ঢাকা, মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

শাপলা চত্বরের সন্ত্রাসেই আটকা পড়ছে হেফাজত

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২১, ১৮:০০  
আপডেট :
 ২২ এপ্রিল ২০২১, ১৯:৩৯

শাপলা চত্বরের সন্ত্রাসেই আটকা পড়ছে হেফাজত
২০১৩ সালে মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশ। ফাইল ছবি

সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতে ইসলামীর কর্মকাণ্ডকে ঘিরে সরকার কঠোর অবস্থানে গেলেও ২০১৩ সালের মতিঝিল শাপলা চত্বরের ঘটনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে ৮ বছর আগের ওই ঘটনায় করা মামলাগুলো সক্রিয় করে তদন্ত করছে পুলিশের বিভিন্ন শাখা।

সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতের যেসব নেতাকে আইনশৃংখলা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে, তাদের অনেকেরই শাপলা চত্বরের ঘটনার মামলায় নাম রয়েছে। হেফাজতের অন্য শীর্ষ নেতারাও ওই মামলাগুলোতে অভিযুক্ত আছে। তারাও আটক হওয়ার পথে রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাপক চাপে পড়েছে হেফাজত ইসলাম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, উপায় না পেয়ে এখন সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা করছে হেফাজতে ইসলাম।

পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, শাপলা চত্বরের ঘটনায় ঢাকাসহ ৭ জেলায় মোট ৮৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এসব মামলাগুলোতে তিন হাজার ৪১৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। একইসঙ্গে ৮৪ হাজার ৭৯৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছিল। এরমধ্যে ২২টি মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। এই মামলাগুলোর মধ্যে বাগেরহাটে করা একটি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। আর স্থবির অবস্থায় ছিল ৬১টি মামলা। এসব মামলাগুলোই এখন সক্রিয় করে নিষ্পত্তি করার জোর দেয়া হচ্ছে।

সূত্রমতে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে তদন্তের জন্য যেসব তথ্যপ্রমাণ ও আলামত দরকার তার সবই রয়েছে। মামলা পুরোনো হলেও তদন্তকাজ চলমান ছিল। এখন যেহেতু তদন্ত নিষ্পত্তির নির্দেশনা এসেছে, তাই তদন্ত শেষ করার বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে। এজাহারে থাকা অভিযোগের বিষয়ে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে।

গত ২৬ মার্চ থেকে তিন দিন ধরে হেফাজতের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং হাটহাজারীসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক সহিংসতা হয়। এসব ঘটনায় শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রায় ৪৫০ জনকে। এরমধ্যে রয়েছেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা। যারা ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনায় করা মামলায় নাম রয়েছে। এই তালিকায় হেফাজতের আমির মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরীর নামও রয়েছে। এছাড়া ওই মামলাগুলোতে যারা অভিযুক্ত আছেন তাদের সবার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে একাধিক সুত্র জানিয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে চাপে পড়ে যাওয়ায় সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা করছে দলটি। একইসঙ্গে নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করতে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সঙ্গে বৈঠকও করেছেন হেফাজতের শীর্ষনেতারা।

সূত্র জানায়, সেই বৈঠকে হেফাজতে ইসলাম নতুনভাবে গঠন করা হবে বলে বলে আশা দেন দলটির নেতারা। একইসঙ্গে নতুন যে কমিটি হবে সেখানে কোনো রাজনৈতিক নেতা থাকবে না বলেও জানায় তারা। এমনকি সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন নেতারা। এ বিষয়ে এখনও সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কিছুই জানানো হয়নি। তবে সহিংসতার ঘটনাগুলোর ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় না দেয়ার কথা বলা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।

২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই সময় থেকেই আমিরের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন আল্লামা শাহ আহমেদ শফী। ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিল শাপলা চত্বরে অবস্থানের মধ্য দিয়ে তাদের শক্তির প্রকাশ ঘটায় হেফাজত। শাপলা চত্বরে অবরোধ কর্মসূচিকে ঘিরে এক ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল তারা। সে সময় শাপলা চত্বর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় হেফাজতের হাজার হাজার নেতাকর্মী তাণ্ডব চালায়। তখন তারা সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও পরে তাদের সাথে সরকারের সুসম্পর্ক হয়। কিন্তু বরাবরই সরকারের সাথে এই সুসম্পর্কের বিরোধী ছিলেন হেফাজতের তৎকালীন মহাসচিব মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী। এজন্য তাকে হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালকের পদ থেকে বাদ দিয়েছিলেন আল্লামা শফী। তবে তার মৃত্যুর পর বাবুনগরী আবার মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস পদে বহাল হন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও হেফাজতের সঙ্গে অনেক রাজনৈতিক নেতারা জড়িত হয়ে পড়েন। তারা বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ফয়দা লুটার চেষ্টা করেন। তার বড় উদাহরণ ছিল ২০১৩ সালের মতিঝিল শাপলা চত্বরে তাদের সহিংস কর্মকাণ্ড। যেখানে বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সমর্থনও ছিল দৃশ্যমান। কিন্তু হেফাজতের সেই উদ্দেশ্য ভালোভাবেই ভেস্তে দেয় সরকার। এমনকি হেফাজতের সঙ্গে একটা সম্পর্কও গড়ে তুলে। যে কারণে ওই সময়ে মামলা দায়ের হলেও তাতে খুব বেশি একটা গুরুত্ব দেয়া হয়নি।

বিশ্লেষকদের মতে, হেফাজতের শীর্ষ নেতা আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর সরকার বিরোধী রাজনীতি পন্থী নেতারা নতুন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে নেয়। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের নেতারা হেফাজতের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটিতে স্থান পান। যার ফলে সরকারের সঙ্গে সেই সম্পর্কে চির ধরে। ফল স্বরূপ সম্প্রতি সরকার বিরোধী বিভিন্ন বক্তব্যও দেয়া শুরু হয়েছিলো। এরই অংশ হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সহিংসতা চালায় হেফাজতের কর্মীরা। এর পরপরই সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু মামলা দায়ের করা হলেও শীর্ষ নেতাদের উপর চাপ তৈরি করতে ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে ঘটনায় করা মামলাগুলো নতুন করে সামনে আনা হচ্ছে। কারণ ওই মামলাগুলোতে হেফাজতের প্রায় সব র্শীষ নেতাদের নাম রয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমআর/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত