ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

খ্রিস্টান না বানানোর প্রতিশ্রুতি দিতে হবে এনজিওদের

খ্রিস্টান না বানানোর প্রতিশ্রুতি দিতে হবে এনজিওদের
প্রতীকী ছবি

ভারত সরকার নির্দেশ দিয়েছে, যেসব এনজিও বিদেশ থেকে তহবিল পেয়ে থাকে তাদের কর্মীদের মুচলেকা দিয়ে জানাতে হবে যে তারা ধর্মান্তরিত করার ঘটনায় যুক্ত নন অথবা তাদের বিরুদ্ধে ওই ধরনের কোনও মামলা হয়নি। ভারতে বিদেশি সাহায্যপ্রাপ্ত এনজিওগুলোর কার্যকলাপে সরকার নানা বিধিনিষেধ আরোপ করছে গত বেশ কয়েক বছর ধরেই, আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই পদক্ষেপ তাতে সবশেষ সংযোজন।

শাসক দল বিজেপির নেতারা যুক্তি দিচ্ছেন, কার্যক্রমের আড়ালে বহু এনজিও জোর করে বা লোভ দেখিয়ে লোকজনকে ধর্মান্তরিত করছে বলেই এই মুচলেকা জরুরি - কিন্তু ভারতের বহু এনজিও-ই এই সিদ্ধান্তে প্রবলভাবে হতাশ। খবর বিবিসি বাংলার।

বস্তুত ভারতে বিদেশি সাহায্যপ্রাপ্ত এনজিওগুলোর কার্যকলাপে ও বাইরে থেকে অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা কড়াকড়ি আরোপ শুরু হয়েছে পাঁচ বছর আগে নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার সময় থেকেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশে বলা হচ্ছে, এই এনজিওগুলোর কর্মীরা যে কখনও ধর্মান্তরে জড়িত ছিলেন না বা ধর্মান্তরের মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন না সেটাও তাদের হলফনামা দিয়ে বলতে হবে - নইলে সেই এনজিওকে ভারতে কাজ করতে দেওয়া হবে না।

বিজেপি তথা আরএসএসের তাত্ত্বিক নেতা ও রাজ্যসভার এমপি রাকেশ সিনহা বলেন, দেশে এমন অন্তত ১২৮টি এনজিও আছে, যারা সরকারের এফসিআরএ-কে জানিয়েছে তাদের কার্যকলাপের সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। অথচ এদের ওয়েবসাইটে গেলেই আপনি দেখবেন এরা নিজেদের কেউ খ্রিষ্টান মানবতাবাদী, কেউ ক্যাথলিক বা কেউ জেসুইট দরদী বলে নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ভিশন, কার্টিস ইন্ডিয়া, নাগাল্যান্ড জেসুইটস এমন অজস্র এনজিওর নাম আমি এখনই করতে পারি। এই ভন্ডামিটা বন্ধ করার জন্যই এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি ছিলো।

ভারতে মিশনারি বা জেসুইট সংগঠনগুলো বিদেশি সাহায্যকে কাজে লাগিয়ে গরিব আদিবাসী বা দলিত সমাজকে জোর করে খ্রিষ্টান বানাতে চাইছে, বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের এই অভিযোগ অনেক দিনের। কিন্তু এখন সেটা বন্ধ করার নামে যেভাবে ঢালাওভাবে সব এনজিওর কার্যক্রমে রাশ টানার চেষ্টা হচ্ছে, তাতে ভারতে সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার এই গুরুত্বপূর্ণ অংশীদাররা রীতিমতো শঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ।

পশ্চিমবঙ্গের ‘পরিচিতি’ নামে এনজিওর কর্ণধার অঞ্চিতা ঘটক যেমন বলছেন, এতো খুব সাঙ্ঘাতিক জিনিস! এখনই আমাদের এত রকম আইনি নিয়মকানুন মেনে চলতে হয় যে বলার নয়, তার মধ্যে আবার একটা নতুন ঝামেলা আনা হল। আর কত ধরনের ডিক্ল্যারেশন আমাদের কাছ থেকে আদায় করবে? আমরা তো এ দেশেরই নাগরিক, স্বাধীনভাবে এখানে আমাদের তো কাজ করার অধিকার আছে, তাই না? কেন আমাদের মুচলেকা দিয়ে বারবার বলতে হবে অমুকটা করব না, তমুকটা করব না?

শুধু ধর্মান্তর নিয়ে মুচলেকাই নয়, ভারতে এনজিও কর্মীদের এখন থেকে এটাও বিবৃতি দিয়ে জানাতে হবে যে তারা বিদেশ থেকে পাওয়া তহবিল কোনভাবে তছরুপ করেননি এবং দেশদ্রোহমূলক কোনও বার্তাও প্রচার করছেন না। সরকারের তরফ থেকে এই ধরনের দাবি আসলে সেটা তাদের জন্য খুবই অবমাননাকর, বলছিলেন অঞ্চিতা ঘটক।

তার কথায়, বলছি না যে কোনও এনজিও-ই তহবিল অপব্যবহার করে না। কিন্তু বিদেশি অর্থ হলেই সেটার অপব্যবহার হতে পারে, আর ভারতের টাকা হলেই সেটার সঠিকভাবে ব্যবহার হবে - এটাই বা কেমন যুক্তি? আশির দশকে যখন এনজিওর হয়ে কাজ শুরু করি, তখন যে সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম তাদের হয়ে ফিল্ডে গিয়ে কখনও কখনও শুনতে হয়েছে তোমরা না কি লোকজনকে ধরে ধরে খ্রিষ্টান বানাও?

কিন্তু সে ধরনের কথা বলতেন তুলনায় অল্প শিক্ষিত বা কম পড়াশুনো করা লোকজন। আজ এত বছর বাদে এনজিওগুলোকে যখন সরকারের কাছ থেকেও একই ধরনের কথা শুনতে হয় তখন আর কী বলার থাকে! প্রবল আক্ষেপের সঙ্গে মন্তব্য করেন প্রবীণা ওই এনজিও কর্মী।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত