ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

জরুরি সেবা নম্বরে অধিকাংশ ফোন কলই ভুয়া

জরুরি সেবা নম্বরে অধিকাংশ ফোন কলই ভুয়া

ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আইনজীবী সুরাইয়া জান্নাত সুমি। বাড়ির সামনে রাত দেড়টা পর্যন্ত ভয়ানক জোরে হৈ হুল্লোড় আর গান বাজছিল। ফলে তিনি এবং তার বোন দুজনেই পরীক্ষার পড়া পড়তে পারছিলেন না। তাই সুরাইয়া জান্নাত সমস্যা সমাধানে জরুরি সেবা নম্বরের সহায়তা নিয়েছিলেন।

সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, বাসার ঠিক উল্টো পাশেই বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। রাত দেড়টা পর্যন্ত অনেক জোরে হিন্দি গান বাজছে। আমার বোনের পরীক্ষা চলে। আমারও তখন হাইকোর্টের পরীক্ষা চলছিল। তারপর আমি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করার পর ওরা আমাকে মোহাম্মদপুর থানার সাথে কানেক্ট করিয়ে দেয়। সব মিলিয়ে দশ মিনিট লেগেছিল। পরে পুলিশ এসে কথা বার্তা বলে গান বন্ধ করে দিয়ে যায়।

এই সমস্যাটি অনেকের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ মনে নাও হতে পারে। কিন্তু ঈদের সময় মহাসড়কে দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তৌহিদুজ্জামান তন্ময় বলছিলেন তিনিও মোটামুটি ৩০ মিনিটের মাথায় সহযোগিতা পেয়েছিলেন। জরুরি সেবা নম্বরের কাজ এমনই হওয়ার কথা।

কিন্তু এই নম্বরের দায়িত্বে থাকা পুলিশের টেলিকম ও ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে চালু হওয়ার পর থেকে তাদের কাছে এ পর্যন্ত মোট ৩৭ লাখের মতো কল এসেছে।

এর মধ্যে অপ্রয়োজনীয়, ভুয়া কল বা কৌতূহলীবশতঃ ফোন ২৪ লাখ। ১৮ লাখ কলে কলার কোন কথাই বলেননি। আর ৬ লাখ ছিল আজে আজে কথাবার্তা। তারা শুধু পুলিশের কণ্ঠ শুনে ফোন কেটে দিয়েছেন।

এ সম্পর্কে অতিরিক্ত মহা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ ইকবাল হাবিব বলেন, অনেকেই কল করছে। কিন্তু যখন কল রিসিভ হচ্ছে তখন কিছু বলছে না। আর ক্র্যাংক কলকে আমি বলছি অবাঞ্ছিত কল। এই কলটি করে তারা আসলে কোন সাহায্যের বিষয়ে বা প্রয়োজনীয় কোন বিষয়ে কথা বলে না। এমন কলার নাম্বারটি ব্যস্ত রাখে এবং তাতে প্রকৃত অর্থে যার সাহায্য দরকার সে বঞ্চিত হয়।

কিন্তু ভিন্ন ধরনের গল্প শোনালেন ঢাকার বাংলামটর এলাকার একটি রেস্টুরেন্টের মালিক। তিনি বলেন, আমার রেস্টুরেন্টে চাঁদাবাজির ঘটনা সম্পর্কে নালিশ জানাতে ফোন করেছিলাম। আমাকে প্রথমে স্থানীয় থানার ফোন নম্বর ধরিয়ে দেয়া হল। সেখান থেকে দেয়া হল ডিউটি অফিসারের নম্বর। তিনি জানালেন এটা তার অঞ্চলের নয়। যখন বুঝলেন তারই অঞ্চলের তখন আর এক অফিসারের নম্বর দিলেন। তিনি বললেন ব্যস্ততার কথা। এতে অনেক সময় চলে গেলো এবং আমি নিজেই অন্য উপায়ে, মানে কিছু টাকা দিয়ে সমস্যার সমাধান করে ফেললাম।

কিন্তু বিশ্বব্যাপী নিয়ম হল সরাসরি জরুরি নম্বরের দায়িত্ব প্রাপ্তরাই সংশ্লিষ্টদের জানাবেন এবং সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির কাছে জরুরি সেবাদানকারীদের পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন।

বর্তমানে এই কল সেন্টারে ৭০ জন কাজ করেন। তবে এটি বাড়িয়ে ১০০ জন করার চেষ্টা চলছে।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর থেকে দেশব্যাপী এমন কলের মোটে ৩৭ হাজারের ক্ষেত্রে তারা সেবা দিয়েছেন। অর্থাৎ ১৩ লাখের মতো বিশাল সংখ্যক কলার কোন সাহায্য পাননি। আর বিপদগ্রস্ত বা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি পর্যন্ত পৌঁছাতে তাদের সময় লেগেছে ৩০ মিনিট। সময়টি জরুরি বিভাগের রেসপন্স টাইম হিসেবে অনেক বেশি। আর ততক্ষণে অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে।

ঘটনাস্থলের দূরত্ব, ট্রাফিক জ্যাম এবং গাড়ি ও জনবল সংকটই এর মুল কারণ বলছেন অতিরিক্ত মহা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ ইকবাল হাবিব। এই সময় ১০ মিনিটে নামিয়ে আনার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলছেন, আমরা পুলিশের গাড়িগুলোতে জিপিআরএস বসানো হবে। কোন গাড়িটি ঘটনাস্থলের সবচাইতে কাছে আছে সেটিকে খুঁজে তাকে সরাসরি ঘটনাস্থলে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে চাই। তবে সেজন্যে কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে জনগণকে।

ডিসেম্বরে তা চালু করার চেষ্টা চলছে। আর যারা ঘন ঘন ক্র্যাংক কল বা ব্ল্যাংক কল করছেন তাদের শাস্তি ও জরিমানার চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

কিন্তু যে ১৩ লাখ কলার সাহায্য পাননি তার কারণ কি?এই প্রশ্নের জবাবে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলছেন, সাত লাখ কল এসেছে নানা ধরনের প্রশ্ন নিয়ে যারা মূলত মোবাইল অপারেটরদের সম্পর্কে তথ্য চেয়েছেন যা আমাদের জানা নেই। আমাদের কাছে সবাই সেবা পেয়েছে। সবার কল আমরা ধরেছি।

তাই কেউ সহায়তা পাননি সেটি মানতে রাজি নন তিনি। কিন্তু অনেকে ওই রেস্টুরেন্ট মালিকের মতো অবস্থায় কেন পরছেন তার কোনো সঠিক জবাব মেলেনি।

অতিরিক্ত মহা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ ইকবাল হাবিব

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত