ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

ভারতে ফের ‘খেলা হবে’ ডাক দিলেন মমতা

  ময়ুখ বসু, কলকাতা থেকে

প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০২১, ১৯:২৭

ভারতে ফের ‘খেলা হবে’ ডাক দিলেন মমতা

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একুশের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ফের খেলা হওয়ার ডাক দিলেন। আগামী ১৬ আগস্টকে খেলা দিবস ঘোষণা করে সেদিন থেকেই দেশজুড়ে বিজেপি বিরোধীতার ঢেউ উত্তাল করার আহ্বান জানালেন তিনি।

মূলত ফের একটা খেলা হবে বলে ডাক দিয়ে মমতা বুঝিয়ে দিলেন, একুশের নির্বাচনে বাংলায় ‘খেলা হবে’ ডাক দিয়ে বাংলা থেকে বিজেপিকে হঠানো হয়েছে।এবারে খেলা হবে ডাক দিয়ে দেশ থেকে বিজেপিকে তাড়ানো হবে। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, একুশের বিধানসভা ভোটের সময় খেলা একটা হয়েছে, খেলা আবার হবে। যত দিন বিজেপিকে বিদায় করতে না পারি দেশের প্রতিটি রাজ্যে রাজ্যে খেলা হবে। সমস্ত জায়গায় খেলা হবে।

রাজনৈতিক মহলের মতে, একুশের মঞ্চ থেকেই যাবতীয় জল্পনাকে সত্যি করেই বিজেপি বিরোধী জোটের বার্তা দিয়ে দিলেন মমতা। আর এই জোটের ক্ষেত্রে মমতা যে কংগ্রেস ও এনসিপিকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন সেটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্যে বারবার উঠে এসেছে চিদম্বরম ও শরদ পাওয়ারের কথা। যার মাধ্যমে তিনি কংগ্রেস ও এনসিপিকে বিজেপি বিরোধীতার ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে দেন।

মূলত মমতা জানিয়ে দিলেন, আন্দোলনের বীজ তৃণমূল বপন করে দিলেও কংগ্রেস কিংবা এনসিপিকে মোদী হঠানোর লড়াইতে মুখ্য ভূমিকায় উঠে আসতে হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মমতা অন্যের হাতে ছড়ি দিয়ে চাবুক পেটানোর কৌশল নিতে চাইছেন।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছেন, লড়তে প্রস্তুত বাংলা। আমি আজ দেশের সমস্ত রাজ্যকে বলবো একজোট হয়ে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হন। জোট গড়ে তুলুন। এটাই ঠিক সময়। যত দেরি করবেন, ততই সময় নষ্ট হবে। আমি দিল্লি যাচ্ছি। শরদজি, চিদম্বরমে বলবো আপনারা বৈঠক ডাকলে আমরাও যাবো। আসলে মমতার এই কথাতেই স্পষ্ট, তিনি বিরোধীদের মধ্যে মোদী বিরোধী অবস্থানকে শক্ত করে দিতে চাইছেন।

এদিন যতোদূর সম্ভব বিজেপিকে কড়া আক্রমণ করেন মমতা। বিজেপির কারণে দেশে আজ বিরোধী শক্তি যে এককাট্টা হতে পারছে না সেই অভিযোগও তোলেন তিনি। মমতা বলেন, মানুষকে ওরা শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। মানুষকে নানাভাবে হেনস্থা করছে ওরা। আমি চিদম্বরমজি, শরদ পওয়ারজির সঙ্গে কথা বলতে পারছি না। ফোন ট্যাপ করছে। গরিব মানুষকে টাকা দেওয়ার বদলে আঁড়ি পাততে টাকা খরচ করা হচ্ছে। আপনার আমার সবার ফোন ট্যাপ করা হচ্ছে। তবে ২০২৪ সালের লক্ষ্যে বিজেপির সমস্ত বাধাকে অতিক্রম করে তিনি যে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত সেকথাও জানিয়ে দেন। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে যেভাবে বাংলার মাটিতে ভয়ডরহীনভাবে বিজেপির মোকাবিলা তিনি করেছেন সেই স্মৃতিকে উস্কে দিয়ে দেশের বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে উজ্জিবীত হওয়ার বার্তাও দেন তিনি।

একটা রাজনৈতিক দলের পক্ষে যতোগুলি খারাপের সংজ্ঞা তার সবই বিজেপির বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে একুশের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন শ্লোগান তুললেন ‘পেগাসাস পেগাসাস নরেন্দ্র মোদীর নাভিশ্বাস’। মূলত এই শ্লোগানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি বিরোধী আন্দোলনের নয়া মাত্রা যোগ করতে চাইলেন।

পেগাসাস কান্ডের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার যে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক মহল মোবাইলে আড়ি পেতে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধাচারণ করেছে সেই বিষয়টিকেও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, দেশজুড়ে বিভিন্ন মহলে এই আড়ি পাতা ভুলবেন না। এই পেগাসাস কাণ্ডকে থিতিয়ে যেতে দেবেন না শরদজি, চিদম্বরমজি। আপনাদের কিন্ত ছেড়ে দেয়নি। আড়ি পেতে নির্বাচন জিতছে। ভাবছে সারা জীবন এই ভাবেই ভোট পাবে। কিন্ত সেটা আর হতে দেবেন না।

রাজনৈতিক মহলের মতে, একুশের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা কার্যত একঢিলে অনেকগুলো পাখি মারলেন। দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো যে বিজেপি ভেঙে গুড়িয়ে দিতে চাইছে সেই অভিযোগও সোজাসাপ্টা তোলেন তিনি। মমতা বলেন, গণতন্ত্রে বিশ্বাস থাকলে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো ভেঙে গুঁড়িয়ে দিত না বিজেপি। নির্বাচন, সংবাদমাধ্যম এবং বিচার বিভাগ, গণতন্ত্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোই ভেঙে দিয়েছে। গণতন্ত্রের বদলে দেশ জুড়ে স্পাইগিরি চালাচ্ছে বিজেপি।

এদিন মমতা কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান তুলে বলেন, পেগাসাস হটাও দেশ বাঁচাও। মূলত পেগাসাস কান্ডকে হাতিয়ার করে এবার মোদী বিরোধীতার ক্ষেত্রে ঝড়ো হাওয়া তোলার ডাক দেন। একইসঙ্গে এদিন বিজেপি যে দেশের জন্য ভয়ঙ্কর বিপদ সেই বার্তাও দেন তিনি।

মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিজেপি দেশের সর্বনাশ করে চলেছে সমানে। বিজেপি যে স্বৈরাচারী দল, বিজেপি যে মিথ্যাবাদীর দল, বিজেপি যে হিংসা ছরানোর দল সেই সমস্ত অভিযোগ তুলেই এবারে বিজেপিকে কড়া আক্রমণ করলেন তিনি।

মমতা বলেন, বিজেপি দেশে স্বৈরাশাসন চায়। বাংলায় ভোট পরবর্তী হিংসা না হলেও মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে তারা। তিনি দাবি করেন, মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট ভিত্তিহীন। সবটাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ভোটের আগে যে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিলো তা স্রেফ বাস্তবায়িত করা হচ্ছে। বিজেপির পার্টি অফিসের মতো কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। মমতা অভিযোগ করেন, মানবাধিকার কাকে বলে ওরা জানে না। ফোন ট্যাপ করলে, স্পাইগিরি করলেই হয় না। সব এজেন্সির কনট্রাক্টর হয়ে বসে রয়েছে। অথচ কাজের কাজ করার বেলায় লবডঙ্কা।

বাংলাদেশ জার্নাল- ওআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত