ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

সেই ভয়াবহতার বর্ণনা দিলেন জুয়েলের সঙ্গী সুমন

  লালমনিরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২০, ১৯:০৯

সেই ভয়াবহতার বর্ণনা দিলেন জুয়েলের সঙ্গী সুমন
ফাইল ছবি

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর বাজারে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার আবু ইউনুস মোহাম্মদ শহীদুন্নবী জুয়েলের সঙ্গে থাকা সুলতান রুবাইয়াত সুমন সেদিনের পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।

শহীদুন্নবীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু দাবি করে রুবাইয়াত সুমন লিখিতভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সেদিনের পুরো ঘটনা বর্ণনা দিয়েছেন।

ওই ঘটনায় আবু ইউনুস মোহাম্মদ শহীদুন্নবী জুয়েল মারা গেলেও আহত হয়ে বেঁচে যান সুলতান রুবাইয়াত সুমন। তবে সুলতান রুবাইয়াত সুমন তার জবানবন্দিতে কোথায়ও উল্লেখ করেনি যে, সেদিন কোরআন অবমাননা নিয়ে কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা।

সুলতান রুবাইয়াত জানান, গত ২৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকালে রংপুর শহরের মুন্সিপাড়ায় রুবাইয়াতের বাসায় মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন শহীদুন্নবী জুয়েল। এরপর শহীদুন্নবী পাটগ্রামে তার বোনের বাসা ও পরিচিত আরো একজনের বাসায় যাবেন বলে তাকে জানান। এরপর পাটগ্রামের যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেল নিয়েই রওনা দেন।

দুপুরে তারা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের কাকিনা বাজারে আসেন। সেখানে জোহরের নামাজ পড়েন। পরে কাকিনায় নাশতা করে পাটগ্রামের উদ্দেশে রওনা হন। বিকেল চারটার দিকে পাটগ্রাম পৌঁছানোর পর শহীদুন্নবী তাঁকে বলেন, বুড়িমারী মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করে তার বোনের বাসা ও বন্ধুর বাসায় যাবেন।

সুলতান রুবাইয়াত সুমন জানান, এরপর তারা বুড়িমারী মসজিদে যাস। সেখানে রুবাইয়াত তার মোবাইল চার্জ দিতে মসজিদের পাশের একটি দোকানে যান। ফিরে এসে অজু করে তিনি মসজিদের বারান্দায়, আর শহীদুন্নবী মসজিদের ভেতরে আসরের নামাজ আদায় করেন।

নামাজ শেষে দোকান থেকে মোবাইল নিয়ে মসজিদ চত্বরে যান রুবাইয়াত সমুন। শহীদুন্নবী মসজিদ থেকে বের হতে দেরি করায় তিনি মসজিদে ঢুকে দেখেন, শহীদুন্নবী উত্তেজিত অবস্থায় বলছেন, ইমাম–মোয়াজ্জিন কোথায়? আমি (শহীদুন্নবী) গোয়েন্দা সংস্থার লোক, এদের নামাজ-কালাম হয় না। আমি মসজিদে তল্লাশি করব ইত্যাদি।

অসংলগ্ন কথা বলতে দেখে রুবাইয়াত তাকে চুপ করতে বলেন। কিন্তু তিনি কথা না শুনে গালাগালি করছিলেন। এ সময় শহীদুন্নবী জুয়েলের সাথে কয়েকজনের তর্ক হয়েছে। এজন্য সুলতান রুবাইয়াত সবার কাছে ক্ষমাও চান। এ সময় ইউপি সদস্য (মেম্বার) তাদের দুজনকে আটক করে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যান।

সুলতান রুবাইয়াত সুমন আরও বলেছেন, ইতিমধ্যে সেখানে পাটগ্রাম থানার ওসি নেতৃত্বে পুলিশ পৌঁছায়। তবে উত্তেজিত জনতা বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) জানালার গ্রিল ভেঙে সন্ধ্যা আনুমানিক সাতটার দিকে শহীদুন্নবী ও রুবাইয়াতকে মারধর করতে শুরু করেন। এ অবস্থায় ওসি রুবাইয়াতকে টানাহেঁচড়া করে সেখান থেকে উদ্ধার করেন। পরে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে তিনি জানতে পারেন, উত্তেজিত জনতার মারধরে শহীদুন্নবী মারা গেছেন।

লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে পাটগ্রাম থানার ওসিসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। তবে পরিবেশ ও পরিস্থিতিগত কারণে শহীদুন্নবীকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করতে না পারাটা দুঃখজনক ঘটনা। যারা এ জঘন্য অপরাধ করেছেন, তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

পুলিশ সুপার জানান, এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় মোট ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত