ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

বিশাল অঙ্কের টাকায় সিলেটে ছাত্রদলের ৩ কমিটি!

  সৈয়দ রাসেল, সিলেট প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২০, ২১:৩৩

বিশাল অঙ্কের টাকায় সিলেটে ছাত্রদলের ৩ কমিটি!

বিশাল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সিলেটের গোলাপগঞ্জে ছাত্রদলের ৩ কমিটি অনুমোদন পেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যেখানে খোদ সিলেট জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দিলোয়ার হোসেন নাদিমের বিরুদ্ধেই রয়েছে লেনদেনের এই অভিযোগ।

সোমবার সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেছেন গোলাপগঞ্জের ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা দক্ষিণ সরকারি কলেজ ছাত্রদল নেতা কামিল আহমদ তালুকদার বলেন, গোলাপগঞ্জ উপজেলা, পৌর ও ঢাকা দক্ষিণ সরকারি কলেজ ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটিতে অছাত্র, অযোগ্য, বহিরাগত, বিবাহিতদের দিয়ে বাণিজ্যের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ত্যাগী, শিক্ষিত ও মামলা-হামলার শিকার নির্যাতিতদের বঞ্চিত করা হয়েছে। সিলেট জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দিলোয়ার হোসেন নাদিম তাদের ব্যক্তি গ্রুপ বড় করতে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন- যা সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্র বিরোধী।

লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, অনিয়মের মাধ্যমে কমিটি গঠনের বিষয়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারীর কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগের অনুলিপি ১৯ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের প্রধান ওমর ফারুক কাওসার এর হাতে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এতদিন গেলেও এসব কমিটির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা লিখিত বক্তব্যে বলেন, নবগঠিত গোলাপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের কমিটিতে অছাত্র ও এসএসসি সার্টিফিকেট বিহীন অনেককে স্থান দেয়া হয়েছে। উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক তানজিম আহাদ এসএসসি পাস করলেও বর্তমানে তিনি অছাত্র। সদস্য সচিব ফাহিম চৌধুরী একজন অছাত্র। তিনি ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। এসএসসি’র সার্টিফিকেট জাল করে নিজেকে ছাত্র হিসেবে প্রমাণ করেছেন। কমিটির ৩ নং যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রহমান তিনিও একজন অছাত্র, ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তার প্রদানকৃত সার্টিফিকেটটিও ভুয়া। ৫ নং যুগ্ম আহ্বায়ক জাকারিয়া শাহজাহান তিনি এসএসসি’র জাল সার্টিফিকেট জমা দিয়ে পদবী পেয়েছেন। অথচ অত্র গোলাপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের কমিটিতে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত, পরীক্ষিত, ত্যাগী, নির্যাতিত, শিক্ষিত ছাত্রনেতারা রয়েছেন। কিন্তু তাদেরকে কমিটির অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব মতিউর রহমান মুমিন কলেজের ছাত্র নয়। তিনি কলেজের ভুয়া প্রত্যয়নপত্র দিয়ে নিজেকে কলেজের ছাত্র প্রমাণ করে ছাত্রদলের পদবী লাভ করেছেন। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুর রহিম, মতিউর রহমান মুমিনের ছাত্রত্ব সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। ইতোমধ্যে কলেজের প্যাড ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের স্বাক্ষর জালিয়াতি করায় মতিউর রহমান মুমিনের বিরুদ্ধে কলেজ থেকে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।

১৮ নং সদস্য আব্দুল মুহাইমিন ইসলাম রাহি কলেজের ছাত্র নয়, তিনি বহিরাগত। এছাড়াও কমিটিতে সিনিয়র-জুনিয়র মেইনটেইন না করেই অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যারা রাজনীতিতে নতুন তাদেরকে প্রথম সারিতে রাখা হয়েছে, আর যারা পুরাতন, দীর্ঘদিন থেকে কলেজের ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত তাদেরকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।

গোলাপগঞ্জ পৌর ছাত্রদলের ৫ নং যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান একজন বিবাহিত, তার একটি সন্তান রয়েছে বলে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়। ৪ নং যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়েজ আহমদ পৌর জাসাসের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক টিম গোলাপগঞ্জ উপজেলা, পৌর ও কলেজ ছাত্রদলে ত্যাগী, পরিক্ষিত, শিক্ষিত ও নির্যাতিত দেখে প্রস্তাবিত কমিটি জমা দিলেও জেলা শাখা পাশ কাটিয়ে তাদের মনগড়া কমিটি করেছেন। সাংগঠনিক টিমের কমিটির সাথে অনুমোদনকৃত কমিটির কোন মিল নেই। মোটা অংকের অর্থনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে অশিক্ষিত, অছাত্র, অযোগ্য, বহিরাগত, বিবাহিতদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। যাদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে তারা এখন পর্যন্ত রাজপথে কোন মিছিল মিটিং করতে পারেনি। গোলাপগঞ্জ ছাত্রদলের তৃণমূলের কর্মীরা তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে এবং অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে।

সিলেট জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দিলোয়ার হোসেন নাদিম ছাত্রদলের গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজ করে সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে নিজস্ব ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে ও নিজেদের বলয় বড় করতে কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান উপস্থিত ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সিলেট জেলার আওতাধীন ৩৩ ইউনিটে প্রায়ই এরকম অনৈতিকভাবে কমিটি দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় লিখিত বক্তব্যে।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা, পৌর, কলেজসহ সকল ইউনিটের ভারসাম্যহীন কমিটিকে তদন্ত সাপেক্ষে বাতিল করে নতুন কমিটি দেয়ার জোর দাবি জানানো হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জাহেদ আহমদ মান্না, তোফায়েল আহমদ সুমেল, সুবেদ আহমদ, এমরান আহমদ, নাদির আহমদ, রাসেলা আহমদ, জাহিরুল ইসলাম, লাব্বির আহমদ, জাকির আহমদ, জুনেদ আহমদ, সুজন আহমদ সুনু, আবু বক্কর, আহমেদ মজিদ প্রমুখ।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত