ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২১ মিনিট আগে
শিরোনাম

মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করলেন ভূমি কর্মকর্তা!

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:২৫  
আপডেট :
 ০৮ জানুয়ারি ২০১৯, ২০:০৫

মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করলেন ভূমি কর্মকর্তা!

১৮ বছর পর মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে শিবচরের দাদাভাই উপশহরের নামে অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের টাকা উত্তোলনের জন্য বিল দাখিল করা হয়। এসব ভুয়া কাগজপত্র মাদারীপুর জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার কাছে জমা দেয়া হয়।

শিবচরের দ্বিতীয়খন্ড ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর রাবেয়া এসব ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করেছেন।

এ ঘটনায় জমির প্রকৃত মালিক শিবচর পৌর এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খানকান্দি গ্রামের মৃত আ. রহমানের ছেলে আনোয়ারুল কবির খান মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগে জানা যায়, শিবচর উপজেলার জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের আওতায় দাদাভাই উপ-শহর প্রকল্পে দ্বিতীয়খন্ড ইউনিয়নের ঠেঙ্গামারা মৌজার ৪৬ নং খতিয়ানের ৩২ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হয়।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ওই জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৯ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে চিঠি দেয়। জেলা প্রশাসকের পক্ষে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা আল মামুন গত ১১ ডিসেম্বর মৃত আবদুর রহমান খানের মেজো ছেলে মৃত জুনু খানের নামে নোটিশ পাঠান।

যার নামে নোটিশ পাঠানো হলো সেই জুনু খান গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারিতে মারা যান। তার বাবা আবদুর রহমান খান ওরফে হাসমত আলী ২০০১ সালের ২২ জানুয়ারি মারা যান। অথচ মৃত আবদুর রহমান খান ওরফে হাসমত আলীর নামে ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরি করা হয়। যদিও ওই সময় পরিচয়পত্রের প্রচলন শুরু হয়নি। কিন্তু ১৮ বছর পর সেই আবদুর রহমানকে জীবিত করলেন ভূমি কর্মকর্তা ও তার স্ত্রী।

একই সঙ্গে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে দেয়া চিঠি গোপন করে দ্বিতীয়খন্ড ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদ বেপারী তার স্ত্রী রাবেয়ার নামে ওই টাকা উত্তোলনের আবেদন করেন।

অভিযোগকারী আনোয়ারুল কবির বলেন, আমার বাবা আবদুর রহমান খান ওরফে হাসমত আলী ২০০১ সালের ২২ জানুয়ারি এবং মেজো ভাই রেজাউল কবির খান ওরফে জুনু খান গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি মারা যান। কিন্তু আবেদনকারী রাবেয়া আমার বাবার ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরি করেন। তার পরিচয়পত্রে অজ্ঞাত এক বৃদ্ধের ছবি সংযুক্ত করা হয় এবং আমার বাবা তাকে টাকা উত্তোলনের ক্ষমতা দিয়েছেন বলে কাগজপত্রে উল্লেখ করা হয়। এর সঙ্গে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ও তার অফিসের এক কর্মচারী জড়িত। আমি এই চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছি।

তিনি আরও বলেন, বাবা ও মেজো ভাইয়ের মৃত্যুর পর ওই জমির মালিক আমরা দুই ভাই ও চার বোন। কিন্তু সবাইকে বাদ দিয়ে আমার মৃত বাবাকে জীবিত দেখিয়ে কাগজ তৈরি করা হয়। ভুয়া ক্ষমতা প্রদানকারী বৃদ্ধের প্রকৃত নাম ঠিকানা জানা যায়নি। আমার ধারণা- এই বৃদ্ধ ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদ কিংবা তার স্ত্রীর আত্মীয়।

ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সার্ভেয়ার মহিউদ্দিন বলেন, শিবচর উপজেলার ঠেঙ্গামারা মৌজার দাদাভাই উপ-শহরের জমির ক্ষতিপূরণের বিল উত্তোলনের জন্য কালকিনী উপজেলার রাবেয়া নামের এক নারী আবেদন করেন। তার আবেদনপত্রটি আমার কাছে বেশ সন্দেহজনক মনে হয়। পরে বিভিন্ন সূত্র থেকে যাচাই-বাছাই করে দেখি আবেদনপত্রটি প্রকৃতপক্ষে ভুয়া। পরে জমির প্রকৃত মালিকদের ঠিকানা সন্ধান করে তাদের কাছে খবর দেয়া হয়।

এ ব্যাপারে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, এ নিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত