ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -৬)

  শাহজাহান সরদার

প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০১৯, ১১:৩৮

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -৬)

[দেশের জনপ্রিয় দুটি পত্রিকার (যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন) জন্মের পেছনের ইতিহাস, কর্তৃপক্ষের চাপিয়ে দেয়া বিব্রতকর বিভিন্ন আদেশ নির্দেশ, হস্তক্ষেপ, পত্রিকা প্রকাশের ওয়াদা দিয়ে অন্য একটি জনপ্রিয় পত্রিকা থেকে নিয়ে এসে পত্রিকা না বের করে হাতজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে বিদায় দেয়া, পত্রিকা প্রকাশের পর কোন কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কিছু দিনের মধ্যেই ছাপা সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে লাভ খোঁজা, ইচ্ছেমত সাংবাদিক-কর্মচারি ছাঁটাই করা সহ পত্রিকার অন্দর মহলের খবরা-খবর, রাজনৈতিক মোড় ঘুড়িয়ে দেয়া কিছু রিপোর্ট, সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির কিছু ঘটনা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে আমার এ বই ‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’। জানতে পারবেন সংবাদপত্র জগতের অনেক অজানা ঘটনা, নেপথ্যের খবর।]

(পর্ব -৬)

তা হচ্ছে এ নামে আরেকজন ডিক্লারেশন নিয়ে গেছেন। কিন্তু পত্রিকা নিয়মিত বের হচ্ছে না। পরে মালিককে খুঁজে বের করে এই নামটি নিয়ে ডিক্লারেশন নেয়া হয়। অবশ্য এ প্রক্রিয়ার সাথে আমি যুক্ত ছিলাম না। এর জন্য নাকি অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে। আমি পরে শুনেছি। আগেই বলেছি, আমি তখন নিজ পেশায় বেশি ব্যস্ত। তাই সময় দেয়া সম্ভব হয়নি। আর সারওয়ার সাহেব ও সাইফুল সারক্ষণই কাজ করছেন। কিছুদিন পর হোটেল থেকে নিয়ে কমলাপুর ক্যাম্প অফিস করা হয়। তখন সারওয়ার সাহেব সেখানে বসেন। এরই মধ্যে ভবন হয়ে যায়, প্রেস আসে। নতুন পত্রিকা। সময় লাগে দীর্ঘ। আর দীর্ঘ সময়ে সারওয়ার ভাই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। কারণ তার সবকিছু নতুন করে করতে হয়েছে। যেহেতু আগে তিনি কোনো নতুন পত্রিকা গড়েননি তাই জানতে হয়েছে, বুঝতে হয়েছে, এটি তার জন্যও চ্যালেঞ্জ। বার্তা সম্পাদক থেকে সম্পাদক। ভাল কাগজ হলে নাম, যশ তারই। আর বাবুল সাহেবের একটি কথাই ছিল আমার পত্রিকা হতে হবে একনম্বর। এর জন্য যা প্রয়োজন তিনি দিতে রাজি। তিনিও কথা রেখেছিলেন। সারওয়ার সাহেবও কথা রেখেছিলেন। চাহিদামতো বিনিয়োগ আর টিম নিয়ে সারওয়ার সাহেবের অক্লান্ত পরিশ্রমে যুগান্তর একসময় একনম্বর পত্রিকাই হয়েছিল। পেয়েছিল ভাল বাজার ও জনপ্রিয়তাও। কিন্তু সারওয়ার সাহেব থাকলেন না বা থাকতে পারলেন না। আমি আগেই বলেছি, যুগান্তর বাজারে আসার বেশ আগে থেকেই আমি নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। যা যোগাযোগ হয় বাবুল সাহেবের সঙ্গে। সারওয়ার সাহেবের সঙ্গে এমনকি সাইফুলের সঙ্গেও তেমন যোগাযোগ ছিল না। অবশ্য এরই মধ্যে তারা জেনে যান, আমি যোগ দেব না। বাবুল সাহেব নিজেই সারওয়ার সাহেবকে জানান। এটিও হয়তো কম যোগাযোগের কারণ। আর তারা ব্যস্তও থাকতেন। আর সারওয়ার সাহেব তো কাজ পাগল লোক। কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে ভালবাসেন।

আমি কিন্তু তখনও সপ্তাহে একদিন বা আরও বেশি সময় বাবুল সাহেবের অফিসে নিয়মিত যাতায়াত করতে থাকি। তার সঙ্গে রাজনীতি, ব্যবসা, অর্থনীতি নিয়ে এবং মাঝে মধ্যে পত্রিকা নিয়েও আলোচনা হতো। তখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আমি অফিসের কাজে আরও অনেক ব্যস্ত হয়ে যাই। পরে বাবুল সাহেবের অফিসে যাতায়াতও কমে আসে। তবে মাঝেমধ্যে ফোনে কথা হয়। আমি বাবুল সাহেবকে বলেছিলাম, পত্রিকা লাভজনক করতে হলে বেশ বড় অংকের বিনিয়োগ করতে হবে। কত জানতে চেয়েছিলেন তিনি। আমি তাকে একটি অংক এবং সময় সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিলাম। সে-সময় এগিয়ে আসার আগেই নির্দিষ্ট অংকের বিনিয়োগ ব্যয় কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছে। এমন সময় একদিন ফোন করলেন বাবুল সাহেব, বললেন, কি শাহজাহান ভাই, (তিনি আমাকে এভাবেই সম্বোধন করতেন) আপনার ধারণা দেয়া বিনিয়োগের অংক তো নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ প্রায়। পত্রিকাতো এখনও লোকসান। আমি বললাম, আরেকটু ধৈর্য ধরেন। পত্রিকার কাটতিতো ভাল। আশা করি শিগগিরই সুফল পাবেন। তখন রাজনৈতিক উত্তাপে দেশ কাঁপছে। বাবুল সাহেব সেই উত্তাপের সুযোগ নিলেন। তখন প্রথম দফা আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ শেষদিকে। বাবুল সাহেবের পত্রিকার পলিসি আর সারওয়ার সাহেবের হাতের যশে যুগান্তরের বাজার তুঙ্গে। প্রচারসংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে আর সাথে আয়ও। ঠিকই আমার দেয়া ধারণামতো সময়েই বিনিয়োগের অংকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেই যুগান্তর ব্রেক-ইভেনে চলে এলো। এরপর থেকে লাভ। আমার জানামতে অনেক উত্থান-পতনের পর যুগান্তর এখনও লাভে আছে।

যুগান্তর যখন রমরমা চলছে তখনও বাবুল সাহেবের সাথে আমার নিয়মিত যোগাযোগ হতো। মাঝে মাঝে অফিসেও যেতাম। কিন্তু শেষপর্যন্ত আমি কাজের চাপে দিনে রাতে এত ব্যস্ত হয়ে পড়লাম যে তার অফিসে যাওয়া সম্ভব হত না। আর রাজনৈতিক এত উত্তাপ যে, সারাক্ষণ সংবাদ সংগ্রহের জন্য আমাকে দৌড়াতে হতো। তাই ফোনেও যোগাযোগ কমে আসে। পত্রিকা নিয়েও কথা হয় না। তিনিও বলেন না। আমিও জানতে চাই না। প্রায় চার মাস এমন অবস্থা চলে। সারওয়ার সাহেবের সঙ্গে প্রেসক্লাবে মাঝেমধ্যে দেখা হয়। কিন্তু তার সঙ্গেও পত্রিকা নিয়ে কথা হয় না। এরই মধ্যে তিনি একজন সফল সম্পাদক হিসাবে প্রতিষ্ঠা পান। অনেকে বলেন, জাদুকরী হাত। আর সাইফুলের সাথে দেখা হলেও যুগান্তর নিয়ে কোনো কথা হয় না। তাই যুগান্তরের সর্বশেষ পরিস্থিতি আমি জানতাম না। প্রচার সংখ্যা ও আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যুগান্তরের মালিক আর সম্পাদকরে মধ্যে যে বিরোধ দেখা দিয়েছিল সঙ্গত কারণেই তাও আমার জানা ছিল না। পরে খোদ বাবুল সাহেবের কাছ থেকেই জেনেছি।

দীর্ঘ বিরতির পর ফোন করে বাবুল সাহেব একদিন তার অফিসে যেতে বললেন। গেলাম পরদিন সকালে। জানালেন, সারওয়ার সাহেব হয়তো থাকবেন না। কেন জানতে চাইলাম। তিনি বললেন কিছু কথা। আমি বললাম, বসে আলোচনা করে ঠিক করে নিন। সারওয়ার সাহেব যুগান্তরে অনেক শ্রম-মেধা দিয়েছেন। পত্রিকা ভাল চলছে। আপনিও বিনিয়োগ করেছেন চাহিদামতো। তিনি বললেন, সারওয়ার সাহেব চলে গেলে আমি কীভাবে রাখব? আমি আর কথা বাড়ালাম না। একতরফা কথাই শুনলাম। সারওয়ার সাহেব এ বিষয়ে আমাকে কিছু বলেননি। আর আমিও জানতে চাইনি। কথায় কথায় বাবুল সাহেব বললেন, সম্পাদক দেখতে হবে। কাকে সম্পাদক করা যায়? আমি বললাম, আমার কোনো প্রস্তাব নেই। আপনি দেখেন। আসলে তখন আমার এত সময় ছিল না। অফিসের কাজে অনেক ব্যস্ত। এরপর তিনিই বললেন, আবেদ সাহেবের (আবেদ খান) সাথে জানা-শোনা আছে? আমি বললাম থাকবে না কেন? ইত্তেফাকে আমরা একসাথে কাজ করেছি। এখন ভোরের কাগজের সম্পাদক। বাবুল সাহেব জানতে চাইলেন, তাকে নিলে কেমন হয়। আমি বললাম, তিনি তো এখন ভোরের কাগজের সম্পাদক, ছেড়ে আসবেন কি-না? বাবুল সাহেব বললেন, যোগযোগ করেন না।

চলবে...

বইটি পড়তে হলে সপ্তাহের রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতিবার চোখ রাখুন ‘বাংলাদেশ জার্নাল’ অনলাইনে।

বইটি প্রকাশ করেছে উৎস প্রকাশন

আজিজ সুপার মার্কেট (তৃতীয় তলা), ঢাকা।

বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে ক্লিক করুন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত