ঢাকা, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ আপডেট : ২১ মিনিট আগে
শিরোনাম

সমকামিতার আড়ালে অপরণ কর‌তো চক্রটি

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৩, ১৪:২৩

সমকামিতার আড়ালে অপরণ কর‌তো চক্রটি
ছবি: প্রতিবেদক

ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে সমকামি তরুণদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলত একটি চক্র। এরপর আগ্রহী তরুণদের গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় এনে জিম্মি করে টাকা পয়সা আদায় করে ছেড়ে দিত।

২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে এই চক্রের ডাকে ঢাকায় আসেন আমির হোসেন (২৫)। এরপর চক্রের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে অপহৃত হন। পরবর্তীতে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করলেও টাকা না পেয়ে আমিরকে হত্যা করে লাশ গুম করে চক্রটি।

দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত বুধবার নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপ থেকে চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির দক্ষিণখান থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- চক্রের মূলহোতা মো. তারেক ওরফে তারেক আহাম্মেদ (৩১), মোহাম্মদ হৃদয় আলী (২৯), আশরফুল ইসলাম (২৩), রাসেল সরদার (২৫), তৌহিদুল ইসলাম বাবু(৩০)।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএম‌পির উত্তরা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম জানান, ২০২২ সালের ১৭ ডিসিম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর এলাকার বাসিন্দা আবু তাহেরের ছেলে আমির হোসেন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে ঢাকা আসেন। এরপর ২২ ডিসেম্বর দক্ষিণখান থানার আশকোনা মেডিকেল রোডে আমিরের বড় বোন নুরনাহার বেগমের (৩৪) বাসায় ওঠেন।

এরপর ২৮ ডিসেম্বর আমিরের ছোট বোন কামরুন্নাহারকে (২২) চক্রের সদস্যরা তার ভাইয়ের মুক্তির জন্য ১০ লাখ টাকা দাবি করে। এই ঘটনায় আমিরের বড় ভাই বিল্লাল হোসেন (৪০) দক্ষিণখান থানায় ওই দিনই সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডির পর থেকে অপহৃত আমিরকে উদ্ধারে অভিযান চালায় পুলিশ। পরবর্তীতে চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল বিল্লাল থানায় অপহরণ মামলার দায়ের করেন।

মোর্শেদ আলম আরও বলেন, অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা অত্যন্ত দুর্ধষ ও চতুর। তাদের শনাক্ত করতে বেশ কয়েকবার কৌশল পরিবর্তন করা হয়। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় চক্রের সদস্য আশরাফুল ইসলামকে সাভারের জিরাবো এলাকা হতে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যে রাসেল সরদার ও তৌহিদুল ইসলাম বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনজন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে চক্রের মূলহোতা তারেক আহাম্মেদ ও তার সহযোগী মোহাম্মদ হৃদয় আলীর অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর গতকাল বুধবার (১৭ মে) দক্ষিণখান থানার বিশেষ একটি দল নোয়াখালীর দুর্গম হাতিয়া দ্বীপে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তার তারেকের দেয়া তথ্যানুযায়ী গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকার একটি বাড়ীর পরিত্যক্ত সেফটি ট্যাঙ্কের ভিতর থেকে অপহৃত আমিরের হাত-পা বাধাঁ অবস্থায় পলিথিনে মোড়ানো বস্তাবন্দী গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিসি মোর্শেদ আলম জানান, গ্রেপ্তার চক্রের মূল হোতা তারেকের ‘কষ্টের জীবন’ নামের একটি ফেইক ফেসবুক আইডি ছিলো। এই আইডি দিয়ে বিভিন্ন সময় ফেসবুক মেসেঞ্জারে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সমকামিতার প্রস্তাব দিতো। যারা তার প্রস্তাবে রাজি হত তাদেরকে গাজীপুরের চৌরাস্তা/শ্রীপুর/মাওনাসহ বিভিন্ন এলাকায় ডেকে আনত।

এরপর মোবাইল টাকা পয়সা কেড়ে নিয়ে হত্যার ভয় দেখিয়ে ছেড়ে দিতে। ঠিক এভাবেই নিহত আমিরকে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে গাজীপুর চৌরাস্তায় ডেকে নেয়। আমির তার বোনের বাসা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তায় গেলে তারা তাকে জিম্মি করে ফেলে। এরপর বোনের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। প্রতাশিত মুক্তিপণ না পাওয়া ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর আমিরকে হত্যা করে। এরপর বস্তায় লাশ ভরে বাসার পিছনে পরিত্যক্ত সেফটি ট্যাংকিতে লুকিয়ে রেখে আত্মগোপন করে।

বংলাদেশ জার্নাল/সুজন/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত