ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

তিনদিনে ৭০ পূজামণ্ডপ ও ৮০ দোকান-বাড়িতে হামলা

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২১, ২২:১৪

তিনদিনে ৭০ পূজামণ্ডপ ও ৮০ দোকান-বাড়িতে হামলা
ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লায় কোরআন অবমাননার অভিযোগকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানের পূজামণ্ডপে হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বলছে, বিগত তিনদিনে অন্তত ৭০টি পূজামণ্ডপে হামলা হয়েছে। একই সঙ্গে ৩০টি বাড়ি এবং ৫০টি দোকানে হামলা হয়েছে। হামলাকালে ভাঙচুর ও লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে।

শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে লিখিত বক্তব্যে এমন চিত্র তুলে ধরেন ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।

লিখিত বক্তব্যে রানা দাশগুপ্ত বলেন, গত ১৩ অক্টোবর অষ্টমীর দিন কুমিল্লার নানুয়ার দিঘীর উত্তর পাড় দর্পন সংঘের অস্থায়ী মণ্ডপে এবং চানমনি কালী বাড়ির বিগ্রহ ও মণ্ডপে অগ্নিসংযোগসহ ১৭টি মণ্ডপে তোরণ ভেঙে দেয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৩ অক্টোবর চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে ত্রিনয়নী সংঘের পূজামণ্ডপ, লহ্মীনারায়ণজী আখড়া, রামকৃষ্ণ মিশন, জমিদারবাড়ি দুর্গা মন্দির, শ্মশান কালী মন্দির, নবদুর্গা সংঘ পূজামণ্ডপ, দশভূজা সংঘ পূজামণ্ডপ, সোনাইমুড়ি গ্রামের পূজামণ্ডপ, হাজীগঞ্জ শহর পূজামণ্ডপ, রামপুর লোকনাথ মন্দির, ভদ্রকালী মন্দির, ত্রিশুল সংঘ পূজামণ্ডপ, রামপুর বলক্ষার বাজার পূজামণ্ডপ, হাজীগঞ্জ রাধাগোবিন্দ মন্দির, বাজারগাঁও মুকুন্দ সাহার বাড়ির দুর্গা মন্দির, হাটিলা গঙ্গানগর দূর্গা মন্দিরে হামলা হয়।

একই দিনে নোয়াখালী হাতিয়ায় শংকর মার্কেটের আশুতোষ ডাক্তার বাড়ির পূজামণ্ডপ, জগন্নাথ মহাপ্রভুর সেবাশ্রম পূজা মন্দির, রাধাগোবিন্দ সেবাশ্রম পূজা মন্দির, শ্রী লোকনাথ মন্দির পূজামণ্ডপ, তপোবন আশ্রম পূজা মন্দির, গুরুচাঁদ সত্যবামা পূজা মন্দির, হাতিয়া পৌরসভা কালী মন্দির এবং তার কাছাকাছি ৪-৫টি ঘরও ভাঙচুর করা হয়।

অষ্টমীর দিনে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি সীতারাম ঠাকুর সেবাশ্রম, গাজীপুরের কাশিমপুর সুবল দাশের মন্দির ও কাশিমপুর বাজার কালী মন্দিরে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। ওইদিন কুড়িগ্রামের উলিপুর, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, হবিগঞ্জের বাহুবল, সিলেটের জকিগঞ্জের কালিগঞ্জ বাজার ও ভোলার নবীপুরে বেশ কয়েকটি মন্দির, পূজামণ্ডপে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।

অষ্টমীর একইদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার শেখেরখীল ও নাপোড়া গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হয়। শেখেরখীলের মোহাম্মদ সাবের আহমেদ, গণ্ডামারার মোহাম্মদ রিদোয়ান ও নাপোড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম এসব হামলায় নেতৃত্ব দেয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

এছাড়া নাপোড়া বাজার থেকে কালীমন্দির পর্যন্ত সড়কে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৩০টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। হামলায় শেখেরখীলে সুকুমার দাস, সমীর দেব, দুলাল দেব, জুয়েল শীল ও লিটন দেব এবং নাপোড়ায় জহর লাল দেব, রতন শিকদার, আশুতোষ দেব, অনুপম দেব, জগদীশ পাল ও বোটন দেব আহত হন বলে জানান রানা দাসগুপ্ত।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাঁশখালীর পশ্চিম চাম্বল বাংলাবাজার করুণাময়ী কালীবাড়ির সার্বজনীন পূজা কমিটির দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর করে মন্দিরের তৈজসপত্র লুট করা হয়েছে। এসময় প্রদীপ দাস, রঞ্জিত দাস, সবিতা বালা আহত হন। এছাড়া শীলকূপে দাস পাড়া সার্বজনীন দুর্গা মণ্ডপ, কৈবল্য যুব সংঘ পূজামণ্ডপ ও শীলপাড়া পূজামণ্ডপে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

ঐক্য পরিষদ আরও জানায়, ১৩ অক্টোবর রাতে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার শীলখালীর দুটি পূজামণ্ডপে প্রতিমা এবং স্থানীয় হরিমন্দিরে লুটপাট ও ভাঙচুরের পাশাপাশি ১৬টি বসতঘরও লুট করা হয়। এছাড়া মগনামা ইউনিয়নের ১২টি ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে একটি ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। স্থানীয় সরস্বতী মন্দিরে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। পেকুয়া সদর, বারবাকিয়া ইউনিয়ন এবং চকরিয়ায় ৫টি মণ্ডপ ও স্থানীয় লোকনাথ মন্দিরে লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ১৪ অক্টোবর বান্দরবানের লামা উপজেলার লামাবাজারে কেন্দ্রীয় হরিমন্দিরে দুর্গাপূজার মণ্ডপে হামলা চালিয়ে মূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছে। এই হামলায় ৫০ জন আহত হন। এর মধ্যে গুরুতর ১০ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ৮ জন ডুলহাজারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এছাড়া ১৪ অক্টোবর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের সার্বজনীন দূর্গা মন্দির ও হরিমন্দিরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। ১৫ অক্টোবর নোয়াখালীর চৌমুহনীতে রাধামাধব মন্দির, ইসকন মন্দির, রাম ঠাকুর মন্দির ধ্বংস করে দেওয়া হয়। মঙ্গলা পূজামণ্ডপ, রাম ঠাকুর পূজামণ্ডপেও হামলা করা হয়। সবশেষ ১৫ অক্টোবর নগরীর জেএম সেন হলে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের পূজামণ্ডপে হামলা চালানো হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমআর/এমজে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত