সরিষা ক্ষেতের পাশে জনপ্রিয় হচ্ছে মৌচাষ
সাগর কুমার, জয়পুরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৬:৩৮ আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৬:৫০
জয়পুরহাটে বাণিজ্যিকভাবে বেড়েছে মৌচাষ। বেকার যুবকরা মৌচাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। সরিষা ক্ষেতের পাশে প্রায় দেড় হাজার বক্সে মৌমাছির চাষ হচ্ছে। চাষিদের কাছ থেকে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মধু বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। আর এখানকার উৎপাদিত মধু দেশ বিদেশের বিভিন্ন কোম্পানি সরবরাহ করছে। চলতি মৌসুমে এ জেলায় মধু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ মেট্রিক টন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেলো, জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল দস্তপুর, হালট্টিসহ জেলার প্রায় ১০ গ্রামে অর্ধশত মৌয়াল মৌচাষ করছে। সরিষা ক্ষেতের পাশে স্থাপন করা হয়েছে মৌমাছির বাক্স। প্রতিটি খামারে রয়েছে ৫০ থেকে ৩০০টি পর্যন্ত বাক্স। আর সরিষার ফুল থেকে মধু আহরণ করছেন মৌমাছিরা। এতে পরাগায়নও হচ্ছে সরিষার। জেলা বিসিক বলছে, জেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ৩০ মেট্রিক টন মধু উৎপাদন হবে।
এদিকে তাদের দেখাদেখি মৌচাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে বেকার যুবকরা। এবার বিসিকের পক্ষ থেকে জেলায় ১৫ জনকে মৌচাষে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে তারা যেন মৌচাষ শুরু করতে পারেন, সেজন্য তাদের বিনামূল্যে দেয়া হবে মোমাছিসহ একটি বাক্স।
দস্তপুরের মৌচাষি জাহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এই মৌসুমে নতুন মৌচাষ শুরু করেছি। আমি অনার্স ৪র্থ বর্ষে পড়ি। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে চাকরি অনেক কঠিন বিষয়। তাই চাকরির পেছনে না ছুটে মৌচাষ শুরু করেছি। এতে খরচ অনেক কম, কিন্তু লাভ অনেক বেশি। এখান থেকে দেশের সব জায়গায় মধু সরবরাহ করা হয়। অনেক ওষুধ কোম্পানিও আমাদের থেকে মধু কিনে নিয়ে যায়।
রেজাউল করিম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এই মৌচাষ খুব লাভজনক একটা ব্যবসা। অল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করা যায়। একটি বাক্স থেকে সপ্তাহে ৫ কেজি মধু উৎপাদন হয়। সেই হিসেবে মৌসুমে একটি বাক্স থেকে প্রায় ১২০ কেজি মধু উৎপাদন হয়। এখানকার উৎপাদিত মধু দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানি কিনে নিয়ে যায়। এর মধ্যে যেমন ডাবর ও হানি কোম্পানি রয়েছে।
হালট্টি গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস নামে একজন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, লাভবান হওয়ার জন্য মধুচাষ খুব ভালো একটি পথ। এতে সহজেই লাভবান হওয়া যায়। নিজের মালিকানা থাকে। আমার খামারে ১৩০টি বাক্স আছে। মৌসুম শেষে ১০ লাখ টাকার মধু বিক্রি হলে ৫ লাখের মতো লাভ থাকবে বলে আশা করছি।
মৌচাষে প্রশিক্ষণ নিতে আসা হামিদুর রহমান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমি একজন শিক্ষার্থী। কম খরচে মৌচাষ করে লাভবান হওয়া যায় তাই আমি এখানে প্রশিক্ষণ নিতে এসেছি। এখানে মধু ও মৌমাছি চাষ কিভাবে করা যায় এ বিষয়ে ৫ দিন প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে আমাদের একটি বাক্স দেয়া হবে। এটি দিয়েই আমরা মৌচাষ শুরু করবো। এটি বেকারত্ব দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছি।
হারুনুর রশীদ নামে একজন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, প্রতিবছর ৫/৭ একর জমিতে সরিষার চাষ করি। কিন্তু আমার এলাকায় কোন মৌমাছির চাষ নেই। তাই নিজের জমির পাশে মৌমাছির চাষ করার চিন্তা করি। এতে আমার সরিষার ফলনও বৃদ্ধি পাবে, মধুও বিক্রি করে লাভবান হতে পারব। এজন্য প্রশিক্ষণ নিতে এসেছি।
মধু কিনতে আসা ক্রেতা ইকবাল হোসেন, জোবায়ের রহমান, মিজানুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলমসহ অনেকেই বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এখানে প্রাকৃতিকভাবে মৌমাছির দ্বারা ভেজালমুক্ত মধু উৎপাদন হচ্ছে। তবে গতবারের চেয়ে এবার দাম ১শ' টাকা করে বেশি নিচ্ছে।
দিনাজপুর বাসেরহাট বিসিকের মৌমাছি পালন কর্মসূচির কারিগরি সহকারী হাফিজুর রহমান বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, বেকারত্ব দূর করার জন্য আমরা প্রশিক্ষণ চালু করেছি। যে কেউ এখানে এসে প্রশিক্ষণ নিয়ে মৌচাষ শুরু করতে পারবেন। এতে অনেক লাভবান হওয়া যায়।
জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি পরাগায়নের কারণে সরিষার ফলন ভালো হয় এবং মধু উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
জয়পুরহাট বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক লিটন চন্দ্র ঘোষ বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, মৌচাষীদের ঋণ সহায়তাসহ সরকারের অন্যান্য সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। এই চাষ করে সহজেই এলাকার যুবক, কৃষক ও স্বল্প আয়ের মানুষেরা প্রচুর লাভবান হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে জেলায় প্রায় ১০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এবারও ১৫ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে মোমাছির বাক্স দেয়া হবে। এছাড়াও তাদের নিবন্ধন দেয়া হবে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে