ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

দেবী দুর্গাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তত ১৯৫ মণ্ডপ

  ধামরাই প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৮:২০

দেবী দুর্গাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তত ১৯৫ মণ্ডপ

হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবকে স্বাগত জানাতে প্রস্ততির শেষ পর্যায়ের কাজ করছেন ঢাকার ধামরাইয়ের পূজারীরা। এবছর ধামরাই পৌরসভায় ৪০টি ও ১৬টি ইউনিয়নে প্রায় ১৫৫টি স্থায়ী ও অস্থায়ী মন্দিরে হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা।

৩ অক্টোবর মহাপঞ্চমীকে সামনে রেখে এরইমধ্যে বাঁশ ও খড় দিয়ে অবকাঠামো তৈরির পর মাটির প্রলেপ দিয়ে মূর্তির মাতৃ অবয়ব দেয়ার কাজ শেষ হয়েছে। কোথাও কোথাও প্রতিমায় রং ও কাপড় পড়িয়ে দেবী দুর্গাকে আরো জীবন্ত করেও তোলা হয়েছে। মূর্তি প্রস্তুতের কাজ শেষ হবে এ সপ্তাহের মধ্যেই।

ধামরাই পৌর এলাকার বসাক বাড়ির ডা. অজিত কুমার বসাক জানান, পূজার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। এরইমধ্যে মূর্তি তৈরির কাজ শেষ হয়েছে, চলছে রঙ করা ও কাপড় পড়ানো। পূজার দুই একদিন আগেই দেবীর গায়ে রং তুলির আচরের মধ্য দিয়ে আরো জীবন্ত করে তোলার কাজও শেষ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, দেশের ও সমাজের মঙ্গল ও সমৃদ্ধি কামনায় এবারও শান্তিপূর্ণভাবে ও উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব শেষ হবে বলে আশা করছি।

উপজেলার কায়েতপাড়ার ঐতিহ্যবাহী রায় বাড়ির সদস্য অ্যাডভোকেট শ্যামল রায় জানান, কায়েত পাড়ার রায় বাড়িতে প্রায় ৪শ’ বছর ধরে দুর্গা পূজা আয়োজন করা হয়।

তিনি বলেন, সার্বজনীন এই পূজায় সকলের সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে পালন করে থাকি আমরা।

এদিকে প্রায় ২শ’ বছর ধরে দুর্গোৎসব পালন করেন উপজেলা সদরের বণিক পরিবার। এই পরিবারের সদস্য ও পূজারী প্রকাশ বণিক বলেন, এবছরও যথাযথভাবে পূজার কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিমা গড়ে তোলা হয়েছে, এ সপ্তাহে শুকানো শেষ হলে রং লাগানোর কাজ শুরু হবে।

ধামরাইয়ের প্রতিমা শিল্পী সুকান্ত বণিক বলেন, শিল্পীরা সূক্ষ্ম কাজগুলো করে শেষ করছে। এ সপ্তাহে কাজ শেষ হয়ে যাবে। পূজাকে ঘিরে ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

তিনি আরো বলেন, ঢাকার নিকটবর্তী ধামরাইয়ে প্রতিবছরই দেড় শতাধিক পূজা হয়। এছাড়াও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শতবছরের ইতিহাস দেখতে বছরের পুরো সময়জুড়েই বিদেশী পর্যটকরা ভ্রমণে আসেন। অথচ শহরে ঢোকার প্রধান তিনটি সড়কই (ঢুলিভিটা-ধামরাই বাজার, থানা রোড-ধামরাই বাজার, ইসলামপুর-ধামরাই বাজার) সরু আয়তনের। আর উৎসবের দিনে এসব সড়কে বসে হাট, মেলা। ফলে চলার পথটি আরো সরু হয়ে যায়। একটু বৃষ্টি পড়লেই রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ধামরাইয়ের ঐতিহ্য আরো ছড়িয়ে দিতে এসব যোগাযোগ ব্যবস্থার আরো উন্নয়ন করা প্রয়োজন।

উপজেলার মাধব মন্দির ও ধামরাই উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নন্দ গোপাল সেন বলেন, ৩ অক্টোবর মহাপঞ্চমীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।

একক উপজেলায় এতো বেশি পরিমাণ পূজা ধামরাইতেই হয় দাবি করে তিনি বলেন, চলতি বছর উপজেলায় প্রায় ১৯৫ টি মন্দিরে শারদীয় দুর্গোৎসবের জন্যে প্রতিমা নির্মাণ করা হয়েছে।

নন্দ গোপাল সেন আরো বলেন, প্রশাসন থেকেও সার্বিক নিরাপত্তার জন্যে ইতোমধ্যে পূজারী ও নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে।

ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে প্রশাসনিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পূজারীদের সাথে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে, সে মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এবছর উপজেলায় সবমিলিয়ে ১৯৫টি মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে পৌর এলাকায় ৪০টি মন্দিরে পূজা হবে। এসব মন্দিরগুলোতে ঢাকা, ঢাকার বাইরের প্রচুর ভক্তবৃন্দ এসে থাকেন, ফলে এসব মন্দিরের নিরাপত্তায় কড়া ব্যবস্থা নেয় হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারো শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উৎসব সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তিনি আরো বলেন, পূজা মণ্ডপ ও মন্দিরের নিরাপত্তায় পুলিশ কর্মকর্তাদের টীম ইউনিয়নভিত্তিক করে দেয়া হয়েছে। তারা এরইমধ্যে সব মণ্ডপ পরিদর্শন করছেন। এছাড়া পূজা চলাকালীন সময়ে নিরাপত্তার জন্যে আনসার, ভিডিপির একটি করে দল সবসময় নিয়োজিত থাকবে।

এ বিষয়ে ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামিউল ইসলাম বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। এই পূজায় নিরাপত্তা ও পূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, পূজায় সরকারি অনুদান আসা মাত্রই সকল মন্দিরকে তা হস্তান্তর করা হবে।

ধামরাই পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, পৌর সভার ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারো শান্তিপূর্ণভাবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত করতে পৌরসভার পক্ষ থেকে সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি বছর পৌর এলাকায় ৪০টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। এবিষয়ে সার্বিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মূর্তি বিসর্জনের জায়গা ঠিক করা হয়েছে। সেখানে সংস্কার করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, কায়েত পাড়ার বড় মন্দির ও মাধববাড়ীর ঘাট সংস্কার করে সেখানকার লাইটিংসহ ডেকোরেশনের কাজ করতে পৌরসভার স্টাফদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সকল ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত