ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

শিশুবান্ধব হয়ে উঠছে পাবনার প্রাইমারি স্কুলগুলো

  পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০১৯, ০৮:৫৩

শিশুবান্ধব হয়ে উঠছে পাবনার প্রাইমারি স্কুলগুলো

শিশু শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত উন্নয়ন ও মেরামতের টাকায় রঙিন করে তোলা হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। তার ছোঁয়া লেগেছে পাবনার চাটমোহরের স্কুলে- স্কুলে। স্কুলের প্রবেশ মুখ ও দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে বাংলা-ইংরেজি বর্ণ। শ্রেণিকক্ষ ও ভবনের চারপাশে জাতীয় ফলমুল, দেশ-প্রকৃতি, ছোটদের মিনা কার্টুনসহ নানা মণীষীর ছবি। এমনিভাবেই রঙ-তুলির আঁচড়ে স্কুলগুলোকে শিশুবান্ধব করার সব রকম চেষ্টা চলছে।

উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এমন উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে ১০টি স্কুল রঙিন সাজে সেজেছে। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন ছোট বেলা থেকেই শিল্পমনা মানুষ হিসেবে গড়ে উঠছে, জানছে দেশ-প্রকৃতি সমন্ধে। আরও বেশি করে স্কুলগামী হচ্ছে তারা।

সরেজমিন বিভন্ন স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়গুলোকে রঙিন করে সাজানো হয়েছে। রঙ তুলির ছোঁয়ায় বিদ্যালয়গুলো এখন যে কারো দৃষ্টি কাড়ে। সব স্কুলের আঙিনায় স্থাপন করা হয়েছে শহীদ মিনার। অনেক বিদ্যালয়ের দেয়াল যেন রংধনুর সাতরঙে রাঙানো। মাঝে মাঝে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের আঁকা ছবি। শিক্ষার্থীরা স্কুলে প্রবেশের আগে এসব ছবির মণীষীদের সাথে পরিচিত হচ্ছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, চারুশিল্পীরা দেয়ালে দেয়ালে এঁকেছেন ছোটদের মিনা কার্টুন, ফুল-ফল ও পশু-পাখির ছবি। এছাড়া প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে আঁকা হয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্র ও গুণীজনের প্রতিকৃতি। লেখা আছে নানা ধরণের নীতিবাক্য। কোথাও পাশেই দাঁড়িয়ে গভীর মনযোগ সহকারে ছবি আঁকা দেখছে শিশু শিক্ষার্থীরা। এখন পর্যন্ত উপজেলার ১০টি স্কুলে এমন আঁকিবুঁকির কাজ করা হয়েছে। সরকারি স্লিপফান্ডের টাকা ব্যয়ে পর্যায়ক্রমে উপজেলার ১৫৩টি স্কুলে এমন কাজ করা হবে বলে শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানান, শিশুদের শৈশবকে আক্ষরিক অর্থেই সাতরঙা করতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানসম্মত ও দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রায় ৬৪ হাজার বিদ্যালয়কে ঢেলে সাজানো হবে।

সূত্রটি একটি সরকারি জরিপের উল্লেখ করে বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বিভিন্ন কেজি স্কুল এবং নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুকে ভর্তি করাতে চান অভিভাবকরা। কেবল নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে। মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা এসব বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আগ্রাহী হচ্ছে না। সব স্তরের শিক্ষার্থী টানতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ, ভবন সংস্কার, প্রাচীর তৈরি, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিদ্যালয়ের ভেতর-বাহিরে চাকচিক্য করে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

পাবনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মনিটরিং অফিসার মুরাদ হোসেন জানান, প্রতিটি প্রাইমারি স্কুল পিইডিপি -৪ এর আওতায় স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (স্লিপ) অংশ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে এক লাখ টাকা পর্যন্ত পাচ্ছে। তাছাড়া ছোট খাট মেরামতের জন্য অনেক বিদ্যালয় বরাদ্দ পেয়েছে। এ টাকায় জেলাগুলোর বিদ্যালয় শিশুবান্ধব করার কাজ চলছে। শিশুরা যেন আনন্দঘন পরিবেশে লেখাপড়া করতে পারে সে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে স্কুলগুলোর ভিতরে বাইরে সংস্কার চলছে, রঙ- তুলির কাজ চলছে। বিবর্ণ, মলিন স্কুলগুলো হয়ে উঠছে ঝকঝকে।

চাটমোহরের দোলং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লতিকা সুলতানা জানান, সুন্দর মন, সুস্থ পরিবেশ খুব বেশি প্রয়োজন। স্কুলের পরিবেশ সুন্দর হওয়ায় পড়াশোনায় মনযোগী হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এতে শিশুরা বেশি করে স্কুলমুখী হচ্ছে। শুধু তাই নয়, আনন্দের সাথে পড়াশোনা করছে তারা। এমন উদ্যোগে শিক্ষকরাও উদ্দীপ্ত।

বিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষার্থী মীম, আশা, সুমাইয়া বলছিল, ‘এখন স্কুলে এসে আর বিরক্ত লাগে না। সাজানো গেছোনো বিদ্যালয়, এটা আমাদের জন্য খুব আনন্দের। একই সাথে এ স্কুলে লেখাপড়া করতে পেরে আমরা খুব খুশি। এখন স্যাররা যতক্ষণ ছুটি না দেয় ততক্ষন আমরা স্কুলে থাকি। স্কুল সুন্দর হয়েছে তাই আর স্কুল পালাতে ইচ্ছে করে না বলে তারা জানায়। যে দু’ চারজন যায় তারা ক্ষুধা লেগে যাওয়ার জন্য যায়।’

স্কুলকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলায় স্কুলের প্রতি শিশুদের আগ্রহ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন কয়েক জন অভিভাবক। আবদুস সাত্তার নামে এক অভিভাবক জানালেন, কিছুদিন আগেও দোলং গ্রামের প্রাইমারি স্কুলটি ছিল ভাঙাচোরা। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি পড়ত শ্রেণিকক্ষে। আর এ কারণে ছেলে-মেয়েরা স্কুলে না যেতে নানা ফন্দি আঁটত। এখন স্কুলটি নানান রঙে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। সাজানো হয়েছে গোটা স্কুল প্রাঙ্গণ। আর এতে শিশুরা নিজ উদ্যোগেই স্কুলে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আশরাফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের শিল্পমনা মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে এবং স্কুলমুখী করতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্কুলে এমন পরিবেশ পেলে শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসে আনন্দ পাবে। পড়াশোনায় মনযোগী হবে এবং ঝড়ে পড়া রোধ হবে।

পাবনার সহকারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তৌহিদুর রহমান জানান, পাবনায় সরকারি অর্থায়নে স্কুলগুলোকে স্মার্ট স্কুলে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। স্কুলগুলোতে ভিন্নতাও আসছে বলে তিনি জানান। স্কুলগুলোকে দৃষ্টিনন্দন করতে দেয়ালে নানা রঙের রং তুলি, ছবি ও কার্টুন আঁকা হয়েছে। যাতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা স্কুলমুখী হয়। শিশু শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের প্রজেক্টরের মাধ্যমে পাঠ দান করানো হচ্ছে। এতে শিশুদের এক ঘেয়েমি বা বন্দীদশা থাকছে না। স্কুলগুলো হয়ে উঠেছে শিশুদের জন্য আনন্দমুখর।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার খন্দকার মনসুর রহমান জানান, বিদ্যালয়কে রঙিন করলে একদিক থেকে যেমন বিদ্যালয়টি দৃষ্টি নন্দন হচ্ছে তেমনি শিশুদেরকেও আকর্ষণ করছে। বিদ্যালয়ে এখন শিশুরা আসে আনন্দ চিত্তে। তিনি জানান, স্বপ্নের কোনো শেষ নেই। স্বপ্নের মতো করে রঙিন সাজে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সাজানো হচ্ছে। এতে ব্যাপকভাবে সাড়া দিচ্ছে শিশুরা। অল্প দিনের মধ্যেই হয়তো পুরো জেলার স্কুলগুলো এভাবে সৌন্দর্যমন্ডিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত