ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

সরকারের নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

‘ফুলপ্যান্ট পরলে লুঙ্গি পরা যাবে না, এই চিন্তা যেন না থাকে’

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৩ জুন ২০১৯, ১৭:৪৫

‘ফুলপ্যান্ট পরলে লুঙ্গি পরা যাবে না, এই চিন্তা যেন না থাকে’

কোনো কাজই ছোট নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একবার ফুলপ্যান্ট পরলে আর লুঙ্গি পরা যাবে না বা গামছা পরে মাঠে যাওয়া যাবে না। এই চিন্তা মাথায় যেন না থাকে। রোববার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে বিসিএস প্রশাসন একাডেমি মিলনায়তনে ১১০, ১১১ ও ১১২ তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সরকারের নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি অর্থ জনগণের অর্থ। এটা মাথায় রাখতে হবে। আজকে বেতন-ভাতা যা কিছু পাচ্ছি আমার দেশের কৃষক, শ্রমিক মেহনতি মানুষ, তাদেরই উপার্জিত অর্থ। তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করা, তাদের উন্নতি করা এটাই আমাদের কর্তব্য।

তিনি বলেন, আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা শিক্ষায় সকলকে উৎসাহিত করছি। কিন্তু কোনো কাজ যে ছোট কাজ না, কোনো কাজ যে খাটো কাজ না এটা মাথায় রাখতে হবে। কারণ লেখাপড়া শিখলেই আবার আমি ধান কাটতে পারবো না, এটা ঠিক না।

সম্প্রতিকালে বোরো মৌসুমে গ্রামে-গঞ্জে ধানকাটা শ্রমিকের সংকটের ব্যাপারটি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি তখন ছাত্রলীগকে হুকুম দিলাম। তোমরা যার যার এলাকায় নেমে যাও। সবাই মাঠে গিয়ে ধান কাটো। কিন্তু এটা শিখতে হবে একজন কৃষককে সঙ্গে নিতে হবে। যিনি ধান কাটতে পারেন, কারণ ধান কাটারও একটা নিয়ম আছে। তারা ঠিকই নেমে গেছে এবং ছবি তুলেছে। আমি বলেছি, সব জায়গায় দেখতে চাই। হ্যাঁ, তারা নেমেছে।

তিনি আরো বলেন, কোনো কাজ খাটো কাজ না, ছোট কাজ না। এই বোধটা যেন মানুষের মধ্যে আসে। সেকথাটাও মানুষকে বোঝাতে হবে, বলতে হবে। কারণ একবার ফুলপ্যান্ট পরলে আর লুঙ্গি পরা যাবে না বা গামছা পরে মাঠে যাওয়া যাবে না। এই চিন্তা মাথায় যেন না থাকে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি তো বলেছিলাম, দরকার হলে আমি নিজে যাবো। সত্যি কথা বলতে কি? আমার চোখের অপারেশন না হলে আমি ঠিকই চলে যেতাম। কারণ আমি দেখাতে চাই, আমার কাছে সব কাজ সমান। খাদ্য যারা উৎপাদন করবে তারা আমার কাছে ছোট হবে কেন?

মাঠ প্রশাসনে যারা কাজ করেন, সেখানকার মানুষের সমস্যাগুলি খুঁজে বের করে সমাধানের পথ খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, তারা যেন ন্যায়বিচার পায় সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। শুধু গতানুগতিকভাবে দেশ চালালে চলবে না। দেশকে আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন করে একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত চলতে হবে। কারণ আমরা ঘোষণা দিয়েছি, প্রত্যেকটি গ্রামের মানুষ শহরের সুযোগ পাবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা থেকে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কী কী করছি, সেগুলো বলতে চাই না। কিন্তু এইটুকুই চাই, দেশটাকে যদি আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি তাহলে সকলের সুযোগ সুবিধা আরও বাড়বে। কারণ আমি সবসময় চেয়েছি যারা কাজ করবে, তাদের একটা জব স্যাটিসফেকশন থাকবে। তাদের বেতন-ভাতা চলাচল থেকে সব কিছুর ব্যবস্থা করার দায়িত্ব আমাদের। সেজন্য আমাদের সীমিত সাধ্যের মধ্যেও যতদূর পেরেছি, সুযোগটা সৃষ্টি করে দিয়েছি।

জাতির পিতা তিনি আমাদের সরকারি কর্মচারীদের কিভাবে চলতে হবে ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন তার কয়েকটি লাইন তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, মনে রেখো, এটা স্বাধীন দেশ। এটা ব্রিটিশ কলোনি নয়। পাকিস্তানের কলোনি নয়। যে লোককে দেখবে তার চেহারাটা তোমার বাবার মতো, তোমার ভাইয়ের মতো, উনার পরিশ্রমের পয়সায় তোমরা মাইনে পাও। ওরাই সম্মান বেশি পাবে। কারণ ওরা নিজেরা কামাই করে খায়।

অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এইচ এম আশিকুর রহমান, জন প্রশাসন সচিব ফয়েজ আহমেদ বক্তৃতা করেন। প্রতিষ্ঠানের রেক্টর কাজী রওশন আরা আখতার স্বাগত বক্তৃতা করেন।

১১০, ১১১ ও ১১২ তম কোর্সের রেক্টর পদক জয়ী তিন শিক্ষার্থী মাহবুব উল্লাহ মজুমদার, রঞ্জন চন্দ্র দে এবং মাবরুল আহমেদ অনিক অনুষ্ঠানে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মঝে সনদ বিতরণ করেন এবং তাদের সঙ্গে পৃথক ফটো সেশনে অংশগ্রহণ করেন। পরে তিনি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন।

ডিপি/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত