ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

রেজিস্ট্রি অফিসের জালিয়াতি: ভুয়া উপস্থিতি দেখিয়ে হুন্ডি কাজলের জমি বিক্রি!

  ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০১৯, ১৬:৫৫

ভুয়া উপস্থিতি দেখিয়ে হুন্ডি কাজলের জমি বিক্রি!

হাজার হাজার লগ্নিকারী তাকে খুঁজছে। ৮ মামলায় তার বিরুদ্ধে ১৪ বছরের সাজা হয়েছে। আলোচিত সেই হুন্ডি কাজলের জমি জলিয়াতির মাধ্যমে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। হুন্ডি কাজল বর্তমানে ভারতে পালিয়ে থাকলেও কোটচাঁদপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে হুন্ডি কাজলের ভুয়া উপস্থিতি দেখিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে লাখ লাখ টাকার সম্পত্তি।

ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান এ ভাবে জমি রেজিস্ট্রির প্রক্রিয়াকে অবৈধ ও দুর্নীতি বলে আখ্যা দিয়েছেন। অন্যদিকে কোটচাঁদপুরের সাবরেজিস্ট্রার অঞ্জনা রানী বলেছেন, হুন্ডি কাজলকে আমি না চিনলেও শনাক্তকারীর মাধ্যমে তিনি আমার দপ্তরে এসে জমি রেজিস্ট্রি করে গেছেন।

পুলিশের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও হাজারো লগ্নিকারীর চোখ ফাঁকি দিয়ে হুন্ডি কাজলের জমি রেজিস্ট্রির বিষয়টি কোটচাঁদপুরসহ আশপাশের জেলার মানুষ মেনে নিতে পারছে না। তাদের ভাষ্য, মোটা অংকের ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে এই জালিয়াতিপূর্ণ রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি দুই দলিলের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে সাত বিঘা জমি বিক্রি করেছেন হুন্ডি কাজল। এই জমি তিনি বিক্রি করেছেন কোটচাঁদপুর শহরের পরশ মনি গার্মেণ্টসের মালিক আবুল কালাম আজাদ ও তার স্ত্রী তাছলিমা আজাদের কাছে।

স্থানীয় বলাবাড়িয়া ইটভাটার ৫০ লাখ টাকার মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ১৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। যার দলিল নং ১৫৯। অপর দলিলের গ্রহীতা কোটচাঁদপুর এলাঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খান ও তার স্ত্রী মেহরিন আক্তার কিনেছেন ১৯৯.৫০ শতক জমি। যার দলিল নং ১৬০। জমির মূল্য দেখানো হয়েছে ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

জালিয়াতির মাধ্যমে এভাবে হুন্ডি কাজলের জমি বিক্রির খবর ফাঁস হয়ে পড়লে এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। একজন দণ্ডপ্রাপ্ত ফেরারি আসামি কীভাবে জমি রেজিস্ট্রি করতে পারে তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া উইং তদন্ত করে দেখেছে হুন্ডি কাজল কোনোভাবেই কোটচাঁদপুর শহরে আসেননি। ঝিনাইদহের পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ভারতে পালিয়ে থাকা হুন্ডি কাজলের দেশে আসার খবরটি মিথ্যা বলে মনে করেন।

অভিযোগ উঠেছে, কোটচাঁদপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক বদর উদ্দীনের মাধ্যমে দলিল তৈরি করে সীমান্তবর্তী চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের হুন্ডি কাজলের এক আত্মীয় বাড়ি থেকে দলিলে হুন্ডি কাজলের সাক্ষর করে আনা হয়। সাবরেজিস্ট্রার অঞ্জনা রানী ওই দলিল রেজিস্ট্রি করতে অসম্মতি জানালে তাকে হুমকি দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করে আজাদ ও মিজান গং।

ওই সূত্রের দাবি, বিষয়টি তদন্ত করলে প্রকৃত রহস্য উন্মচিত হবে। কোটচাঁদপুর রেজিস্ট্রি অফিসের সব দলিল লেখক একবাক্যে স্বীকার করেছেন হুন্ডি কাজল সেখানে আসেননি। জমি গ্রহীতারা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেও মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। তবে তারা এই জালিয়াতির সাথে জড়িতদের শাস্তি ও দলিল বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শরিফুন্নেছা মিকি বলেন, এ ধরণের দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি কোটচাঁদপুরে এসে জমি রেজিস্ট্রি করবে এটা বিশ্বাস করার মতো ঘটনা না। বিষয়টি নিয়ে আমি ধোয়াশার মধ্যে আছি। কোটচাঁদপুর পৌর মেয়র জাহিদুল ইসলাম বলেন, হাজার হাজার মানুষের সাথে এমন প্রতারণা করে হুন্ডি কাজল আবার কোটচাঁদপুর আসবে এটা বিশ্বাস করি না।

কোটচাঁদপুর থানার বিদায়ী ওসি কাজী কামাল হোসেন সে সময় গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছিলেন হুন্ডি কাজল কোটচাঁদপুরে জমি রেজিস্ট্রি করতে এসেছিলো এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি বলেন, সাবরেজিস্ট্রার একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি। তিনি হুন্ডি কাজলের মতো একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি তার দপ্তরে উপস্থিত হয়ে থাকলে জানালেই ভাল করতেন।

সাবরেজিস্ট্রার অঞ্জনা রানী জানান, আদালত থেকে যেহেতু এ ধরণের আসামির জমি বিক্রির বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা আমাদেরকে দেয়া হয়নি সেহেতু আমি কোনো কিছুই খতিয়ে দেখিনি। তাছাড়া তাকে আমি চিনি না।

তিনি বলেন ফারুক আহমেদ কাজল প্রকাশ্যে রেজিস্ট্রির দিনে আমার দপ্তরে এসে শনাক্তকারীর মাধ্যমে তিনি জমি রেজিস্ট্রি করে গেছেন।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, হুন্ডি কাজল সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। এ অবস্থায় তিনি তার কোনো সম্পদ বিক্রি করতে পারেন না। যদি করেনও তবে তা হবে অবৈধ ও দুর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার দায়ী থাকবেন।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য ১৯৯৫ সালের প্রথম দিকে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে ফারুক আহমেদ কাজল দুইশ’ এজেন্ট নিয়ে হুন্ডি ব্যবসা শুরু করেন। প্রথম দিকে লাখে ১০ হাজার ও ১৯৯৯ সালে লাখে ১৫ হাজার টাকা লাভ দেয়ার ঘোষণা দিলে ঝিনাইদহসহ ২০ জেলার মানুষ এই মরণ ব্যবসায় লগ্নি করে। ২০০০ সালের দিকে হুন্ডি ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। টাকা হারিয়ে লগ্নিকারীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। সেই থেকে হুন্ডির ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে মানুষ। লগ্নিকারীরা টাকা না পেলেও হুন্ডি কাজলের ৮ মামলায় ১৪ বছরের সাজা হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত