ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব

আখেরি মোনাজাত আজ

  গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০১৮, ০২:১৯  
আপডেট :
 ২১ জানুয়ারি ২০১৮, ১০:৩০

আখেরি মোনাজাত আজ
গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে আয়োজিত বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত আজ রবিবার। ছবিটি প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতের সময় তোলা।

টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে আজ রবিবার। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন কাকরাইল মসজিদের হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের। বাংলা ও আরবিতে এ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। আর এর মাধ্যমে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। এর আগে ১২-১৪ জানুয়ারি মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হয়।

বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বি মো. মাহফুজ জানান, দ্বিতীয় পর্বেও আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন কাকরাইল মসজিদের মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের। তিনি আরবি ও বাংলায় মোনাজাত পরিচালনা করবেন।

গত পর্বের মতো এপর্বেও বিশ্ব ইজতেমার অন্যতম আকর্ষণ যৌতুকবিহীন বিয়ে শনিবার অনুষ্ঠিত হয়নি। তাবলিগ জামাতের আগামী ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমা ২০১৯ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে প্রথম পর্ব এবং ২৫ জানুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্ব টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে দ্বিতীয় দিনেও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানের দিকে ছুটে আসছেন। মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মুসল্লিদের এ ঢল অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে ইজতেমা কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন থানাসহ গাজীপুর ও আশপাশের এলাকার মুসল্লির ঢল নামবে ইজতেমা অভিমুখে, যার কারণে টঙ্গীর তুরাগ তীর জনসমুদ্রে পরিণত হবে। আয়োজকদের ধারণা, অন্য বছরের চেয়ে এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় মুসল্লির সংখ্যা অনেক বেশি হবে। ২০ থেকে ২৫ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নিতে পারেন বলে আয়োজকদের ধারণা।

এদিকে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে শিল্প নগরী টঙ্গী এরই মধ্যেই ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে। শনিবার সকালেই টঙ্গী শহর এবং ইজতেমাস্থল ও এর আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমায় আগত লাখ লাখ মুসল্লির পদভারে মুখর হয়ে উঠেছে।

ইসলামী দাওয়াতের মাধ্যমে ঈমান আকিদা বিষয়ে শিক্ষা লাভ করে ইহলোকিক ও পারলৌকিক মঙ্গল কামনার জন্য মুসল্লিরা দেশের দূর-দূরান্ত থেকে ইজতেমা ময়দানে উপস্থিত হয়েছেন। শনিবারও টঙ্গী অভিমুখী বাস, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে ছিল মানুষের ভিড়। আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মানুষের এ ঢল অব্যাহত থাকবে। এই পর্বের ইজতেমায় ঢাকার একাংশসহ দেশের ১৩টি জেলার মুসল্লিরা ২৮ খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন।

আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে মুসল্লিদের সুবিধার্থে শনিবার দিবাগত রাত থেকে ওই এলাকায় যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে পুলিশ। রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ বিধিনিষেধ বলবৎ থাকবে। এবারের বিশ্ব ইজতেমা নজীরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রায় ১২ হাজার র‌্যাব ও পোশাকধারী পুলিশের পাশপাশি রয়েছে সাদা পোশাকে প্রায় তিন হাজার গোয়েন্দা সদস্য। আকাশ ও নৌপথে রয়েছে র‌্যাবের সতর্ক নজরদারী।

আরো দুই মুসল্লির মৃত্যু টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক চিত্তরঞ্জন দাস জানান, বার্ধক্য ও শ্বাসকষ্টজনিত কারণে আরো দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে শুক্রবার রাত সোয়া ১টার দিকে বার্ধক্যজনিত কারণে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার মোবারক হোসেন ওরফে মোহর আলী (৬৫) মারা যান। অন্যদিকে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গতকাল সকাল সোয়া ৬টার দিকে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকার ওমর আলীর ছেলে মো. শহীদুল ইসলাম (৫৬) মারা গেছেন। প্রথম পর্বে এক মালয়েশিয়ান ও এক আফ্রিকান নাগরিকসহ পাঁচ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছিল।

দ্বিতীয় দিন শনিবার যারা বয়ান করলেন ইজতেমার দ্বিতীয় দফার দ্বিতীয় দিন শনিবার ফজরের নামাজের পর থেকে বয়ান করেছেন বাংলাদেশের মাওলানা মোহাম্মদ হোসেন। এ সময় ইংরেজি, উর্দুসহ বিভিন্ন ভাষায় বয়ান তরজমা করা হয়। এ ছাড়া বাদ জোহর সৌদি আরবের মুরব্বি শেখ ইসমাইল ও বাংলাদেশের মাওলানা মো. জাকির হোসেন, বাদ আছর বাংলাদেশের মাওলানা রবিউল হক এবং বাদ মাগরিব বাংলাদেশের মাওলানা হাফেজ মো. জোবায়ের বয়ান করেছেন বলে জানান বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বি ইঞ্জিনিয়ার মো. গিয়াস উদ্দিন।

যা বয়ান করলেন গত দুই দিন ধরে ইজতেমা মাঠে সার্বক্ষণিক ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত রয়েছেন মুসল্লিরা। প্রতিদিন ফজর থেকে এশা পর্যন্ত ইজতেমা মাঠে ইমান, আমল, আখলাক ও দ্বীনের পথে মেহনতের ওপর আম বয়ান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শনিবার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিনে দেশ-বিদেশের মুরুব্বিরা তাবলিগের ছয় উছুলের মধ্যে দাওয়াতে দ্বীনের মেহনতের ওপর গুরুত্বারোপ করে বয়ান করেন।

বয়ানে তাবলিগের মুরুব্বিরা বলেন, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে আমাকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন এবং আল্লাহ তায়ালা এটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, দুনিয়াতে যে একবার আসবে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। আল্লাহ পাকের এ সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হবে না। দুনিয়া হচ্ছে ধোকার ঘর, এ দুনিয়া হচ্ছে ধোকার জীবন। মিছে এই দুনিয়ার আরাম আয়েসের কথা ভুলে গিয়ে আখেরাতের কথা চিন্তা করো। দুনিয়ার জিন্দেঘি ক্ষণস্থায়ী, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের দিল থেকে আসবাবের (সম্পদের) এক্বিন বের না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার দিলে কুদরতি এক্বিন পয়দা হবে না। সবাইকে দ্বীনের জন্য মেহনত করতে হবে। আল্লাহর কাছে আমল ছাড়া এ দুনিয়ার জিন্দেগির কোনো মূল্য নেই।

বয়ানে আরো বলা হয়, দীনের দাওয়াতের মাধ্যমে ঈমান মজবুত হয়। ঈমান মজবুত হলে আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর এ সম্পর্ক গড়ে উঠলে দুনিয়া ও আখেরাতে কামিয়াবি হাসিল হয়।

মুরুব্বিদের প্রেসব্রিফিং স্থগিত বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে এর আমির ভারতের মাওলানা সা’দ কান্ধলভী বিতর্ক ও তাবলিগের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার দুপুরে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে তাবলীগ জামাতের একাংশের মুরুব্বিরা হঠাৎ প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেন। কিন্তু পরে তা স্থগিত করা হয়।

বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বি প্রকৌশলী মো. মাহফুজ জানান, শনিবার দুপুর ২টার দিকে ইজতেমা ময়দানে বিদেশি তাঁবুর তিন নম্বর ফটকের পাশে হাজি সেলিম মিয়ার কামরায় ওই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে। পরে অনিবার্য কারণবশত তা স্থগিত করা হয়েছে।

তাশকিলের কামরায় চিল্লাভুক্ত মুসল্লি ইজতেমার প্যান্ডেলের উত্তর-পশ্চিমে তাশকিলের কামরা স্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন খিত্তা থেকে বিভিন্ন মেয়াদে চিল্লায় অংশগ্রহণেচ্ছু মুসল্লিদের এ কামরায় আনা হচ্ছে এবং তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। পরে কাকরাইলের মসজিদের তাবলিগের মুরুব্বিদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এলাকা ভাগ করে তাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় দ্বীনের দাওয়াতের কাজে পাঠনো হবে।

আখেরি মোনাজাত যখন ইজতেমার আয়োজক কমিটির মুরুব্বি মাওলানা মো. গিয়াসউদ্দিন জানান, রোববার সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত করার কথা রয়েছে। গত পর্বের মতো এ পর্বেও তাবলিগ জামাতের মুরুব্বি বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের আরবি ও বাংলায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করার কথা রয়েছে। এর আগে তাবলিগ জামাতের প্রয়াত বিশ্ব আমির মো. জোবায়রুল হাসান এবং মাওলানা সা’দ আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেছেন।

৮০টি দেশের প্রায় চার হাজার বিদেশি মুসল্লি শনিবার দুপুর পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে ৮০টি দেশের প্রায় চার হাজার বিদেশি মুসল্লি অংশ নেন। তাছাড়া এপর্বে ঢাকার একাংশসহ দেশের ১৩টি জেলার কয়েক লাখ মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন গাজীপুরে জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর।

জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, ইজতেমাস্থলের আশেপাশে বিভিন্ন খাবার দোকান ও হোটেলে শুক্রবার থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে ভেজাল খাবার পরিবেশন ও বিক্রির দায়ে বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে কয়েক ব্যক্তিকে জরিমানা ও আদায় করেন। ইজতেমাস্থলের আশেপাশে পাঁচটি করে দুই শিফটে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের মোট ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলার মোট ২৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওইসব আদালত পরিচালনা করেন।

বিশেষ ট্রেন এবারের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে আখাউড়া, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রুটে ২৯টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইজতেমা উপলক্ষে এসব ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোগ করা হয়েছে। এছাড়া আখেরি মোনাজাতের আগে ও পরে সব ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে।

টঙ্গী রেলওয়ে জংশন সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত টঙ্গী থেকে জামালপুর, আখাউড়া, লাকসাম রুটসহ কয়েকটি বিশেষ ট্রেন চলবে। আখেরি মোনাজাতের দিন টঙ্গী থেকে ঢাকা, লাকসাম, আখাউড়া, ময়মনসিংহ ও ঈশ্বরদী রুটে একাধিক বিশেষ ট্রেন যাতায়ত করবে। আখেরি মোনাজাতের পরের দিন টিকেটধারী মুসল্লিরা যাতে উঠতে পারেন সেজন্য সব ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে যাত্রা বিরতি দেবে। এছাড়া ইজতেমায় আগত যাত্রীদের কথা বিবেচনায় রেখে টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে অতিরিক্ত টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ শনিবার সকালে টঙ্গীর আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে ইজতেমার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে এক ব্রিফিংয়ে জানান, দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের দিন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী-কালীগঞ্জ ও কামারপাড়া সড়কে যানচলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া যানচলাচল বন্ধের কারণে টঙ্গী ও আশপাশ এলাকায় কল-কারখানার মালিক কর্তৃপক্ষ বিশ্ব ইজতেমার জন্য এ দিন কারখানা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। হাজার হাজার শ্রমিকরা যাতে আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে পারে সেজন্য এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

মোনাজাতের দিন চলবে শ্যাটল বাস গাজীপুরের পুলিশ সুপার জানান, শনিবার রাত ১২টা থেকে রোববার আখেরি মোনাজাতের দিন বিকেল পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে আব্দুল্লাহপুর এবং টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের মীরের বাজার থেকে টঙ্গী স্টেশন রোড হয়ে কামারপাড়া ও সাভারের বাইপাইল থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের গাড়ি ছাড়া সাধারণ যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। সেজন্য মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে আখেরি মোনাজাতের দিন রোববার ভোর থেকে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস মোড় এলাকা থেকে ইজতেমাস্থল পর্যন্ত মুসল্লিদের সুবিধার্থে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রায় অর্ধশত শ্যাটল বাস (ইজতেমার স্টিকার লাগানো) চলাচল করবে।

নৌযান চলাচলে নির্দেশনা বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ৯ জানুয়ারি থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত টঙ্গী সেতু থেকে কামারপাড়া সেতু পর্যন্ত তুরাগ নদীতে সব ধরনের নৌযান চলাচল ও নোঙ্গর বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে নৌযানগুলো টঙ্গী সেতুর পূর্ব পাশে এবং কামারপাড়া ব্রিজের উত্তর পাশে নোঙর করতে পারবে। নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও সদরঘাট থেকে ছয়টি ওয়াটার বাস টঙ্গী পর্যন্ত মুসল্লি বহন করবে।

নিরাপত্তা বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছে। টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়াম, টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল মাঠ ও মন্নু টেক্সটাইল মিলে পুলিশের অস্থায়ী ব্যারাক নির্মাণ করা হয়েছে। ইজতেমা মাঠে প্রবেশের ১৭টি রাস্তায় সাত স্তরে নিরাপত্তা তল্লাশি পেরিয়ে মুসল্লিদের মাঠে প্রবেশ করতে হচ্ছে। প্যান্ডেলের ভেতর ও বাইরে মুসল্লি বেশে রয়েছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রায় তিন হাজার সদস্য। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাতটি স্তরে নিরাপত্তা দিচ্ছে। ইজতেমা ময়দানের সব প্রবেশপথে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ও বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে।

যে সব এলাকায় গাড়ি পার্কিং করা যাবে না ইজতেমার আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে মুসল্লিদের সুবিধার্থে শনিবার বিকেল থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মহাখালী ক্রসিং থেকে টঙ্গী হয়ে গাজীপুর চৌরাস্তার পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশে, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের টঙ্গী থেকে মীরের বাজার পর্যন্ত, আব্দুল্লাহপুর থেকে বাইপাইল পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে, প্রগতি স্বরণিস্থ মধ্যবাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রগতি স্বরণিস্থ রাস্তার দুই পাশে যানবাহন পার্কিং করা যাবে না।

যেসব পথে গাড়ি চলবে শনিবার রাত ১২টার পর থেকে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, আশুলিয়া-বাইপাইল, কামারপাড়া, স্টেশনরোড থেকে মীরের বাজার পর্যন্ত সব গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে। বিকল্প পথ হিসেবে ময়মনসিংহ ও সিলেট থেকে যারা ঢাকা যাবে তাদের ভোগড়া বাইপাস থেকে মীরের বাজার হয়ে কাঁচপুর দিয়ে অতিক্রম করতে হবে। আবার যারা রাজশাহীসহ উত্তর বঙ্গথেকে ঢাকা যাবে তারা নবীনগর-চন্দ্রা কিংবা আশুলিয়া-বাইপাইলের ধৌড় ব্রিজ হয়ে বেড়িবাধ দিয়ে অতিক্রম করতে বলা হয়েছে। মোনাজাতের দিন ঢাকা থেকে ইজতেমাস্থলগামী মুসল্লিদের টঙ্গী ব্রিজ পরিহার করে আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া সড়ক ধরে হেঁটে ইজতেমা ময়দানের পশ্চিমপাশ দিয়ে ভাসমান সেতু দিয়ে ময়দানের ভেতরে প্রবেশের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজীপুর ট্রাফিক বিভাগ।

পকেটমার-ছিনতাইকারী আটক শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত ইজতেমাস্থলের আশেপাশে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ও র‌্যাবের টহল দল কয়েকজন ছিনতাইকারী, পকেটমার ও হকারকে আটক করেছে বলে টঙ্গী মডেল থানার ওসি জানিয়েছেন।

ইজতেমার ইতিহাস ইজতেমার মুরুব্বিদের দেওয়া তথ্যমতে, ইজতেমার মুরুব্বিদের দেওয়া তথ্যমতে, ১৯৪৬ সালে প্রথম কাকরাইল মসজিদে ইজতেমার আয়োজন শুরু করা হয়। তারপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্পে ও ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৬৬ সালে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বর্তমান স্থানে স্থানান্তর করা হয়। পরে সরকারিভাবে তুরাগ তীরে ১৬০ একর জমি স্থায়ীভাবে ইজতেমার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। মুসল্লিদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় এবং নিরাপত্তার কথা ভেবে ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বের ইজতেমা শুরু হয়। একই কারণে ২০১৬ সাল থেকে আবারও ইজতেমা আয়োজনের পরিবর্তন আনা হয়। প্রথম বছর যারা (যে ৩২ জেলার মুসল্লি) টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেবেন তারা পরবর্তী বছর সেখানে যাবেন না। ওই বছর এসব জেলার মুসল্লিরা নিজ নিজ জেলায় আঞ্চলিক ইজতেমায় শরিক হবেন। তবে বিদেশি মুসল্লিরা প্রতি বছর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পারবে। ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার পাশাপাশি জেলা জেলায় আঞ্চলিক ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিশ্ব ইজতেমার শীর্ষ পর্যায়ের মুরুব্বিরা ইজতেমার এ তারিখ নির্ধারণ করেন।

/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত