ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

ভিক্ষা করছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত মেকআপম্যান

  বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৮:৫৯

ভিক্ষা করছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত মেকআপম্যান

তার হাতের শৈল্পিক ছোঁয়ায় তারকা হয়েছেন ঢাকাই সিনেমার অনেকেই। শাবানা, ববিতা, অঞ্জু ঘোষ কিংবা মৌসুমীর মতো সুদর্শনা নায়িকাদের সাজিয়ে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতেন তিনি। তার নাম কাজী হারুন। যিনি ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা ‘বেদের মেয়ে জোসনা’র মেকআপম্যান।

শুধু তাই-ই নয়, শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান হিসেবে তিনি অর্জন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। বরেণ্য এই শিল্পী এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ভিক্ষা করে চালাচ্ছেন সংসার।

স্ত্রী মহুয়া আক্তারকে নিয়ে কাজী হারুন স্ত্রী মহুয়া রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীতে থাকেন। সংসার চালাতে স্ত্রী অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। তিন বাড়িতে কাজ করে শুধু ঘর ভাড়াটা জোগাড় করতে পারেন স্ত্রী। এর পর খাবারের জোগান দিতে কাজী হারুন ভিক্ষা করেন পাড়ায় পাড়ায়।

জানা গেছে, শারীরিক অসুস্থতার কারণে কোনো ধরনের কাজ করতে পারেন না কাজী হারুন। অন্ন সংস্থানের পাশাপাশি চিকিৎসার খরচ জোগাতে তাকে আজ পথে নামতে হয়েছে।

তার স্ত্রী মহুয়া আক্তার বলেন, বিয়ের পর থেকে আমাদের অবস্থা ভালোই ছিল। সংসারে অভাব ছিল না। কিন্তু ২০০৯ সালে সে ব্রেইন স্ট্রোক করে। এর পর থেকেই দিন বদলে যায় আমাদের। জমানো টাকাপয়সা যা ছিল তা দিয়ে ওর চিকিৎসা করিয়েছি। সেটিও একসময় ফুরিয়ে যায়। শুরু হয় আমাদের কষ্টের দিন।

তিনি বলেন, স্ট্রোকের পর তার শরীরের ডান পাশ অকেজো হয়ে যায়। অসুস্থ হওয়ার কারণে আর কাজ করতে পারে না। সেই থেকে চলচ্চিত্রের কেউ এসে খবরও নেননি কখনও। উপায়ন্তুর না দেখে আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করা শুরু করি। তাতেও সংসার চলে না দেখে ২০১১ সাল থেকে সে ভিক্ষায় নামে।

অভাব-অনটনের গল্প এখানেই থেমে থাকেনি কাজী হারুনের। মেয়ের বিয়ের খরচ জোগাতে ২০১০ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার হিসেবে পাওয়া সোনার মেডেলটিও বিক্রি করে দেন তিনি। ওই মেডেলে এক ভরি স্বর্ণ ছিল। মাত্র আট হাজার টাকায় সেটি বিক্রি করেছেন। পিতলের কোনো দাম না থাকায় পুরস্কারটি বিক্রি করতে পারেননি। তবে অনেকের দ্বারে সেটি নিয়ে ঘুরেছেন। যদি কিছু টাকা দেয় কেউ। কিন্তু তাও জোটেনি কপালে। এর পর চাপা অভিমানে সেই পিতলের পুরস্কারটিও তিনি ফেলে দিয়েছেন।

এ মুহূর্তে জীবন ধারণ প্রসঙ্গে কাজী হারুনের স্ত্রী বলেন, বস্তিতে দেড় হাজার টাকা দিয়ে একটি ছোট রুমে ভাড়া থাকি। তিনটি বাড়িতে কাজ করে ৫০০ করে ১৫০০ টাকা পাই আমি। সেটি দিয়ে সেই রুম ভাড়া দিই। আর ও ভিক্ষা করে দিনে ২০০/৩০০ টাকা পায়। সেই টাকা দিয়ে বাজার আর ওর ওষুধ কিনি। ও যেদিন অসুস্থ থাকে, সেদিন বেশি সমস্যা হয়। আমি ছাড়া তাকে দেখার কেউ নেই। কাজে গেলে বাসায় একা ফেলে রেখে যেতে হয়। তা ছাড়া সে বের না হলে খাবারও জোটে না, আয় বন্ধ।

চলচ্চিত্রের মানুষের কাছে কোনো চাওয়া-পাওয়া আছে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে মহুয়া আক্তার বলেন, চলচ্চিত্রের কারও কাছে আমাদের কোনো কিছু চাওয়ার নেই। সেও চায় না। শুধু প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাই। মানুষের কাছে শুনি প্রধানমন্ত্রী কত শিল্পীকে সাহায্য করেছেন। উনার কাছে আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য তেমন কেউ নেই। তাই আপনাদের মাধ্যমে যদি উনার দুরাবস্থার কথা পৌঁছে তা হলে হয়তো একটা ব্যবস্থা হবে।

তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী চলচ্চিত্রে কাজ করত। এখন পথে পথে ভিক্ষে করে। অনেকে এটা নিয়ে তাচ্ছিল্যও করেন। এতে তার কষ্ট আরও বাড়ে। প্রধানমন্ত্রী যেন আমাদের কষ্ট লাঘব করেন। উনার কাছে এটিই চাওয়া।

উল্লেখ্য, কাজী হারুন ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছাড়াও ‘অন্য জীবন’, ‘শঙ্খমালা’, ‘গোলাপী এখন ঢাকা’, ‘জীবন সংসার’সহ শতাধিক ছবির মেকআপম্যান হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হৃদয় থেকে হৃদয়’ ছবির জন্য সেরা মেকআপম্যান হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি।

বাংলাদেশ জার্নাল/

সূত্র: যুগান্তর

  • সর্বশেষ
  • পঠিত