ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

সংবাদ প্রতিদিনের খবর ব্লগার

সানিউর-ফারুককে হত্যার পরিকল্পনা ছিল আনসারুল্লাহর!

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:৫৮  
আপডেট :
 ২২ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:০৭

সানিউর-ফারুককে হত্যার পরিকল্পনা ছিল আনসারুল্লাহর!

মুক্তমনা ব্লগার হত্যার পাশাপাশি জেলবন্দি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের জঙ্গিনেতাদের ছাড়িয়ে নেয়ার পরিকল্পনা ছিল পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া দুই আল কায়দা জঙ্গি রিয়াজুল এবং সামশাদের। এমন খবরই জানিয়েছে ভারতীয় বাংলা গণমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিন।

ভারতীয় গণমাধ্যমটির দাবি, বাংলাদেশি ব্লগার ফারুক সাদিকের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেয়া ব্লগার সানিউর রহমানকে হত্যার প্রস্তুতি ছিল তাদের। কলকাতা স্টেশন থেকে ধরা পড়া দুই জঙ্গিকে জেরা করে বুধবার এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ-এর তদন্তকারীরা। মৌলবাদীদের ভয়ে বেশ কয়েকমাস আগে কলকাতার লাগোয়া শহরতলিতে আশ্রয় নিয়েছে সানিউর।

গ্রেপ্তারকৃতদের কাছে উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ টাকা কোথা থেকে এল, কে বা কারা তা সরবরাহ করেছিল তাও খতিয়ে দেখছে ভারতীয় পুলিশ। কলকাতা পুলিশের দাবি, ওই দুই জঙ্গির পেছনে পুরোপুরি মদদ ছিল বিদেশি শক্তির। আল কায়দার সংশ্লিষ্টতাও ধারণা করছেন তদন্তকারীরা। পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি অস্বীকৃত মাদ্রাসার সঙ্গেও তাদের একাধিকবার বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের কথা হয়েছিল বলে খবর।

পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যমটি জানায়, র‌্যাবের তৎপরতার কারণে সীমান্তপারের শহরকে বেছে নিয়ে মডিউল গুছিয়ে নেওয়ার কাজ করছিল এই জঙ্গিরা। তদন্তকারীরা সামশাদের সঙ্গে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের যোগাযোগ থাকার কথাও দাবি করছেন। সে পাকিস্তানে থেকে প্রশিক্ষণও পেয়েছে বলে ধারণা তাদের।

এসব তথ্য জানানো হয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকেও। যোগাযোগ করা হয়েছে র‌্যাবের সঙ্গেও। বৈধ ভিসা-পাসপোর্ট নিয়ে দেড় বছর আগে ভারতে ঢোকে সামশাদ মিঞা ও রিয়াজুল ইসলাম। ভারতে ঢোকার পর হায়দরাবাদের একটি কসাইখানায় কাজ নেয় তারা।

কলকাতার গোয়েন্দাদের দাবি, দু’জনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল দক্ষিণ ভারতের চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ ও বেঙ্গালুরু, উত্তর-পূর্ব ভারতের রাচি, পাটনা এবং কলকাতায় নজর রাখার জন্য।

শুধু নজর রাখাই নয়, সম্ভাব্য টার্গেট ঠিক করা থেকে বিস্ফোরক তৈরির জন্য রাসায়নিক জোগাড়ের কাজও দেওয়া হয় তাদের। এই ছয় এলাকার বেশ কিছু রাসায়নিকের দোকানে গিয়ে সামশাদ ও রিয়াজুল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, পটাশিয়াম ক্লোরেট-সহ কয়েকটি রাসায়নিকের সন্ধান করে।

তদন্তকারীদের উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমটি জানায়, কলকাতাকে ঘাঁটি বানিয়ে সেখান থেকে স্লিপার সেল তৈরি ও সেখানের নিয়োগের কাজের দায়িত্বও দেয়া হয় ওই দু’জনকে।

এই সব দায়িত্বই দিয়েছিল জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)। এই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আল কায়দার সরাসরি সংযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ।

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সামশাদ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। তার এই পারদর্শিতাকেও কাজে লাগাতে চেয়েছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)। পরিকল্পনা অনুযায়ী হায়দরাবাদে গিয়ে হার্ডডিস্কের প্রশিক্ষণও নেয় সে। তাদের মূল লক্ষ্যই ছিল জেএমবি ও এটিবির যে সদস্যরা জেলে রয়েছে তাদের বের করা। তার জন্যই এরা অস্ত্র সংগ্রহের কাজ করছিল।

সেই ঘটনার তদন্তে নেমেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে বসিরহাটে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকা মনোতোষ দে। এই মনোতোষের বিষয়ে তৈরি হয়েছে একাধিক সন্দেহ। কারণ এই ব্যক্তি বসিরহাটের বাসিন্দাই নন। জানা গেছে, তার আসল বাড়ি ইছাপুর নামক স্থানে। বুধবার সকালে বসিরহাটের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভবানীপুরের ভাড়া বাড়িতে গিয়ে দেখা মেলে মনোতোষের স্ত্রী ও শাশুড়ির।

যদিও তারা জানিয়েছেন, এই ঘটনার বিষয়ে তারা কিছুই জানতেন না। এমনকী, মনোতোষের আসল বাড়ি কোথায় তা নিয়েও কোনো উত্তর দিতে পারেননি তারা। দেড় বছর আগে বিয়ে করে তারা বসিরহাটে থাকতে শুরু করেন। কিন্তু কেন দেড়বছর পরেও মনোতোষ সম্পর্কে কোনো তথ্য জানতে পারেননি স্ত্রী ও শাশুড়ি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আদৌ এই তথ্য কতটা বিশ্বাসযোগ্য তা নিয়ে বিভ্রান্ত তদন্তকারীরা।

সূত্রের খবর, ধর্মতলা চত্বরে একটি চুরির ঘটনার তদন্তে নেমে ‘ব্রেক-থ্রু’ পায় পুলিশ। তার আগ পর্যন্ত পুরো ঘটনাটি সম্পর্কে পুরো অন্ধকারে ছিল সেখানকার পুলিশ। প্রথমে পুলিশ জানতে পারে দেড় বছর আগে ভারতে ঢুকেছে আল কায়দার দুই সদস্য। সেই মতো বিভিন্ন জায়গায় জাল বিছোতে শুরু করে পুলিশ। সামান্য চুরি থেকে খুনের ঘটনায় রাজ্যের প্রায় সব অপরাধের সঙ্গে যুক্তদের বিষয়ে খোঁজ নিতে শুরু করে পুলিশ। সেই মতোই ধর্মতলা চত্বরের চুরির ঘটনায় রিয়াজুল নামে এক ব্যক্তির গ্রেপ্তারি পু্‌লিশকে অনেক বড় মাইলেজ দেয়। তদন্তে নেমে পুলিশ যখন রিয়াজুলের এরাজ্যে কোনও ঠিকানার সন্ধান পায়নি তখনই সন্দেহ আরও বাড়তে থাকে। এরপর দফায় দফায় জেরা করে তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করে পুলিশ।

পুজোর আগেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তাঁদের কাছে খবর আসে যে, বাংলাদেশি আল কায়দার জঙ্গিরা যাতায়াত করছে কলকাতায়। পুজা এবং অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের সময় ঝুঁকি না নিয়ে শহরের প্রত্যেকটি জায়গায় কড়া নজরদারি শুরু হয়।

গত মাসের শেষ দিক থেকে কলকাতার প্রত্যেকটি হোটেল, স্টেশন, বাসস্ট্যান্ডে তল্লাশি চালানো হচ্ছিল। চার দিন আগে মোবাইলের সূত্র ধরে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, বসিরহাটের মনোতোষ দে তাদের অস্ত্র সরবরাহ করতে আসছে। সেই তথ্য অনুসারেই তাকে ধরার জন্য পরিকল্পনা করে পুলিশ।

/এসএস/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত