ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

অবহেলায় পড়ে আছে হেমায়েত বাহিনী স্মৃতি যাদুঘর

  গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০১৯, ১৫:১১

অবহেলায় পড়ে আছে হেমায়েত বাহিনী স্মৃতি যাদুঘর

১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম গেরিলা বাহিনী হেমায়েত উদ্দিন বাহিনী। ৫ বছর আগে এ বাহিনীর স্মৃতি রক্ষার্থে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার টুপুরিয়া গ্রামে তৈরি করা হয় হেমায়েত বাহিনীর স্মৃতি যাদুঘর।

কিন্তু তৈরির পর এই জাদুঘরের কোনো খোঁজ খবর নেয়া হয়নি। জেলার একমাত্র যাদুঘরটি পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়। ফলে মক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর অবদানের কথা জানতে পারছে না নতুন প্রজন্ম।

নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমিক হিসাবে গড়ে তুলতে দ্রুত হেমায়েত বাহিনী স্মুতি যাদুঘরটিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ করে সাজিয়ে তোলায় উদ্যোগে নিবে প্রশাসন এমনটাই চাওয়া মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয়দের।

টুপুরিয়া গ্রামের গিয়ে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে দেশে পালিয়ে আসেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষক হেমায়েত উদ্দিন। এরপর ৮ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প নিয়ে গড়ে তোলেন হেমায়েত বাহিনী।

সেখানে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরকেও দেয়া হয় প্রশিক্ষণ। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বেশ কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধেও অবতীর্ন হন হেমায়েত বাহিনী।

যে কারণে মুক্তিযুদ্ধে হেমায়েত বাহিনীর অবদান ধরে রাখতে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার টুপুরিয়া গ্রামে তৈরি করা হয় হেমায়েত বাহিনীর স্মৃতি যাদুঘর। ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর এ স্মৃতি যাদুঘরটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কিন্তু উদ্ধোধনের ৫ বছর পার হলেও অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে যাদুঘরটি। একটি টেবিল আর কয়েকটি চেয়ার ছাড়া স্মৃতি সংরক্ষণে নেয়া হয়নি কোন উদ্যোগ। পাশের রুমে মুক্তিযোদ্ধারের ছবি থাকলেও তা মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল।

রুমে ধূলো আর ময়লার স্তর জমে রয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলে ভিতরে পানি পড়ে। এদিকে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভবনটিও পড়েছে হুমকির মুখে।

মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান বলেন, হেমায়েত বাহিনীর প্রধান হেমায়েত উদ্দিন বীর বিক্রমের চেষ্ঠায় এখানে একটি যাদুঘর হলেও মুক্তিযুদ্ধোর কোন স্মৃতি চিহ্ন নেই। এমনকি যাদুঘরটি রক্ষণাবেক্ষণেরও কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

ফলে মুক্তিযুদ্ধের সময় হেমায়েত বাহিনীর বীরত্বগাথা ও সাহসীকতার কোন কথাই জানতে পারছে না নতুন প্রজন্ম। তাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে হলে যাদুঘরটিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি চিহ্ন সংরক্ষণ করতে হবে।

টুপুরিয়া গ্রামের আ: সালাম মোল্লা বলেন, হেমায়েত বাহিনীর স্মৃতি যাদুঘরের ভবনটি এখন জড়াজীর্ণ। সামান্য বৃষ্টি হলে দেয়াল চুয়ে পানি পড়ে। এমনিক নেই কোন সীমানা প্রাচীর। ফলে যাদুঘরটি একেবারে অরক্ষিত হয়ে পড়ে থাকে।

যাদু ঘরটিতে ঘুরতে আসা রহিম মাহমুদ ও আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি স্কুলে পড়াশোনা করি। টুপুরিয়া গ্রামে একটি যাদুঘর আছে এটা শুনে আমরা এখানে যাদুঘরটি দেখতে আসছি। কিন্তু এখানে এসে মুক্তিযুদ্ধের কোন স্মৃতিচিহ্নই দেখতে পেলাম না শুধু একটি টেবিল ও কয়েকটি চেয়ার ছাড়া।

সজীব বিশ্বাস বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি শুধু বড়দের মুখে শুনেছি। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি এখানে দেখতে এসে আমি পুরোটাই হতাশ। মুক্তিযুদ্ধের কোন স্মৃতি চিহ্নই নেই। তাহলে আমরা নতুন প্রজন্ম কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের কথা জানতে পারব এটাই আমার প্রশ্ন।

এব্যাপারে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার বলেন, টুপুরিয়া গ্রামে হেমায়েত বাহিনীর স্মৃতি যাদুঘরটি অবহেলায় রয়েছে এটি আপনার কাছ থেকে জানতে পারলাম। ইতিমধ্যে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

যাতে ভবনটির রক্ষণাবেক্ষণসহ মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়। আশা করি পরবর্তীতে দর্শনার্থীরা এখান থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি দেখতে ও জানতে পারবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/টিপিবি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত