ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

বৃত্তির টাকায় চীন থেকে কিট পাঠালেন মিজান

  জয়পুরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২০, ১৬:৪৪

বৃত্তির টাকায় চীন থেকে কিট পাঠালেন মিজান

করোনাভাইরাস টেস্টিং- এর জন্য নিজের বৃত্তির টাকায় বাংলাদেশে ১০০টি কিট পাঠালেন চীনের অধ্যয়নরত এক শিক্ষার্থী। তার নাম মিজানুর রহমান সরকার। মিজানুর জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার রতনপুর সরকারপাড়ার আবু জাফর সরকারের ছেলে। সে চীনের নানথোং সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কলেজে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে।

বৃহস্পতিবার সকালে ইউএস বাংলার ফ্লাইটে আসা বহুল প্রত্যাশিত সেই করোনাভাইরাস টেস্টিং কিট জাতীয় সংসদের হুইপ ও জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের কাছে হস্তান্তর করেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইউএস বাংলার প্রতিনিধি।

এ ব্যাপারে হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন মুঠোফোনে বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমি শুধু কিটগুলোর বাহক মাত্র। এই কিটগুলো আজকেই জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। সেখানেই কিটগুলো থাকবে। এগুলো প্রয়োজন ছাড়া যাতে ব্যবহার করা না হয়। যখন প্রয়োজন হবে তখন ডাক্তারদের সব নিরাপত্তা নিয়েই কিটগুলো যাতে প্রকৃত রোগীদের জন্য সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়। সেজন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে বলা হয়েছে।

এর আগে গত ২০ মার্চ মিজানুর রহমান সরকার তার ফেসবুক আইডিতে এক স্ট্যাটাস দিয়ে আহ্বান জানান, তিনি তাঁর জয়পুরহাটের মানুষের জন্য কিছু করোনাভাইরাস টেস্টিং কিট ডোনেট করতে চান এবং এ ব্যাপারে জয়পুরহাটের দায়িত্বশীলদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

পরে মানবিক বিষয়টি হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপির দৃষ্টিতে পড়লে, তিনি মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করেন। বিমান প্রতিমন্ত্রীর সহযোগিতায় ও ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষের বিশেষ তত্ত্বাবধানে কিটগুলো দেশে আনার ব্যবস্থা করেন।

এর আগে মিজানুরের স্টেটাস দেখে হুইপ স্বপন তার ফেসবুক আইডিতে লেখেন:

মানবিকতা ও অভিবাদন......

একটি ছেলে চায়না থেকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে যে, সে জয়পুরহাটে কিছু করোনা টেস্টিং কিট পাঠাতে চায়। জয়পুরহাটের দায়িত্বশীল কেউ যেন যোগাযোগ করে।

আমার চোখে পড়ায় আমি তাকে তার ফোন নম্বর দিতে বলি। সে নম্বর দিলে আমি ফোন করি। সে চায়নার নানথোং সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কলেজে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেখানে প্রায় গৃহবন্দী। বাইরে বেরুতে পারে না। কিন্তু দেশের জন্য, এলাকার জন্য তার হৃদয়ের আকুতি অনুভব করে আমি অভিভূত। সে মানুষের জন্য কিছু করতে ছটফট করছে। সে কিছু করোনা টেস্টিং কিট পাঠাতে চায়। কোন উপায় পাচ্ছে না, রাস্তা পাচ্ছে না।

আমি তাকে পুনরায় ফোন করার প্রতিশ্রুতি দিলাম। রাত পোহালে বিমান প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের সহযোগিতা নিয়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন কর্তৃপক্ষকে রাজি করিয়ে তাকে ফোন দিলাম।

আমার ফিরতি ফোন পেয়ে আনন্দে তরুণটির চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে তা একজন পিতা হিসেবে হাজার মাইল দূরে বসেও অনূভব করলাম। তাকে ঠিকানা দিলাম, চায়নার গোয়াংজুতে ইউএস বাংলার জিএসএ অফিসে মালামাল পৌঁছানোর জন্য। সে যে কি খুশী। এই খুশী মিলিয়ন ডলারে কেনা সম্ভব নয়।

সে তার বৃত্তির টাকা বাঁচিয়ে অনেক কষ্ট করে ১০০টি টেস্টিং কীট, টেস্টের জন্য প্রয়োজনীয় এসিড ও ড্রপ কিনে কুরিয়ারে করে গোয়াংজু পৌঁছিয়ে দিয়েছে। খুব লজ্জা নিয়ে বলেছে, আমি ছাত্র মানুষ মাত্র ১০০টি দিতে পারলাম, ইচ্ছে ছিল কমপক্ষে ৫০০ দেবার। আমি বললাম, তোমার এই ১০০ আমাদের কাছে ১ লাখের সমান। আশা করছি ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ আগামীকাল ওগুলো দেশে আনবে। ছেলেটির মানবিকতা আমাকে অভিভুত করেছে। এরই নাম দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ। তোমাকে অভিবাদন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত