করোনায় ক্যাম্পাস
কষ্টে দিন কাটছে ক্ষুদে বিক্রেতাদের
আসিফ কাজল
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:০৫ আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:২৩
রোবেদার বয়স ৬০ বছর। পরিবারের সঙ্গে থাকেন রাজধানীর কামরাঙ্গীচর এলাকায়। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জীবনের অর্ধেক সময় চুড়ি বিক্রি করেছেন তিনি। তবে ইদানীং বেচা-বিক্রির অবস্থা ভালো নয়। তাই খুব কষ্টে দিন কাটছে রোবেদার মত ক্ষুদে বিক্রেতাদের।
রোবেদা জানান, ‘ক্যাম্পাস বন্ধ, মাইয়ারা আসে না, তাই ইনকাম এক্কেরে কম। কি করুম প্যাট তো আর থাইম্যা থাকবো না, তাই চুড়ি বেঁইচ্যা প্যাট চালাই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অধিকাংশ ফুটপাত দোকানি, ক্ষুদে বিক্রেতাদের দিন কাটছে এভাবেই। দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় অনেকেই জীবন ও জীবিকা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।
সেখানকার একাধিক চুড়ি ব্যবসায়ী জানান, করোনা মহামারির আগে দিনে দু-তিন হাজার টাকার চুড়ি বিক্রি হতো। শুক্রবারে বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়তো। তবে এখন সেখানে দিনে বেচাকেনা হয় ৫০০-৭০০ টাকার মতো।
রোবেদা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, বড় মেয়ে, স্বামী আর এক প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে আমার সংসার। স্বামী তেমন কিছু করেন না। তবে ছোট মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিছি। এখন চিন্তা প্রতিবন্ধী ছেলেটাকে নিয়ে। যদি আমি চোখ বন্ধ করি তবে ছেলেটার কি হবে।
তিনি আরও বলেন, আমার বাপ-দাদারা এই ব্যবসা করে গেছেন কিন্তু আমি চাই না আমার সন্তানরা কেউ এই ব্যবসা করুক। এর থেকে লেখাপড়া করা অনেক ভালো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি এলাকায় চা বিক্রেতা রুবেল বলেন, করোনার কারণে টিএসসিতে দোকানের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। আগে সব মিলে একশো দোকান থাকলেও এখন সেটা প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি।
তিনি বলেন, আগের অনেকেই দেশে চলে গেছেন। বাইরের বা নতুন অনেক মানুষ রাস্তার পাশে ব্যবসা করতে নেমেছেন।
নিজের ব্যবসার বিষয়ে রুবেল বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, করোনার আগে দিনে অন্তত তিন হাজার টাকার চা বিক্রি করতাম। এখন তা হাজারে নেমে এসেছে। শুধু যে বিক্রি কমেছে তা নয়, মালামালের দাম বেড়েছে অনেক।
তিনি আরও বলেন, দুধের চা বিক্রি করি প্রতি কাপ আট টাকায়, কনডেন্স মিল্কের চা বিক্রি করি ৬ টাকায় অথচ এক প্যাকেট চিনির দাম এখন ৭০ টাকা!
অপরদিকে, বেশি বিড়ম্বনায় আছেন ক্যাম্পাসের আইসক্রিম বিক্রেতা আবদুল হাই (৬৫)। তিনি বলেন, শীতের সময় এমনি আইসক্রিম কেউ খেতে চায় না। এরপর ৮ মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। এখন দিনে বেচাকেনা ৫০০ টাকায় নেমে এসেছে। এই বয়সে পরিবারকে দেখবো কি, নিজের পেট চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে।
আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর দোকানিরা রয়েছেন অনেক কষ্টে। ৮ মাস এসব দোকান বন্ধ থাকায় তারা অধিকাংশই পেশা বদল করেছেন। অনেকে ফুটপাতে নতুন করে দোকান দিয়েছেন। তবে অধিকাংশ হল কেন্দ্রিক ব্যবসায়ী গ্রামের বাড়িতে ফিরে গেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হলে খাবারের ব্যবসা করতেন মো. কিজিল। মুঠোফোনে তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এখন বরিশালে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছি। অপেক্ষায় আছি কবে বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে আর কবে জীবন স্বাভাবিক হবে।
তিনি বলেন, ধার দেনা করে সংসার চালাচ্ছি। শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা শুরু হবে কিন্তু হল বন্ধ থাকবে। এ কারণে খুব শিগগিরই ঢাকা ফেরার সম্ভাবনা নেই।
বাংলাদেশ জার্নাল/কেআই