ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

শিশুদের বইপ্রেমী করে গড়ে তুলবেন যেভাবে

  জীবন শিল্প ডেস্ক

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৯:২৮

শিশুদের বইপ্রেমী করে গড়ে তুলবেন যেভাবে
প্রতীকী ছবি

স্মার্টফোন, কার্টুন আর মোবাইল গেমের কারণে অনেক শিশুর মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস হারিয়ে যেতে বসেছে। এরকম অভিযোগ আমরা প্রায়ই শুনি অভিভাবকদের কাছ থেকে।। বাচ্চাদের এই আসক্তি থেকে দূরে রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো তাকে বইপ্রেমী করে তোলা। আবার অনেক শিশু বইয়ের তুলনায় বেশি পছন্দ করে স্ক্রিনটাইম। যদি আপনার শিশুকে বইয়ের ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে পারেন এই সমস্যা আস্তে আস্তে মিটে যেতে পারে। একটি শিশু বই পড়ে তার চিন্তার পৃথিবী এবং সত্যিকারের পৃথিবী সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারে। আজকের লেখায় আমরা বলেছি এমন কিছু কথা যার মাধ্যমে আপনি আপনার শিশুর মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।

আসুন জেনে নিই শিশুর জ্ঞানকে বিকাশিত করতে হলে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলবেন যেভাবে-

সঠিক নিয়মে বই পড়ে শুনান

শিশুর বয়স আড়াই বছর পার হলে প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে কবিতা কিংবা গল্পের বই পড়ে শোনান। ঘুমানোর আগে কিছুক্ষণ শিশুকে বই পড়ে শোনালে তার চিন্তার পরিবর্তন হবে। আর এই অভ্যাসের কারণে আপনার শিশুর স্মার্টফোন বা কার্টুনের প্রতি আকর্ষণ কমে যাবে।

আনন্দের সঙ্গে বই পড়ার আগ্রহ বাড়ান

বইয়ের মধ্যে যখন শিশু আনন্দ খুঁজে পাবে, তখন সে নিজেই বইয়ের সঙ্গে লেগে থাকবে। এ জন্য তাকে বই পড়ায় আগ্রহী করে তুলতে হবে। একবার যদি তার বইপড়া অভ্যাসে পরিণত হয়, তাহলে আপনার সন্তান দিন দিন যত বড় হবে, ততই সে নিজে থেকে পড়তে চাইবে। বইয়ের সঙ্গে থাকায় তার চিন্তায় আসবে পরিবর্তন এবং সে কোনো খারাপ কাজের প্রতি আগ্রহী হবে না। ভালো কিছুর সঙ্গে থাকবে। তাই পল্লীকবি জসীমউদ্দীন বলেছেন, ‘বই জ্ঞানের প্রতীক, আনন্দের প্রতীক’।

জন্মদিন বা অন্য কোন উৎসবে বই উপহার দিন

যে কোনো আয়োজন বা উপলক্ষে শিশুকে উপহার হিসেবে বই দিন। নতুন বছর কিংবা জন্মদিনে বেশিরভাগ অভিভাবক খেলনা উপহার দেন। তবে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে চাইলে শিশুকে এসব দিনে বই উপহার দিন। এতে করে বইয়ের প্রতি ধীরে ধীরে তার মধ্যে ভালোবাসা তৈরি হবে। আগামী জন্মদিনে তাই আপনার শিশুকে বই উপহার দিন। পাশাপাশি অন্য কারোর জন্মদিনে গেলেও উপহার হিসেবে বই নিয়ে যান।

প্রতিমাসেই অল্প হলেও বই কিনুন

শুধুমাত্র বই কেনার জন্য প্রতিমাসে সামান্য হলেও আলাদা বাজেট রাখতে পারেন। আপনার শিশুকে খেলনার পাশাপাশি বই কিনে দিন। শিশুদের নিয়মিত বইয়ের দোকান, প্রকাশনীর বিক্রয়কেন্দ্র এসব জায়গায় নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে তাকে নিজের বই বাছাই করতে উৎসাহিত করুন। শিশুকে সঙ্গে নিয়ে বই কেনার অভ্যাসটি গড়ে তুলতে পারলে আপনার শিশুটি পাঠক হওয়ার পথে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। সপ্তাহের বন্ধের দিনগুলোতে আপনার সন্তানকে নিয়ে বিভিন্ন বইয়ের দোকান থেকে ঘুরে আসুন। শিশুর জন্য নতুন নতুন বই কিনে আনুন। এভাবে সে নতুন বইয়ের জন্য দারুণ উদ্যমে অপেক্ষা করবে। গড়ে উঠবে দারুণ এক অভ্যাস।

আপনার শিশুকে বই সংগ্রহ করতে শেখান

আপনি নিজে বই পড়লে সংগ্রহ করুন এবং শিশুকেও তার পড়ার বইয়ের তাকটি নির্দিষ্ট করে দিন। একসময় সে নিজেও তার ব্যক্তিগত লাইব্রেরি তৈরি করতে ইচ্ছুক হবে। তার রুমে একটি বইয়ের শেলফ রাখুন। কিংবা আপনার নিজের বইয়ের আলমারি থেকে তাকে কিছু জায়গা করে দিন। সে হয়তো সযত্নে তার পছন্দের বইগুলো তার জন্য রাখা জায়গাটিতে সাজিয়ে রাখবে। এভাবে আপনার শিশু বইয়ের যত্নে নেয়া শিখবে এবং বই পড়ার প্রতি আরো বেশি আগ্রহী হবে।

আপনি নিজেও পড়ুন

কাজের সময়ের বাইরে কিংবা কাজের ফাঁকে আপনি নিজেও বই পড়ুন। আর আমরা জানি, শিশুরা বড়দের যা করতে দেখে সেটাই অনুকরণ করতে পছন্দ করে। সে যদি বাসার বড়দের বই পড়তে দেখে, সে নিজেও বই পড়ায় আগ্রহী হবে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘বই পড়াকে যথার্থ হিসাবে যে সঙ্গী করে নিতে পারে, তার জীবনের দুঃখ, কষ্টের বোঝা অনেক কমে যায়।’

আজকের তরুণ শিক্ষার্থীরা যে পড়ার বইয়ে মনোযোগ রাখতে পারে না, তার মূল কারণ স্মার্টফোন, কার্টুন আর মোবাইল। তাদের বই পড়ার অভ্যাসের অভাব। এ অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য একদম ছেলেবেলা থেকেই বইয়ের প্রতি ভালবাসা গড়ে তুলতে হবে। আর এজন্য বাচ্চাদের অভিভাবক হিসেবে আপনার দায়িত্ব শুরু হয়ে যাবে আপনার শিশুটি কথা বলতে শুরু করার সাথে সাথেই। তাই আপনি বই সংগ্রহ করুন, বই পড়ুন এবং আপনার সন্তানকে বই পড়ায় আগ্রহী করে তুলুন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত