গাছে ২০-২৫টি আম ঝুলে আছে। বিদেশী ও দেশি আনার ঝুলে আছে। আরও ঝুলে আছে ৯ জাতের পেয়ারা, ড্রাগন ফল, আনারস, ২ জাতের জামরুল, আতা, ৮ জাতের লেবু, ৪ জাতের বরই। ফল গাছের মধ্যে আরও রয়েছে লিচু, অড়বরই, কতবেল, লটকন, জলপাই, আমড়া, কলা, নারিকেল, কমলা, সফেদা, আরমুজ, খেজুর , জাম্বুরা, করমচা।

এ ছাড়া ফুলের মধ্যে রয়েছে গোলাপ, জবা, নাইটকুইন, থাইপাতা, আরও নানা প্রজাতির ফুল। শাক-সবজির মধ্যে কাঁচা মরিচ, বেগুন,বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, পুইশাক, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, করলা, মিষ্টি আলু, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা দেখা গেল। ওষুধি গাছের মধ্যে রয়েছে নিমগাছ, তুলসী গাছ, ঘৃতকুমারী। এছাড়া মেহেদী গাছ, পাথরকুচিসহ আরও ছোট ছোট অনেক উদ্ভিদ রয়েছে।

ছবি: মো. খোরশেদ আলম ও তার ছাদ বাগান

এই গাছগুলো প্লাস্টিকের বড় ড্রাম কেটে দুই ভাগ করে ছয়তলা বাড়ির ছাদে সারিবদ্ধভাবে লাগানো হয়েছে।

মো. খোরশেদ আলম জানান, তিনি তার অবসর সময় তার এই ছাদকৃষিতেই ব্যয় করেন। এছাড়া এই কাজে তার স্ত্রী এবং ছেলে সর্বদা উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি তাকে অনেক সহযোগিতা করে থাকেন। তিনি এই ছাদবাগানে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে সম্পূর্ণ কেঁচো সার ব্যবহার এবং তার পরিচিত এক স্থান থেকে মাটি সংগ্রহ করেন। তার এই ছাদকৃষিতে যেনো মশা-মাছি সৃষ্টি না হয় সেজন্য তিনি প্রাকৃতিক বালাইনাশক বিভিন্ন ওষুধ যেমন: সাদা পোকার জন্য ডিটারজেন্ট পাউডার এবং মরিচের গুড়া ব্যবহার করেন। এছাড়া তিনি তার বাড়ির ছাদে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি সর্বদা তার বাড়ির ছাদ পরিষ্কার রাখেন বলে জানান।

গাছের প্রতি ঝোক ও পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মিটাতে এই ছাদবাগান গড়ে তোলেন ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম। গত দশ বছরে তার এই ছাদবাগান এখন সবুজের সমারোহে পরিণত হয়েছে।

তিনি আরও জানান, যেকোনো ব্যক্তিরই ছাদবাগান করতে গেলে মাটি ও সার সংগ্রহ করার মতো বড় চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়। তবে ইচ্ছে থাকলে যে কেউ ছাদে বাগান তৈরি করতে পারেন। এতে সহজেই সবুজ প্রকৃতি, বিশুদ্ধ অক্সিজেন ও কীটনাশকমুক্ত টাটকা ফল ও সবজি পাওয়া যায়। তার এই ছাদ কৃষির উদ্যোগ অন্যান্যদের ছাদ কৃষি করার ক্ষেত্রে রোল মডেল এর ভূমিকা পালন করছে। এক্ষেত্রে তিনি তার বাড়িতে আসা আগ্রহী আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীদের ছাদ কৃষি করতে আহ্বান জানান। তিনি ভবিষ্যতে আরও বিভিন্ন প্রকার ফলের গাছ যেমন বিদেশী আপেল গাছ, মালটা গাছ লাগাতে চান। তার মতে, পরিবার এবং পরিবেশের জন্য এই ছাদকৃষি একান্ত প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি শহরের সব ছাদে পরিকল্পিতভাবে বাগান করা হয়, তাহলে তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমানো সম্ভব। ঢাকা শহরের প্রায় ৭০ শতাংশ আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা, যা এই নগরীর তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে অনেকাংশে দায়ী।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম জানান, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ছাদবাগানের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প থাকলেও আমাদের নারায়ণগঞ্জে এমন কোনো প্রকল্প এখনও নেওয়া সম্ভব হয়নি। ঢাকার মতো আমরা আর্থিকভাবে সহায়তা না করতে পারলেও আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীকে ছাদবাগান করার জন্য উৎসাহ এবং গাছ লাগানো ও পরিচর্যার বিষয়ে কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে ভবিষ্যতে যেনো ঢাকার মতো আমাদের এখানেও এমন প্রকল্প নেওয়া হয় সেজন্য আমরা হেড অফিসে চিঠি দিয়েছি। হেড অফিস থেকে আশ্বাস দিয়েছে খুব শিগগিরিই আমাদের এখানেও এমন প্রকল্প চালু করবে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবদুল্লাহ-আল মামুন বলেন, ছাদবাগান করার ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করার কোনো এখতিয়ার নেই। এটা সম্পূর্ণ বন অধিদফতরের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তারা হয়তো এ বিষয়ে কোনো সহযোগিতা করে থাকে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত