ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২১ মিনিট আগে
শিরোনাম

করোনায় নামাজ নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুসলিম দেশগুলো

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২০, ১১:২৪  
আপডেট :
 ১১ এপ্রিল ২০২০, ১১:২৮

করোনায় নামাজ নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুসলিম দেশগুলো

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ঠেকাতে ফতোয়া জারি করে সরকারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতেও দেখা যাচ্ছে একই চিত্র। যদিও মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটি নেয় সৌদি আরব, মক্কায় ওমরাহ বন্ধ করে দেয়ার মধ্য দিয়ে।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় নানা দেশে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কিছু সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রে আরোপ করা হয়েছে বিধিনিষেধ। অফিস, দোকানপাট, রেস্টুরেন্ট, ক্লাব, শপিংমল থেকে শুরু করে বড় জমায়েত হয় এমন সব কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেই বিধিনিষেধের আওতায় পড়েছে মসজিদের জামায়াতে নামাজ আদায়। ইউরোপ-আমেরিকায় তো বটেই আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার দেশগুলোও বাদ পড়ছে না।

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়া থেকে শুরু করে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলো নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। কোথাও কোথাও সরকার নয়, বরং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এসব বিধি নিষেধের দায়িত্ব নিয়েছে।

আফগানিস্তান- নামাজের জন্য মসজিদে না যেতে ফতোয়া জারি করেছেন আফগানিস্তানের ধর্মীয় নেতারা, এমনটি জানিয়েছে দেশটির অন্যতম টিভি চ্যানেল টোলো নিউজ। দেশটির উলামা হাই কমিশন এই ফতোয়া জারি করেছে। কমিশন এর কারণ হিসেবে বলেছে, আফগানিস্তান নতুন করোনা ভাইরাসটি থেকে পুরোপুরি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জমায়েত বন্ধ থাকবে।

এর আগে, দেশটির হজ ও ধর্ম মন্ত্রণালয় মসজিদে জুমা ও অন্য নামাজের জামাতে লোকজনের জমায়েত নিষিদ্ধ করে। মন্ত্রণালয় ও কমিশনের সদস্যরা সবাইকে ঘরে নামাজ পড়ার আহ্বান জানান। ধর্মীয় নেতারা বলেন, কোরআন ও হাদিসের আলোকে স্বাস্থ্যগত দিক চিন্তা করে এ সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে।

এমনকি ফতোয়ায় ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে মৃতের সৎকারেও কম মানুষের উপস্থিতিতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার করার কথা বলা হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়া- সবচেয়ে বড় মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়া। সেখানে সরকার সরাসরি কোন নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। কিন্তু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এরইমধ্যে সেই কাজটি করছে। দেশটির সবচেয়ে বড় ইসলামি সংগঠন নাহদলাতুল উলামা করোনার বিস্তার রোধে ফতোয়া জারি করেছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম টিভি ওয়ানে সংস্থাটির র পরিচালক ড. সাইদ আকিল সিরোজ বলেছেন, করোনার বিস্তার ঠেকাতে আমরা সব মুসলিমের কাছে এ আহ্বান জানাই, আপনারা জুমা ও তারাবির নামাজ এবং ঈদ উল ফিতরের সব উদযাপন ঘরে বসে করুন।

কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা পেতে নাহদলাতুল উলামার ফতোয়া কাউন্সিল কিছু ধর্মীয় নির্দেশনা প্রকাশ করেছে। সেসব রীতিমালা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সেখানে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতদের দাফন কেমন করে করা হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত বলা রয়েছে।

ভারত- মার্চে ভারতের একেকটি রাজ্য সরকার এক এক করে করোনা মোকাবেলায় সামাজিক জমায়েতের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করতে থাকে।

দিল্লিতে বিধিনিষেধ আরোপের আগে নিজামুদ্দিন এলাকায় তাবলিগ জামাতের ধর্মীয় জমায়েত অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অংশ নেন প্রায় দুই হাজার তাবলিগ অনুসারী। এদের মধ্যে অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হন এবং মারাও যান।

দিল্লি সরকার ১৬ মার্চ প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে ৫০ জনের বেশি মানুষ জড়ো হওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, যা পরবর্তীতে কমিয়ে পাঁচজনে নামিয়ে আনা হয়। মোটামুটি সারাদেশেই একসঙ্গে পাঁচজনের বেশি জমায়েত হতে পারবেন না বলে নিয়ম করে দেয়া হয়েছে। আলাদা করে না হলেও এই বিধিনিষেধ ধর্মীয় জমায়েতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। জনগণ এই বিধিনিষেধ মানছেন কি না তা দেখতে রাস্তায় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী রয়েছে।

পাকিস্তান- পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মসজিদে জড়ো হওয়ার সংখ্যা সীমিত করার কথা বলেছেন। দেশটির ইসলামিক আদর্শ কাউন্সিল সবাইকে বাসায় থাকার পরামর্শ দিয়েছে। ঘরেই নামাজ আদায়ের কথা বলেছে। কোন কোন প্রদেশ নিজ দায়িত্বে কড়াকড়ি আরোপ করেছে।

যেমন, দক্ষিণাঞ্চলের সিন্ধ প্রদেশে গেল শুক্রবার জুমার নামাজে মানুষের আসা ঠেকাতে দুপুর বারটা থেকে তিনটা পর্যন্ত পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এ সময় রাস্তায় যে কাউকে দেখলেই গ্রেপ্তার করা হয়।

পাঞ্জাব প্রদেশে, যেখানে দেশটির ২২ কোটি জনগণের ৬০ ভাগের বাস, বড় শহরগুলোর মোড়ে মোড়ে চেকপয়েন্ট বসানো হয়েছে, যেন মানুষ জড়ো হতে না পারেন। তারপরও সেখানে মানুষ কথা শুনছেন না। অনেক ধর্মীয় নেতা এখনো লকডাউনের বিপক্ষে কথা বলে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ- বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের দ্রুত সংক্রমণ ছড়ানো রুখতে মুসল্লিদের ঘরে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ধর্ম মন্ত্রণালয় জরুরি এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায়। এছাড়াও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদেরও ঘরে উপাসনার নির্দেশ দেয়া হয়। শুধু মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন আর খাদেমরা মসজিদে নামাজ আদায় করবেন। বাইরের মুসল্লিরা কেউ মসজিদে জামাতে অংশ নিতে পারবেন না।

সংখ্যার হিসেবে বলা হয়েছে, জুম্মার নামাজে সর্বোচ্চ ১০ জন এবং দৈনিক পাঁচওয়াক্ত নামাজে সর্বোচ্চ পাঁচজন উপস্থিত হতে পারবেন। কেউ এই নির্দেশ অমান্য করে মসজিদে নামাজ পড়লে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ব্যবস্থা নেবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

এছাড়া অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদেরও উপাসনালয়ে সমবেত না হয়ে নিজ নিজ বাসায় উপাসনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে আরো আগে থেকে

ইরানে কোভিড-১৯ ভাইরাসটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর সতর্ক হয়ে গেছে মধ্যপ্রাচ্য। তারা নানাভাবে বড় সমাবেশ বা জমায়েত বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে শুরু করে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটি নেয় সৌদি আরব, মক্কায় ওমরাহ বন্ধ করে দেয়ার মধ্য দিয়ে। একে একে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোও উদ্যোগ নিতে শুরু করে।

কুয়েতে আজানের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন এনে ঘরে বসে নামাজ আদায়ের কথা বলা হয়। এমন বিরল ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ঐতিহাসিক উদাহরণকে অনুসরণ করা হয়েছে বলে বলা হয়।

ইরাকের গ্র্যান্ড আয়াতোল্লাহ আলি আল-সিস্তানি এ বিষয়ে বলেন, পেশাদার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ধর্মীয় দায়িত্ব। তুরস্কের ধর্ম বিভাগের প্রেসিডেন্ট আলি এরবাস মহামারী থেকে বাঁচতে মহানবীর শিক্ষাকে অনুসরণ করার কথা বলেন।

মিশর রমজান মাসে যে কোন ধর্মীয় সমাবেশ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। এমনকি ইফতার পার্টি বা জমায়েত করা যাবে না বলে জানিয়েছে তাদের ধর্ম মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত