ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২১ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘আব্বা বললেন. তুমি ছড়াটা বলতে পারলা না’

  শাহনাজ মুন্নী

প্রকাশ : ২০ জুন ২০২১, ০৩:৪৬  
আপডেট :
 ২০ জুন ২০২১, ০৩:৫৮

‘আব্বা বললেন. তুমি ছড়াটা বলতে পারলা না’

দুদিন ধরে আমাদের বাসায় মহা উত্তেজনা। আব্বা বার বার আমার পরীক্ষা নিচ্ছেন, ‘বলো তো মা, আরেকবার বলো, দেখি ঠিকমত পারো কিনা?’

এর আগে অসংখ্য অসংখ্য বার একই জিনিস বলেছি, তবু আমি লক্ষী, বাধ্যগত আর শান্ত শিষ্ট মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে আবৃত্তি করি,

‘সিংগারা খেতে খেতে হিং নাড়া যেতে যেতে

দেখি এক মোষ তার গায়ে সাঁটা পোস্টার,

সিংগাড়া খাওয়া চলবে না

শিং নাড়া দেখে তার পিলে মোর চমকায়

সিংগাড়া ফেলে দিয়ে হিং নাড়া ভুলে গিয়ে

সিংহলে ছুটে যাই, ঘন ঘন তুলি হাই।’

আব্বা বলেন, ‘বাহ বেশ। সাঁটা একটু নাঁকি নাঁকি ভাবে বলবা, মনে থাকবে তো? আবার জায়গা মতো গিয়া ভুইল্যা যাইও না। বলবা, আমার নাম মুন্নী, আমি একটি ছড়া বলব, তারপর ছড়া শুরু করবা। কি বলবা আবার বলো, ’

আমি পাখি পড়ার মতো করে বলি, ‘ আমার নাম মুন্নী। আমি একটি ছড়া বলবো .. ...’

ঘটনা হচ্ছে, বড় মামা রবিবার সকালে আমাকে রেডিওর ‘কলকাকলি’ অনুষ্ঠানে নিয়ে যাবেন। মামার পরিচিত কেউ একজন রেডিওতে কাজ করে, তাকে ধরে অনেক কষ্টে তিনি তার আদরের ভাগ্নির জন্য এই বিশেষ ব্যবস্থাটি করেছেন। তখন রেডিওর যুগ, সবার বাড়িতেই এই যন্ত্রটি মহা সমাদরে বিরাজ করে।

বড় মামা তখন বেকার তরুণ, আই এ পাশ করে নেত্রকোণা থেকে ঢাকায় এসেছেন, সারাদিনই টো টো করে ঘুরে বেড়ান, ম্যাটিনী শো তে সিনেমা দেখেন, তার বন্ধু বান্ধবের অভাব নাই। আমার জন্য এরকম একটা দারুণ সুযোগ তৈরি করায় তিনি তার দুলাভাইয়ের কাছে বেশ কদর পাচ্ছেন। আমি তখন সম্ভবত টু থ্রীতে পড়ি। সকাল বেলা দুরু দুরু বক্ষে মামার সাথে শাহবাগে রেডিও অফিসে গেলাম। মামা বাইরে, আর আমাকে একটা লাল কার্পেট বিছানো ঘরের মেঝেতে অনেকগুলি বাচ্চা ছেলেমেয়ের সাথে বসিয়ে রাখা হয়েছে। অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। একটা মেয়ে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাইল ‘ও আমার দেশের মাটি তোমার পড়ে ঠেকাই মাথা ..’ এরপর ছোট্ট বন্ধুদের চিঠিপত্রের উত্তর। দেশ বিদেশের মজার খবর পড়ে শোনালো একজন। এবার আমাদের শিশুদের পালা। ড. নুরুন্নাহার ফয়জুন্নেসা তার মায়াময় কিন্নরী কন্ঠে অনুষ্ঠান পরিচালনা করছেন।

‘এই যে ছোট্ট বন্ধু, কি নাম তোমার, তুমি আমাদের কি শোনাবে?’

কেউ দু লাইনের গান, কেউ ছড়া কবিতা শুনিয়ে যাচ্ছে। এক জন দুই হাতে বাচ্চাদের বগলের নিচে ধরে উঁচু করে মাইক্রোফোনের সামনে ধরছে, আর নামিয়ে নিচ্ছে। আমার পালা এলো সবার পরে। ড, ফয়জুন্নেসা মিষ্টি কন্ঠে বললেন, ‘আরেকজন ছোট্ট বন্ধু এসেছে আমাদের অনুষ্ঠানে. বলো, বন্ধু তুমি কি বলবে?

আমাকেও তখন যথারীতি দুই হাতে আলগি দিয়ে ধরে মাইক্রোফোনের সামনে ঝোলানো হয়েছে। আব্বার শিখিয়ে দেয়া বুলির মতই শুরু করেছি, ‘আমার নাম মুন্নী, আমি একটি ছড়া বলবো..

মাত্র কয়েক লাইন বলেছি, শেষ লাইনটা তখনও বলা হয়নি, এরই মধ্যে ধপাস করে আমাকে মাইক্রোফোনের সামনে থেকে নিচে নামিয়ে আনা হলো।

অনেক ধন্যবাদ ছোট্ট বন্ধু, আমাদের কলকাকলি অনুষ্ঠান আজকের মত এখানেই শেষ হলো।

বাসায় ফিরতেই আব্বা আফসোস করে বললেন. ‘আহা তুমি পুরা ছড়াটা বলতে পারলা না !’

লেখক: কথাশিল্পী ও সাংবাদিক

বাংলাদেশ জার্নাল/ ওআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত