ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

আনুষ্ঠানিক বিদায়ের সংস্কৃতি বাংলাদেশ ক্রিকেটে চালু হোক

  তাকি বিন মহসিন

প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৩, ১৩:১২  
আপডেট :
 ০৭ জুলাই ২০২৩, ১৯:৩৪

আনুষ্ঠানিক বিদায়ের সংস্কৃতি বাংলাদেশ ক্রিকেটে চালু হোক
তামিম ইকবাল। ফাইল ছবি

যে সবুজ গালিচায় এঁকেছেন বর্ণিল জীবনের রঙ, গেয়েছেন বাংলার ক্রিকেটের জয়গান, সেখান থেকে শেষবার সর্বোচ্চ ভালোবাসাটুকু নিয়ে বিদায় কি ক্রিকেটারদের প্রাপ্য নয়? বাংলার ক্রিকেটের সবচেয়ে ভালো সময়গুলো এসেছিল পঞ্চপাণ্ডবের হাত ধরে। প্রচণ্ড আলোচনা সমালোচনার পরেও লাল সবুজের পতাকার পরিচিতি বাড়িয়েছে বিশ্বের দরবারে।

সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর থেকে মাঠের বাইরে। টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিলেও একদিনের ক্রিকেট থেকে এখনও অবসর নেননি মাশরাফি। তার ফিটনেস নেই, জাতীয় দলে খেলার সুযোগটাও নেই বললে চলে। যদি আর সুযোগ না পায় তাহলে মাঠের বাইরে থেকেই অবসর নিতে হবে দেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ককে।

গেলো বৃহস্পতিবার দুপুরে এক বুক অভিমান নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তামিম ইকবাল। আগের রাতের জানিয়েছিলেন সংবাদসম্মেলন করবেন। তখন থেকেই চলছিল বেশ জোরালো গুঞ্জন। যা রটে তাই নাকি ঘটে। শেষ পর্যন্ত ঘটলও তাই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অশ্রুসজল চোখে অবসরের ঘোষণা দিলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল খান। বিদায়ী বার্তা দেয়ার সময় তিনি ভাসলেন চোখের জলে।

তামিম ইকবালের অভিষেক ছিল ধূমকেতুর মত। বাংলাদেশ ক্রিকেটে অধিকাংশ জয়ের ভিত্তির রচয়িতা তিনি। তার বিদায়ের গল্প হওয়া উচিত ছিল রাজসিক, অথচ বিদায় নিয়েছে অশ্রুসিক্ত নয়নে। কোন আনন্দের অশ্রু নয়, রাগ-ক্ষোভ অভিমানের অশ্রু!

মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে যত জলঘোলা হয়েছে, বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে বোধহয় আর কোনো ক্রিকেটারকে নিয়ে আর কখনও এতটা আলোচনা হয়নি। মাহমুদুল্লাহকে যেন অবাঞ্চিতই ঘোষণা করা হয়েছে বাংলাদেশ দল থেকে। সেটি বোর্ড প্রধান, নির্বাচক কিংবা কোচ, সবার ভাষাতে স্পষ্ট। মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে দলের এই মুহূর্তে কোনো পরিকল্পনার ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। তাহলে একদিন সংবাদ সম্মেলন ডেকে মাহমুদুল্লাহও কি এভাবে বিদায় জানাবে?

বর্তমানে বেশ ছন্দে আছেন মুশফিকুর রহিম। মি.ডিপেন্ডেবল ক্রিকেটের ক্ষুদ্র সংস্করণ থেকে অবসর নেননি এখনও। মাঠ হতে অবসর তিনিও নিতে পারেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে যথেষ্টই। কারণ গেলো কয়েকটি টি-টয়েন্টি সিরিজে দলে জায়গা হয়নি মি.ডিপেন্ডেবলের।

অথচ, সাকিব আল হাসান ব্যতীত পাঁচজনের চারজনই খেলাটা মাঠ থেকে ছাড়তে পারেননি।

২০০৭ সালের অভিষেকের পর থেকে জাতীয় দলের হয়ে নিয়মিত খেলছেন টাইগার ওপেনার তামিম। ওয়ানডেতে রান সংগ্রাহকের তালিকায় সবার ওপরে থেকেই লাল-সবুজের জার্সি তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই ব্যাটার।

তামিম সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই বলেন, নরম্যালি এমন সময়ে অনেক মানুষ স্পিচ লিখে আনে, কিন্তু আমি এমন কিছু করিনি। খুব বেশি বড় করবনা, ছোট করেই শেষ করবো আমার কথা। আমার কাছে মনে হয়েছে এটাই সঠিক সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর। সবাইকে ধন্যবাদ জানানো প্রয়োজন।

তামিম যখন কথা বলছিলেন, বারবার মাথা নিচু করে অশ্রুসিক্ত চোখ আর মুখ লুকাচ্ছিলেন ক্যামেরার আড়ালে। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এ সময় তামিম বলেন, আপনাদের অনুরোধ করব, যারা সামনে ক্রিকেট খেলবে।তাদের নিয়ে লিখবেন কিন্ত বাউন্ডারিটা যেন থাকে। ক্রিকেটের মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধ থাকে।

ব্যাট প্যাড তুলে রাখার আগে লাল সবুজ জার্সি গায়ে সব মিলিয়ে ৩৮৯ ইনিংসে ৩৯ এর বেশি গড়ে করেছেন ১৫ হাজার ২০৫ রান। তার নামের পাশে ২৫টি শতকের পাশাপাশি রয়েছে ৯৪টি অর্ধশতক। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান তামিমের দখলে। ২৪১ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩৬.৬২ গড়ে রান করেছেন ৮৩১৩। রয়েছে ১৪টি শতক ও ৫৬টি অর্ধশতক। তামিম টেস্ট ক্রিকেটেও লড়েছেন ওয়ানডের মতোই। অবসর নেয়ার আগে টেস্টে রান সংগ্রাহকের তালিকায় দুই নম্বরে আছেন তিনি। ৭০ ম্যাচে ১৩৪ ইনিংসে ৩৮.৮৯ গড়ে রান করেছেন ৫১৩৪। শতক ১০টি ও অর্ধশতক ৩১টি।

২০২২ সালের ১৬ জুলাই হঠাৎ করেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষনা দেন টি-টোয়েন্টি থেকে সরে দাঁড়ানোর। ৭৮ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ২৪.০৮ গড়ে করেছিলেন ১৭০১ রান। এমনকি টি-টোয়েন্টিতে দেশের হয়ে একমাত্র সেঞ্চুরির মালিকও তিনি। একটি শতকের সাথে তামিমের রয়েছে ৭টি অর্ধশতকও।

তামিম সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন-আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ১৬ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের জন্য ধন্যবাদ জানাই সতীর্থ, কোচ, বিসিবি, পরিবার ও সমর্থকদের।

ক্যারিয়ারের এই দীর্ঘ পথচলায় সবাই আমাকে নানাভাবে সহায়তা করেছেন, ভরসা রেখেছেন এবং আমার ভক্ত-সমর্থক, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের সবার ভালোবাসায় আমি চেষ্টা করেছি সব সময় দেশের জন্য নিজের সবটুকু উজাড় করে দিতে। নিজের বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্যই ক্রিকেট খেলেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমি শুধু একটি কথাই বলতে চাই, আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।’ এরপরই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

বারবার ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠে নিজেকে সামলিয়ে তামিম বলেন, আসলে আমার খুব বেশি কিছু বলার নেই। আমি একটা জিনিসই বলতে চাই-আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি ভালো খেলার। আমি কতটা ভালো খেলোয়াড় ছিলাম, আদৌ ভালো ছিলাম কিনা, আমি জানি না। তবে আমি সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। আমি যখনই মাঠে নেমেছি আমি আমার শতভাগ দিয়েছি।

অবসর-পরবর্তী জীবনের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তামিম, জীবনের নতুন অধ্যায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। সবাইকে আবারও ধন্যবাদ। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিয়েই উঠে যান তিনি।কারো প্রশ্নে কোনো উত্তর দেননি এই কিংবদন্তি ক্রিকেটার।

যার শুরু আছে, শেষটা তার অনিবার্য। তবে যাদের হাত ধরে ক্রিকেটে এসেছে সাফল্য। তারা তো আশা করতেই পারে সুখের বিদায়ের। তামিমের এ হতশ্রী বিদায় কোন ক্রিকেট ভক্তদের কাম্য নয়। মাঠ থেকে সুখের কান্নায় বিদায়ের সংস্কৃতি চালু না হলে তরুণ ক্রিকেটাররা কি নিজেদের অদূর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববেন?

বাংলাদেশ জার্নাল/জিকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত