ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪১ মিনিট আগে
শিরোনাম

দুর্গাপূজা: চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৮:১৫  
আপডেট :
 ১৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:৪৬

দুর্গাপূজা: চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি

আগামীকাল রবিবার বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উপলক্ষ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। এদিকে পূজাকে ঘিরে মণ্ডপে মণ্ডপে সব রকমের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন মৃত শিল্পি আর পূজা কমিটির লোকজন। খুশির আমেজ বিরাজ করছে সনাতনীদের পাড়ায় পাড়ায়।

দেশের ৩ জেলায় পূজার প্রস্তুতি নিয়ে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

কুড়িগ্রাম: এ বছর জেলার ৯ উপজেলায় ৫৩১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় ৬০টি, কুড়িগ্রাম পৌরসভায় ১৯টি, উলিপুর উপজেলায় ১২১টি, চিলামারী উপজেলায় ৩১টি, রৌমারী উপজেলায় ৮টি, রাজিবপুর উপজেলায় ১টি, নাগেশ্বরী উপজেলায় ৮০টি, ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় ১৯টি, রাজারহাট উপজেলায় ১১৯ টি, ফুলবাড়ী উপজেলায় ৭৩টি মণ্ডপে চলছে শেষ মূহুর্তের সাজসজ্জা। মৃৎ শিল্পীরা রাতদিন পরিশ্রম করে রং-তুলির আঁচড়ে রাঙিয়ে তুলছেন দেবী দূর্গাকে। তৈরি হচ্ছে সুদৃশ্য বিশাল বিশাল প্যান্ডেল।

মণ্ডপগুলোতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ইতিমধ্যেই জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়াও কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার মোঃ মেহেদুল করিম সকল পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে শারদীয় দূর্গা পুজা নির্বিঘ্নে ও উৎসব মুখর পরিবেশে উদযাপনের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বিষয়ক বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

সাজসজ্জায় নিয়োজিত মৃৎশিল্পী স্বপন কুমার দাস জানান, এবার আমরা ভারতীয় একটি মন্দিরের আদলে ৫তলা বিশিষ্ট একটি মন্দির তৈরি করছি। কাজ শেষ পর্যায়ে আশা করছি আগামী কাল রাতেই সকল কাজ সম্পন্ন হবে।

শহরের বারোয়ারী পূজা মণ্ডপের সভাপতি বাবু বরুন কুমার সাহা জানান, এবছর বারোয়ারী পুজা কমিটির দুর্গোৎসব আয়োজনের ১৫০ বছর পূর্তি হবে। এজন্য আমাদের আয়োজনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষেদের সাধারণ সম্পাদক বাবু রবি বোস জানান, গতবারের চেয়ে জেলায় ৪০টির অধিক মণ্ডপে এবার শারদীয় দূর্গা পুজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমরা আশা করছি কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই নির্বিঘ্নে এবারের শারদীয় উৎসব সার্বজনীন রূপ পাবে।

কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহফুজার রহমান জানান, প্রতিটি মণ্ডপকে ঘিরে ইতিমধ্যেই আমরা বিশেষ নিরাপত্তা গ্রহণ করেছি। এছাড়াও স্ট্রাইকিং ফোর্স ও কন্টোল রুমের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে।

কুষ্টিয়া: জেলায় দূর্গা উৎসবকে কেন্দ্র করে ২৩৭ টি মন্দিরে চলছে সাজ সাজ রব। প্রতিমা গুলোতে রং তুলির আচড় শেষ পর্যায়ে। এদিকে দুর্গা পূজা সনাতন ধর্মালম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হওয়ায় ঘরে ঘরে চলছে কেনাকাটার ধুম। নতুন পোষাকে দেবীর আরাধনা করতে ব্যস্ত অনেকে।

শহরের মন্দিরগুলোতে প্রতিমা তৈরির কাজের শেষের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে আলোকসজ্জার কাজ। বিগত বছরগুলোর মতো পূজা মণ্ডপ ছাড়াও মণ্ডপ সংলগ্ন সড়কেও আলোকসজ্জার কাজ করা হচ্ছে।

কুষ্টিয়া জেলা পূজা উৎযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি বিশ্বজিৎ বিশ্বাস জানান, অতীতের চেয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভালো অবস্থানে রয়েছে। তাছাড়াও দুর্গাপূজা উপলক্ষে স্থানীয় প্রশাসন যথেষ্ট নিরাপত্তা দেন।

কুষ্টিয়া জেলা পূজা উৎযাপন পরিষদের সভাপতি নরেন্দ্র নাথ সাহা বলেন, গতবারের চেয়ে এবার মণ্ডপের সংখ্যা বেশি। তাই উৎযাপনটাও বেশি হবে বলে আশা করছি। এখন প্রতিমা তৈরি এবং প্যান্ডেল নির্মাণের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে প্রশাসনের সাথেও বৈঠক হয়েছে। পূজা নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসন থেকে আমরা সার্বিক সহযোগীতা পাচ্ছি।

মৃৎশিল্পী সুকান্ত মালাকার জানান, বছরের অন্যান্য সময় তেমন কাজ না থাকলেও এই সময় ব্যস্ততা বেড়ে যায়। তবে সময়ের সাথে মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয় বাড়লেও সে অনুযায়ি প্রতিমা তৈরির মজুরি বাড়েনি।

মৃৎশিল্পী নিরঞ্জন জানান, প্রতিমা তৈরিতে প্রচুর কাঁচাপণ্যের প্রয়োজন হয়। তবে বাজারে পণ্যের দাম বাড়ায় এবার প্রতিমা তৈরিতে খরচ কিছুটা বেড়েছে। প্রতিমা তৈরি শেষ হলে এরপর শুরু হবে যাবে সাজসজ্জার কাজ।

এদিকে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফত জানান, পূজা মন্ডপগুলোতে জোরদার নজরদারি থাকবে। মন্দিরগুলোতে সার্বক্ষণিকভাবে আনসার সদস্যরা থাকবে। এছাড়াও টহল টিম থাকবে। পুজা কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরাও সহযোগিতা করবেন। সব মিলিয়ে মন্দিরগুলোতে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করা হয়েছে।

মাগুরা: জেলার মোহম্মদপুর উপজেলায় শারদীয় দূর্গোৎসবের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। ভাস্কর শিল্পরা রং তুলির আচড়ে প্রাণবন্ত করে তুলছেন দেবি দুর্গার অনিন্দ্য সুন্দর রুপ। এবছর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ১২২ টি পুজা মণ্ডপে জমজমাটভাবে পালিত হবে হিন্দু ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।

কাশফোটা শরতে শারদীয় দূর্গোৎসবকে পরিপূর্ণ রুপ দিয়ে ভাস্কর শিল্পীরা রং তুলির আচড়ে প্রাণবন্ত করে তুলেছে উপজেলার বাবুখলী ইউনিয়নে ৩৭টি, বিনোদপুর ইউনিয়নে ১৩টি, দীঘা ইউনিয়নে ১৪টি, রাজাপুর ইউনিয়নে ১৪টি, বালিদিয়া ইউনিয়নে ৭টি, মহম্মদপুর সদর ইউনিয়নে ৮টি, পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়নে ১৩টি ও নহাটা ইউনিয়নে ১৬টি পুজা মন্ডুপের দেবী দূর্গার অনিন্দ্য সুন্দর রুপ।

উপজেলা সদরের কয়েকটি পুজা মণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, মৃৎশিল্পীরা তাদের মনের মধ্যে লুকায়িত মাধুর্য্য দিয়ে সেরা শৈল্পিক দক্ষতায় সুনিপূণ কারুকার্যে উদ্ভাসিত করে তুলেছে দেবী দূর্গার মমতাময়ী রুপ। বাংলা আশ্বিন মাসের ২৭ তারিখে ষষ্ঠী পূজার মধ্যমে শুরু এবং কার্তিক মাসের ১ তারিখে দেবি দূর্গাকে বিসর্জনের মধ্যদিয়ে সমাপ্ত হবে ৫দিন ব্যাপি জমজমাট এ উৎসব।

উপজেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ ও উপজেলা পূজা উৎযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী কানু তেওয়ারী বলেন, পুজা মণ্ডপকে ঘিরে সাজ সজ্জার পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। ধর্ম যার যার উৎসব সবার বলে তিনি আরো জানান, প্রশাসন ও এলাকার সর্বস্তরের মানুষের সর্বাত্মক সহযোগিতায় শারদীয় দুর্গাপূজা সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/কে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত