ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

নির্বাচনে আসা না আসা তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত: প্রধানমন্ত্রী

নির্বাচনে আসা না আসা তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত: প্রধানমন্ত্রী

কোন দল নির্বাচনে অংশ নেবে, আর কোন দল নির্বাচনে অংশ নেবে না— সেটা ওই দলের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সব দলই আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে বলে আশাবাদী বলে জানিয়েছেন তিনি।

জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়ে দেশে ফিরে ওই অধিবেশনসহ যুক্তরাষ্ট্র সফরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যথাসময়েই নির্বাচন হবে। দেশের মানুষ ভোটও দেবে। এই দেশে তো অনেক রাজনৈতিক দল। নির্বাচনে কোন দল আসবে, আর কোন দল আসবে না, সেটা তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সেই সিদ্ধান্ত তো আমরা নিতে পারি না। তবে আমাদের আশা, সব দলই নির্বাচনে আসবে।’

নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এর আগে প্রধান বিরোধী দলকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করতে চেয়েছিলাম। তখন তার সাড়া দেয়নি। যারা সাড়া দিয়েছিল, তাদের নিয়ে আমরা সরকার গঠন করি।

এ প্রসঙ্গে আরেক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের জোট তো আছে। আর যারা আসতে চায় (সরকারে), আসবে। যেসব দেশে সংসদীয় সরকার আছে, তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি। সেসব দেশে নির্বাচনের সময়ও সরকারই ক্ষমতায় থাকে। সব দেশের আইনেই তাই আছে। তবে আমরা কেবিনেট ছোট করে নিয়ে করতে পারি।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা যারা সাড়া দিয়েছিল, তাদের নিয়ে আমরা সরকার করলাম। সেই সরকারের অধীনে নির্বাচন হলো। আর তারা নির্বাচন ঠেকাতে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। আপনারা কাদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যাদের কাছে মানুষের গুরুত্ব নেই? আপনারা তো সাংবাদিক, আপনারা কি খোঁজ নিয়েছেন? যারা মারা গেছে, তারা তো গেছেই। কিন্তু যারা পোড়া শরীর নিয়ে বেঁচে আছে, তাদের খোঁজ নিয়েছেন? নেননি। ৩ হাজার ৯শ মানুষকে তারা পোড়ালো, এসব পুড়ে যাওয়া মানুষের খোঁজ নেবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, গাছ কেটেছে, গাছ লাগিয়েছি, গাছ হয়ে গেছে। কিন্তু যারা আগুনে পুড়লো তাদের বা যারা প্রিয়জন হারিয়ে বেঁচে আছে, তাদের কী হলো? বিদেশিরা বসে আছে তদন্ত করতে। নাইকো মামলা, গ্যাটকো মামলা, এতিমের টাকা চুরি যারা করে, মানুষ পুড়িয়ে যারা হত্যা করে, তাদের জন্য এত সিমপ্যাথি কেন? তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে না, কিন্তু বিদ্যুৎ কর্মকর্তাকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে।

দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আগে নির্বাচন হতো, একজন মিলিটারি ডিকটেটর থাকত। আমাদের সময়ে ট্রান্সপারেন্ট ব্যালট বক্স চালু করেছি, আরও বিভিন্ন অগ্রগতি আমাদের সময়ে হয়েছে। আমাদের সময়ে কতগুলো ভোট হয়েছে, আমরা তো হস্তক্ষেপ করিনি। বিএনপি থাকলে তো সিল মেরেই নিয়ে নিত কিংবা রেজাল্ট আটকে ভোট বদলে দিত।

বাংলাদেশকে নিয়ে অনেকেই ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ষড়যন্ত্রের উর্বর ভূমি। কিছু মানুষ সবসময় অপেক্ষা করে, মানুষ ভালো থাকলে যেন তারা ষড়যন্ত্র করতে পারে। এই বাংলাদেশের বাংলাদেশের যে এত উন্নতি, এর সবকিছুই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুরু করে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালে তাকে হত্যা করা হলো। এরপর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা আর দেশের উন্নয়নে কোনো কাজ করেনি। আজ কি দিন বদল হয়নি? মানুষ খাবার পাচ্ছে না?— প্রশ্ন রাখেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন তারা অপেক্ষা করছে, সরকার চলে যাবে। এমন একজন আসবে যাদের চাল নাই, চুলা নাই; কিন্তু ক্ষমতায় আসার খায়েস আছে। তাদের খায়েস পূরণ করতে গিয়ে তো খেসারত দিতে হয় জনগণকে। ১০ বছর ক্ষমতায় আছি, দেশের মানুষ শান্তিতে আছে। আমাদের তরুণদের জন্য শিক্ষা-গবেষণার সুযোগ আমরা করে দিয়েছি। চাকরির জন্য যেন মুখাপেক্ষী না হতে হয়, সে জন্য তাদের উদ্যোক্তা হিসেবে ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার সুযোগ করে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও পত্রিকায় লেখা হয়, সরকার এইখানে ফেল করেছে। ওটাই তাদের আত্মসন্তুষ্টি। কিন্তু আমরা নিজেদের স্বার্থের জন্য রাজনীতি করি না, মানুষের জন্য কাজ করি।

শেখ হাসিনা বলেন, মনে রাখতে হবে, আমার পুরো পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা শুধু দুই বোন বেঁচে আছি। গতকাল (২ অক্টোবর) ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা হয়েছে। এই দেশটি ভূমিকম্প আর সুনামিতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। আমার ছোট বোন রেহানা, লন্ডন থেকে আমাকে এসএমএস করেছে ইন্দোনেশিয়ার পাশে দাঁড়াও। আমি দেশটির প্রেসিডেন্টকে ফোন করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছি। তবে আমরা অনেক উন্নয়ন করেছি, এমনিতেই ক্ষমতায় চলে আসব— এটা ভাবার সুযোগ নাই। বাংলাদেশ তো সে রকম দেশ না। এখানে কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র করার জন্যই বসে থাকে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভোট দুই ধরনের। একটা ভোট আওয়ামী লীগের, আরেকটা এন্টি আওয়ামী লীগের। তো বিরোধী জোট বড় হচ্ছে, তারা সুষ্ঠ রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাক। আমি তাদের সাধুবাদ জানাই। আমি তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধা দেব কেনো। তারা সুষ্ঠ রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাক আমি চাই। বিরোধী রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এভাবে চলতে থাকুক।

তিনি বলেন, তারা তাদের কার্যক্রম চালাতে থাকুক। কেউ কেউ বলছে তাদের সমবেশে ৩ হাজার লোক হচ্ছে কেউ বলে চার হাজার। আমি বেশি করে ধরেই বলে পাঁচ হাজার। তারা যদি সমাবেশে লোকও চায় তবে সেটাও সহায়তা করবো।

সংবাদ সম্মেলনে তৌফিক ইমরোজ খালিদি বলেন, সম্প্রতি জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় লিটন দাস ফেসবুকে দেবী দুর্গার ছবি দিয়ে সবাইকে শারদীয় দুর্গা পুজার শুভেচ্ছা জানান। পরে সেই ছবিতে গালাগালিসহ প্রচুর নেতিবাচক মন্তব্য পড়ে। এগুলো মোকাবিলার জন্য কী পরামর্শ দেবেন?

এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ধরনের নোংরামি যেন না হয়, সেই জন্যই সাইবার সিকিউরিটি আইন করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন নোংরামি গোটা বিশ্বের জন্যই বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। আমাদের সাংবাদিকরা এসব ঘটনা মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, লিটন দাস এত ভালো খেলেছে, তাকে কেন এমন বলা হলো আমি জানি না। আমি ব্যস্ত থাকায় এগুলো দেখতে পারিনি। তবে যারা এই ধরনের কাজ করে, তারা বিকৃতমনা। এদের কোনো নীতি-টিতি নেই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিষোদ্গার ও ‘নোংরামি’র বিরুদ্ধে লড়তেও কাজে লাগবে।

এর আগে শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বসভায় বাংলাদেশকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা ও বাংলাদেশের ইমেজকে আরও সুদৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, ছয় দিনের জাতিসংঘ সফরে ১৮টি ইভেন্টে অংশ নিয়ে আমরা এবার বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরেছি।

কোটা বাতিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোটা যদি না থাকে সংস্কারের প্রশ্ন উঠবে না। আর যদি কারো কোটা চায় তাহলে কোটা চাই বলে আন্দোলন করতে হবে। আর সে আন্দোলন যদি ভালো ভাবে করতে পারে, তখন ভেবে চিন্তে দেখবো কি করা যায়। এর পর যদি কেউ কোন কোটা চায় তাহলে আন্দোলন করতে হবে, বলতে হবে আমি এই কোটা চাই। সেটা আগে বলুক, আন্দোলন করুক। আন্দোলন ছাড়া দেব না।

তিনি বলেন, মেয়েরাও কোটা চায় না, ভালো কথা। মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ তো চাকরি পাওয়ার মত নেই, সবাই তো মারা যাচ্ছেন। যারা আন্দোলন করছেন তাদের সাথে আমাদের সেক্রেটারি জেনারেল মিটিং করলেন। সেখানে অনেকেই বললো, আমরা মুক্তিযোদ্ধার নাতি কিন্তু আমরা কোটা চাই না। মেয়েরা বললো আমরা কোটা চাই না, আমরা কমপিটিশন করেই আসবো। মেয়েদের মনে যখন এই কনফিডেন্সটা দেখলাম তখন কোটা থাকার দরকারটা কী? মুক্তিযোদ্ধার নাতিই বলে কোটা চাই না তাহলে দরকার আছে? আর এই কোটা থাকলে খালি আন্দোলন। তো কোটাই নেই, আন্দোলনও নেই, সংস্কারও নেই।

তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতার পর এই কোটা দেয়া হলো। যারা মুক্তিযোদ্ধা, নির্যাতিত নারীদের জন্য বা যারা অনগ্রসর তাদের জন্য জাতির পিতা এটা করে গিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, আমরাও ছাত্র রাজনীতি করেছি, আন্দোলন করেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভিসির বাড়িতে ভাঙচুর হলো। মেয়েরা রাত ১টা-দেড়টার সময় সুফিয়া কামাল হলের গেট ভেঙে বের হয়ে চলে এলা, শামসুন্নাহার হল থেকে বের হয়ে এলা। একটা মেয়ের যদি ক্ষতি হতো এই দায়িত্ব কে নিত। সারা রাত আমি জাগা।'

এসময় প্রধানমন্ত্রীর দুই পাশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গত ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী। ওই দিন লন্ডন পৌঁছান তিনি। সেখানে দু’দিন যাত্রাবিরতি শেষে ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেদিন সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় অংশ নেন তিনি। এই জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে ভাষণ দেওয়া ছাড়াও তিনি বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে ভাষণ দেন এবং জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করেন।

/এমআর/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত