ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্যারাডাইজ পেপারসে ২০ বাংলাদেশি

মন্ত্রীর উদ্বেগ: ব্যবস্থা নিচ্ছে দুদক

মন্ত্রীর উদ্বেগ: ব্যবস্থা নিচ্ছে দুদক

বহুল আলোচিত প্যারাডাইস পেপারসের দ্বিতীয় তালিকায় বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরসহ আরও ২০ বাংলাদেশির নাম আসার খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দুদকসহ সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, দেশে বিনিয়োগ না হওয়ায় দেশের বাইরে অর্থ পাচার হচ্ছে। এমনকি সরকারের একজন মন্ত্রীও এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন।

প্যারাডাইস পেপারসের নতুন তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা সবাই অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের মাল্টাতে অর্থ পাচার করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) বুধবার রাতে এ দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করে।

দেশ থেকে অর্থ পাচারের বিষয়টি স্বীকার করে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি হলে অর্থ পাচার ঠেকানো সম্ভব। তিনি বলেন, পাচারকৃত অর্থ বৈধ না অবৈধ উপায়ে অর্জন করেছে খতিয়ে দেখা জরুরি।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিষয়টি অফিসিয়ালি জানার পর তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। আইসিআইজের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নতুন তালিকায় সারা বিশ্বের ৮৫ হাজার প্রতিষ্ঠান এবং ১ লাখ ১০ হাজার ব্যক্তির নাম রয়েছে। আইসিআইজে জানিয়েছে, সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত এ কেলেঙ্কারিতে প্রায় ৮ লাখ কোম্পানি এবং ৭ লাখ ২০ হাজারের বেশি ব্যক্তির কর ফাঁকির তথ্য পাওয়া গেছে।

আর বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, নতুন করে প্যারাডাইস পেপারসে নাম আসা তালিকা যাচাই করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিষয়টি আমরা জানার পর মন্তব্য করব। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। তিনি বলেন, দুদকের পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীর তত্ত্ব্বাবধানে একটি টিম পানামা ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারির ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধান করছে। নতুন করে যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়টিও দুদক থেকে খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

দুদকের পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে উপপরিচালক আখতার হামিদ ভূঁইয়া ও সহকারী পরিচালক মজিবুর রহমান পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান করছেন।

দুদক সূত্রে আরও জানা গেছে, পানামা পেপারসে নাম আসা ১৫ জনকে এরই মধ্যে নোটিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জনের ঠিকানা সঠিক পাওয়া গেছে। অন্য ৬ জনের পরিচয় হচ্ছে তারা অনাবাসিক বাংলাদেশি নাগরিক। তাদের বর্তমান ঠিকানা অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু তারা বাংলাদেশের ঠিকানা ব্যবহার করে অফশোর ব্যাংক হিসাব খুলেছিলেন।

দুদকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে যাদের নাম এসেছে এবং দুদক যাদের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে তাদের তথ্য সংগ্রহ করে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ ও এনবিআরের সিআইসিকে অনুরোধ করা হয়েছে।

দেশ থেকে নানা উপায়ে অর্থ পাচারের বিষয়ে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্যারাডাইস পেপারসে যেসব কোম্পানির নাম এসেছে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। না হলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। তিনি বলেন, দুদকের এ বিষয়ে আরও কঠোর হওয়া উচিত। কারণ দুদকই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যমে অর্থ পাচারের তদন্ত সম্ভব।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদষ্টো ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশের মোট বিনিয়োগের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ আসে বেসরকারি খাত থেকে। কিন্তু বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমছে। এ কারণে টাকা পাচার হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ একবার বিদেশে টাকা গেলে তা ফেরত আনা খুব কঠিন।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, যে কোনো উৎস থেকে আমাদের কাছে তথ্য এলে আমরা বিষয়টি যাচাই করি। অস্বাভাবিক কিছু পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়। এর আগে যত তালিকা এসেছে, সবগুলোর ব্যাপারে এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নতুন তালিকাগুলো যাচাই করে একই নিয়ম অনুসরণ করা হবে।

এর আগে সংগঠনটি গত বছরের ১৮ নভেম্বর প্রথম তালিকা প্রকাশ করেছিল। সেখানে ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টু ও তার পরিবারের কয়েকজন সদস্যসহ দশ বাংলাদেশির নাম ছিল। এছাড়া ২০১৬ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত একই সংগঠনের পানামা পেপারসের অর্থ পাচারের তালিকায় ছিল অন্তত ৫২ বাংলাদেশির নাম। সব মিলিয়ে সংগঠনটির অর্থ পাচারের তালিকায় এ পর্যন্ত ৮২ বাংলাদেশির নাম উঠল।

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত