ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

মসজিদ হামলার পর যে কারণে আলোচিত এই নারী

মসজিদ হামলার পর যে কারণে আলোচিত এই নারী

নিউজিল্যান্ডের মসজিসে সন্ত্রাসী হামলার পর যে মানুষটি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছেন তিনি আর কেউ নন, সে দেশের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা অরডার্ন। তিনি এই হামলাকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো চেষ্টাই করেননি। বরং সাহসের সঙ্গে হামলার শিকার দেশে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাদের জন্য মন থেকেই জানিয়েছেন সহমর্মীতার বাণী। কেবল শোক জানিয়েই নিজের দায়িত্ব শেষ করেননি এই মহিয়সী নারী। বরং দ্রুত নানা কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তার সরকার। তাই আজ গোটা বিশ্বে শান্তির পথে নেতৃত্ব দেয়ার দূত হিসেবে আলোচিত হচ্ছেন জাসিন্ডা অরডার্ন। অথচ দিন কয়েক আগেই বিশ্বের খুব বেশি মানুষ কিন্তু তার নামটি পর্যন্ত জানতো না।

জন্ম ও পড়াশোনা

১৯৮০ সালে জন্ম নেয়া অরডার্নের বেড়ে ওঠা মুরুপাড়া নামে নিউজিল্যান্ডের মাউরি আদিবাসী অধ্যুষিত একটি ছোট্ট শহরে। যেখানে শিশুদের পায়ে দেয়ার মতো জুতা ছিল না, এমনকি দুপুরে তারা খাবারও পেত না। শহরবাসীর দুর্দশাই তাকে রাজনীতিতে উৎসাহিত করে। উচ্চ মাধ্যমিক শেষে অরডার্ন ভর্তি হন যোগাযোগ বিভাগে। তার আগে মাত্র ১৭ বছর বয়সেই যুক্ত হন নিউজিল্যান্ডের লেবার পার্টির রাজনীতিতে।

বিশ্ব রাজনীতির পাঠ

স্নাতক শেষ করে জাসিন্ডা অরডার্ন নিউজিল্যান্ডের লেবার পার্টির একজন সংসদ সদস্যের অধীনে গবেষক হিসেবে কাজ করেন। ২০০৫ সালে পাড়ি জমান ব্রিটেনে। আড়াই বছর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের মন্ত্রীসভার দপ্তরে চাকরি করেন। ২০০৭ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব সোশ্যালিস্ট ওয়েলথের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘুরে বেড়িয়েছেন আলজেরিয়া, চীন, ভারত, ইসরায়েল, জর্ডার্ন ও লেবানন।

রাজনীতির পথ চলা

২০০৮ সালে অরডার্ন লেবার পার্টির সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ১৩,০০০ ভোটে হেরে যান। কিন্তু দেশটির সংবিধানিক নিয়মে তিনি সংসদে যাওয়ার সুযোগ পান। মাত্র ২৮ বছর বয়সে দেশের কনিষ্ঠতম রাজনীতিবিদ হিসেবে জায়গা করে নেন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে।

‘জেসিডামেনিয়া’

২০১৭ সালে লেবার পার্টির উপ প্রধান নির্বাচিত হন অরডার্ন। নির্বাচনের দু’মাস আগে দলটির প্রধান পদত্যাগ করলে সেই চাপও পড়ে তার কাঁধে। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারে নেমে তরুণদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান অরডার্ন। তাঁকে নিয়ে এসময় দেশটিতে জনপ্রিয়তার যে ঢেউ উঠে তা ‘জেসিডামেনিয়া’নামে পরিচিতি পেয়েছিলো।

বিশ্বের সবচেয়ে কমবয়সী নারী প্রধানমন্ত্রী

মাত্র দু’মাসের নেতৃত্বে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই দলকে বিজয়ী করে আনেন অরডার্ন৷ স্বাভাবিকভাবেই দলের নেতা হিসেবে ২০১৭ সালে ৩৮ বছর বয়সে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। নিউজিল্যান্ডের ১৫০ বছরের ইতিহাসেও তিনি সবচেয়ে কম বয়সী সরকার প্রধান।

প্রভাবশালী নারী

জাসিন্ডা অরডার্ন সমকামী বিবাহের একজন বড় সমর্থক। একই সঙ্গে তিনি জলবায়ু পরিবর্তন এবং শিশু দারিদ্র্যের বিরুদ্ধেও উচ্চকণ্ঠ ৷ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডের সরকার হবে সহানুভূতিশীল। মোদ্দা কথা মানবতার পক্ষে কথা বলতে কখনই পিছপা হন না তিনি। আর এ কারণে ২০১৮ সালে ‘ফোর্বসের পাওয়ার উইমেনের’তালিকায় জায়গা করে নেন তিনি৷। আছেন টাইম ম্যাগাজিনের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকাতেও।

সন্তান জন্ম

টিভি উপস্থাপক ক্লার্ক গেফোর্ডকে বেছে নিয়েছেন তিনি জীবন সঙ্গী হিসেবে। আর ২০১৮ সালের ২২ জুন এই দম্পতির ঘর আলো করে এসছে ফুটফুটে শিশু। এজন্য মাত্র ছয় সপ্তাহের মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়েছিলেন অরডার্ন। পকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর পর তিনিই হলেন বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি সরকার প্রধানের দায়িত্বকালে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।

সন্তান কোলে জাতিসংঘে

বিশ্বে প্রথমবার যে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের কক্ষে সন্তান নিয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন তিনি আর কেউ নন, এই জাসিন্ডা অরডার্ন। গত বছর নেলসন ম্যান্ডেলা পিস সামিটে অংশ নিয়ে বিশ্ব গণমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হয়েছেন এই নারী। বক্তৃতা দেয়ার সময় তার সন্তান ছিল জীবনসঙ্গী ক্লার্ক গেফোর্ডের কোলে।

ক্রাইস্টচার্চ হামলা ও জাসিন্ডা

ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যার পর জেসিন্ডা অরডার্নকে নতুন করে চেনেছে বিশ্ববাসী। এই ঘটনার দায়ে অভিযুক্তকে কোনো কার্পণ্য না করেই সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। দ্রুত দেশের অস্ত্র আইন পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন যা ১১ এপ্রিলের মধ্যে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। সে দেশের মুসলমানদের সম্প্রদায়কে অভয় দিয়ে তিনি এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, নিউজিল্যান্ডে তাদের কখনই আতঙ্কিত হতে হবে না। এই দেশে তারা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবেই থাকতে পারবে এবং নিশ্চিন্তে পালন করতে পারবে তাদের সকল ধর্মীয় অনুশাসন। শুধু ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত হননি এই নারী, ইতিমধ্যে নানা পদক্ষেপও গ্রহণ করেছেন। শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের সরকারি রেডিও ও টেলিভিশনে প্রথমবারের মত আজান দেয়া হবে বলে জানা গেছে।

হিজাবে অরডার্ন

শুক্রবারের হামলার পর জাসিন্ডার মুখমণ্ডল জুড়ে শোকের ছায়া। প্রতিদিনই ছুটে যাচ্ছেন নিহতদের স্বজনদের কাছে। তাদের জড়িয়ে ধরছেন, সমব্যাথী হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, বদলে ফেলেছেন নিজের সাজপোশাকও। ক্রাইস্টচার্চের ঘটনার পর মুসলমানদের সাথে একত্মতার প্রকাশ করতে তিনি একাধিক দিন হিজাব পরে বেরিয়েছেন।

সংসদে আরবি ভাষা

হামলার পর গত মঙ্গলবার পার্লামেন্টে বক্তব্য দেন অরডার্ন৷ বক্তব্যের শুরুতেই সবাইকে ইসলামি রীতি মেনে‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে সম্বোন্ধন করেন তিনি। এসময় তিনি জানান, ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলাকারীর নাম তিনি কখনও মুখে আনবেন না। একই সঙ্গে তিনি দেশের জনগণকেও তার নাম মুখে না আনার আহ্বান জানান তিনি।

সূত্র: ডয়েচেভেলে

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত