ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

হুমকির মুখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাদুকা শিল্প

  ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২০, ১৪:৪৪

হুমকির মুখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাদুকা শিল্প
হুমকির মুখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাদুকা শিল্প

হুমকির মুখে পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে সাড়া জাগানো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী পাদুকা শিল্প। প্রয়োজনীয় উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি, প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশ থেকে চোরাই পথে অবাধে জুতার প্রবেশসহ বিভিন্ন কারণে সম্ভাবনাময় এই শিল্পটি অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে যে হারে পাদুকা কারখানা বন্ধ হয়েছে তা রীতিমত উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে ব্যবসায়ীদের মাঝে।

মাত্র কয়েক বছর আগেও জেলায় ৫ শতাধিক পাদুকা কারখানা থাকলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০০ টিতে। কোনো রকমে টিকে থাকা অবশিষ্ট কারখানাগুলো চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এর মধ্যে করোনার প্রভাব যুক্ত হওয়ায় সম্ভাবনার হাতছানি দেয়া শিল্পটি থমকে গেছে।

ব্যবসায়ীদের মতে, অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না করা গেলে জেলার এই শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখা দুরূহ হয়ে পড়বে। সরকার এই শিল্পের প্রতি সহানুভূতিশীল না হলে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। যার প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতেও।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৯৬৩ সাল থেকে পাদুকা শিল্পের যাত্রা শুরু। বাহারি ডিজাইন, গুনগত মান এবং দাম তুলনামূলক কম ও টেকসই ভালো হওয়ায় এখানকার পাদুকা নিজস্ব একটি স্বকীয়তা লাভ করে। কুমিল্লা, সিলেট, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, বগুড়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাদুকা সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

হুমকির মুখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাদুকা শিল্প

জেলায় বর্তমানে যে ১০০টি পাদুকা কারখানা সচল রয়েছে তার মধ্যে ১২টি অটোমেটিক মেশিন এবং বাকিগুলোতে হাতেই তৈরি হচ্ছে লেডিস, জেন্টস, শিশুদের জন্য বিভিন্ন ডিজাইনের জুতা। বর্তমানে বিভিন্ন কারণে এই শিল্পের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে।

দেশব্যাপী এখানকার জুতার কদর থাকলেও প্রয়োজনীয় উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি, করোনার প্রভাব ও চোরাই পথে অবৈধভাবে আসা জুতা এখানকার পাদুকা শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এতে ব্যবসায়ীদের উৎপাদন ব্যয় মিটিয়ে বাজারে টিকে থাকতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এ শিল্পের সাথে জড়িতরা জানিয়েছেন, গত ৬ মাসে জুতার প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেড়েছে ৩০/৩৫ ভাগ। এতে উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে। সেই সাথে চোরাই পথে আসা জুতার সয়লাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এখানকার পাদুকা শিল্পে।

এতে একদিকে চোরাই পথে আসা জুতার কারণে সরকার যেমন রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি এসব জুতা বাজারে কমদামে বিক্রি হওয়ায় এই শিল্পের সাথে জড়িতরা উৎপাদন ব্যয় মিটাতে পারছে না। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে কারখানাগুলোর ক্ষতির পরিমাণ। এতে ক্রমেই কমছে পাদুকা কারখানার সংখ্যা। সেই সাথে ছোট হয়ে আসছে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রও।

চলমান পরিস্থিতি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়া হলে সম্ভাবনাময় এই শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখাই দায় হবে বলে জানিয়েছেন এ শিল্পের সাথে জড়িতরা। এক সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রায় ৫ শতাধিক পাদুকা কারখানাতে ১০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ করতো। বর্তমানে করাখানার সংখ্যা কমে তা দাঁড়িয়েছে অন্তত ১ শতাধিক কারখানায় যাতে প্রায় ২ হাজারের মতো শ্রমিক কাজ করে।

হুমকির মুখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাদুকা শিল্প

এ বিষয়ে বিভিন্ন পাদুকা কারখানা মালিকদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, এক সময় বিদেশ থেকে আমদানি করা জুতা এখানকার বাজার দখল করে রাখলেও বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে উন্নতমানের জুতা তৈরি করা হচ্ছে।

তবে চলমান করোনা সংকটে জুতা তৈরির বিভিন্ন উপকরণের মূল্য অধিক বেড়ে যাওয়ায় আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। শ্রমিক খরচ মেটানোসহ সবধরনের খরচ মিটিয়ে কাঙ্ক্ষিত মুনাফা অর্জিত হচ্ছে না। সে সাথে প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধভাবে প্রবেশ করা জুতা কম দামে বাজার দখল করে ফেলে। কিন্তু আমাদের উৎপাদন খরচ বাড়তি থাকায় আমরা কম দামে জুতা বিক্রি করে বাজারে টিকে থাকতে পারছি না। এতে করে আমাদের ব্যবসায়ের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

এক্ষেত্রে জুতা তৈরির জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করা উপকরণের ভ্যাট কমানোর পাশাপাশি কম সুদে ব্যাংক ঋণের দাবি জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, সরকার যদি এই শিল্পটির দিকে নজর দেয় তাহলে এই শিল্পটি আবারো ঘুরে দাঁড়াতে পারে। আমরাও কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের নিয়ে ভালোভাবে চলতে পারবো।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাদুকা শিল্প সমিতির সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বহু বছর ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাদুকা কারখানাগুলো দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়েছে। এই শিল্পটির উন্নয়নে বিভিন্ন সরকার বিভিন্ন সময় প্রতিশ্রুতি দিলেও তার আশা স্বরূপ প্রতিফলন হয়নি। বাধ্য হয়ে অনেকে এই পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। এছাড়াও করোনার কারণে দীর্ঘদিন লকডাউন এবং নতুন করে করোনার ২য় ঢেউ শুরু হওয়ায় এই শিল্পের সাথে জড়িতরা সর্বশান্ত হওয়ার শঙ্কাও করছেন তিনি।

এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে জুতা তৈরির উপকরণের ভ্যাট কমিয়ে আনা এবং চোরাই জুতার প্রবেশ বন্ধসহ আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি কারখানা পরিচালনার জন্য সরকারিভাবে জায়গা বরাদ্দের দাবি জানান তিনি। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্টরা তৎপর হবেন এমনটা প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত