ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

মুজিববর্ষ হোক শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের স্বপ্ন পূরণের

মুজিববর্ষ হোক শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের স্বপ্ন পূরণের

শিক্ষা এমন একটি মহা শক্তি, যার মাধ্যমেই সারা পৃথিবী সভ্যতার আলোয় উদ্ভাসিত। যুগে যুগে দেশে দেশে শিক্ষকরাই সভ্যতার আলো ছড়িয়েছে নিপুণ হাতে। শিক্ষক জন্ম দেয় রাষ্ট্রনায়ক, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, অর্থনীতিবিদ, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, দার্শনিক, স্থপতি, আদর্শ সাংবাদিকসহ জাতির সূর্য সন্তানদের। তাই শিক্ষকের মর্যাদা যুগে যুগে সকল দেশে সকল জাতিতে সর্বোচ্চ। অথচ জাতিগড়ার নিপুণ সেই শিক্ষকই যখন ব্যক্তিজীবনে কোন স্বপ্নেই পৌঁছাতে পারে না, বৈষম্য, হতাশা, আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা, সামাজিক মর্যাদাহীন অবস্থায় অন্য এক কষ্টের মধ্যে জীবন কাটে। তখন ঐ শিক্ষকের দ্বারা জাতির কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা বাস্তবায়নে কতটুকু সম্ভব এ প্রশ্ন থেকে যায়।

আরো পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ, স্থগিত ১৭ জেলার চূড়ান্ত তালিকা

শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন না আনলে উন্নত জাতি গঠন সম্ভব নয়। শিক্ষাব্যবস্থায় দ্বৈত নীতি থাকার কারণে আজ শিক্ষকদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে বিভাজন এবং অসন্তোষ। শিক্ষাব্যবস্থায় ত্রিমুখী অবস্থা বিরাজমান থাকলে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। তাই বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক এবং ননএমপিও শিক্ষকদের জাতীয়করণের আওতায় এনে শিক্ষাব্যবস্থাকে গতিশীল করলে শিক্ষায় প্রাণ ফিরে পাবে।

আরো পড়ুন: প্রাথমিকে ছুটি ঘোষণা শনিবার!

বেসরকারি এমপিও শিক্ষক এবং ননএমপিও শিক্ষকদের জাতীয়করণের দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হয়। শিক্ষাব্যবস্থার জন্য এটি শুভলক্ষণ নয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে শিক্ষাব্যবস্থার অপূরণীয় ক্ষতি হবে। যা কারোর কাম্য হতে পারে না।

বর্তমানে প্রচলিত বিষয়বস্তু সর্বস্ব শিক্ষার বদলে কীভাবে জ্ঞান অর্জন করতে হয়, ব্যাখ্যা করতে হয়,কাজের মাধ্যমে শিখতে হবে। শ্রমের মর্যাদা, ন্যায়বোধ, দেশপ্রেম, মানবকল্যাণ, সততা, নিষ্ঠা, কর্তব্যপরায়ণটা, দায়িত্ববোধ, ও জবাবদিহিতাই হবে শিক্ষার মৌলিক উদ্দেশ্য। সবার উপরে থাকবে মুক্ত চিন্তার অবাধ স্বাধীনতা।

দীর্ঘকাল ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেবাস কমাতে বলছেন, বইয়ের বোঝা কমাতে বলছেন। শিক্ষাবিজ্ঞানীরা ও সে দাবি করে আসছেন। কিন্তু আমলা নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা মন্ত্রণালয় সে কথায় কান দিচ্ছে না। সিলেবাস কমাতে হবে, স্কুল, কলেজের বাইরে যে কোন ধরনের কোচিং কার্যকরভাবে নিষিদ্ধ ও বন্ধ করতে হবে। কোচিং ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে মৃত্যুদণ্ড।

আরো পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য বিশাল সুখবর

এসব লক্ষ্য অর্জন করতে হলে অর্থবরাদ্দ সবার আগে সামনে চলে আসবে বর্তমানে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ২ ভাগ। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ৬ ভাগ এবং বাজেটের অন্তত ২০ ভাগ বরাদ্দ না করলে কোন স্বপ্নই সফল হবে না। আর শিক্ষকদের বেতনের মধ্যে ও বিরাট তফাৎ রয়েছে। যেমন সরকারি শিক্ষকরা যা পান বেসরকারি শিক্ষকরা তাদের ধারে কাছে ও নেই। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষাব্যবস্থার গতি বাড়াতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়- বেসরকারি শিক্ষকরা পাবেন ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট ও ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা। যা সত্যিই প্রশংসনীয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো সরকারি শিক্ষকরা ঠিকই পেয়েছিল সঠিক সময়ে। অপরদিকে, বেসরকারি শিক্ষকরা আন্দোলনের মাধ্যমে পেয়েছেন তিন বছর পর। এ অবস্থার কারণে কিছুটা হলেও শিক্ষক অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছিল। শিক্ষকরা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট, অনশন করা সত্যিই বেদনাদায়ক। বেসরকারি শিক্ষকদের ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দিয়ে তা থেকে আবার অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন করা হচ্ছে অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য, এতেও দ্বৈত নীতি অবলম্বন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ফল বাতিলের কোন সুযোগ নেই

অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য পূর্বে কাটা হতো ৬ শতাংশ, এখন কাটা হচ্ছে ১০ শতাংশ। অতিরিক্ত কোনো সুযোগ সুবিধা না দিয়ে পূর্বে যা ভবিষ্যতেও তাই থাকবে। ৬ শতাংশ কর্তনে অবসর ও কল্যাণ তহবিলে মোট (৭৫+২৫) বা ১০০ মাসের বেতনের সমান সর্বশেষ স্কেল অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য; সেই অনুযায়ী এখন ১৭৫ মাসের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু দুঃখের বিষয় কোনো সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা না করেই অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন করা হচ্ছে, এমনটা মেনে নেওয়া বড়ই কষ্টের। বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য পেনশনের সুযোগ-সুবিধা রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি। বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, ঈদ বোনাসের মধ্যেও পার্থক্য ব্যাপক। বাড়ি ভাড়া সরকারি শিক্ষকরা পান ৪৫-৬০ শতাংশ আর বেসরকারি শিক্ষকরা তা পান মাত্র ১০০০ টাকা। চিকিৎসা ভাতা সরকারি শিক্ষকরা পায় ১৫০০ টাকা আর বেসরকারি শিক্ষকরা পায় ৫০০ টাকা। ঈদ বোনাস সরকারি শিক্ষকরা পান ১০০ শতাংশ আর বেসরকারি শিক্ষকরা পান মাত্র ২৫ শতাংশ । এই দ্বৈত নীতি পৃথিবীর কোথাও আছে কিনা জানা নেই। তবে এই অবস্থার অবসান না হলে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন: এসএসসির পরীক্ষার সংশোধিত রুটিন প্রকাশ

তাই উন্নত জাতি গঠনে উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা একান্ত জরুরি। আর তাছাড়া বেসরকারি শিক্ষকদের জীবনযাত্রার মান বাড়াতে স্বল্প সুদে হাউজ লোন পাওয়ার ব্যবস্থা করা একান্ত কাম্য।যেহেতু সরকারি শিক্ষকরা স্বল্প সুদে হাউজ লোন পায়। তবে কেন বেসরকারি শিক্ষকরা তা থেকে বঞ্চিত হবে?

আর বেসরকারি শিক্ষকরা যাতে সরকারি স্কুলের শিক্ষকের মতো বদলি হতে পারে এটাই বেসরকারি শিক্ষকদের প্রত্যাশা। আবার সরকারি শিক্ষকরা পান বেতন; বেসরকারি শিক্ষকরা পান অনুদান বা সরকারি অংশ, এটা সৎ মায়ের মতো আচরণ। তাই লেখা পড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য চাই সমগ্র বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ।

আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে না আর বই!

শিক্ষকদের পেশাগত মানোন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা খুবই জরুরি সকল স্তরের শিক্ষকের জন্য দেশে - বিদেশের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, উচ্চতর শিক্ষা, গবেষণার সুযোগ দিতে হবে। দক্ষতাভিত্তিক পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে যাতে প্রত্যেক শিক্ষক মাথা উঁচু করে, নির্ভয়ে জ্ঞান চর্চা ও জ্ঞান বিতরণে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারেন।

সর্বোপরি, এক কথায় বলা যায়, জাতীয়করণই হলো সকল সমস্যার একমাত্র কেন্দ্র বিন্দু। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিনীত প্রার্থনা এই যে, আপনি বেসরকারি শিক্ষকদের প্রাণের দাবি সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা জাতিকে উপহার দিবেন।

শিক্ষক ও কলামিস্ট,

মোঃ আজাদ (গণসংযোগ সচিব)।

বাশিস (কেন্দ্রীয় কমিটি) নজরুল

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত