ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

শিক্ষকের সন্তান পাপিয়ারা যেভাবে ভয়াবহ সব অপকর্মে লিপ্ত

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৮:৫৯

শিক্ষকের সন্তান পাপিয়ারা যেভাবে অপকর্মে লিপ্ত

নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়া। বাবা ছিলেন অটো গ্যারেজের মালিক। এক সময় তেমন কিছুই ছিল না তাদের। কিন্তু গত পাঁচ বছরে অর্থবিত্ত অর্জন করে আঙুল ফুলে গলা গাছ বনে গেছেন। গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট কিনে হয়েছেন শত কোটি টাকার মালিক। দেশে গাড়ির ব্যবসার পাশাপাশি বিদেশে দিয়েছেন বার। সবই করেছেন অন্যায় ও অপকর্মের ওপর ভর করে। ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের ব্লাকমেইল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও দেহ ব্যবসাই তাদের মূল পেশা।

নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ। নরসিংদীর বাগদী এলাকায় পেট্রোবাংলার অবসরপ্রাপ্ত গাড়িচালক সাইফুল বারীর মেয়ে। পাপিয়ার স্বামীর নাম মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন। স্থানীয় নজরুল একাডেমির অধ্যক্ষ মতিউর রহমান চৌধুরীর বড় ছেলে সুমন।

আরো পড়ুন: এবার বেরিয়ে এলো পাপিয়ার অপরাধ জগতের ‘রাজার’ নাম​

জানা গেছে, বর্তমানে পাপিয়ার বাবার নিজ এলাকায় একটি অটোর গ্যারেজ রয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকটি অটো গাড়ি ভাড়া দিয়ে চলে তাদের সংসার। সম্প্রতি পাপিয়া দোতলাবিশিষ্ট আধুনিক একটি বাড়িও করেছেন।

তার স্বামী সুমনেরও একসময় তেমন কিছুই ছিল না। আধাপাকা টিনশেড ঘরেই কেটেছে তার শৈশব। এসএসসির গণ্ডি পার হওয়ার পর থেকেই তার অপকর্মের সূত্রপাত।

আরো পড়ুন: গ্যারেজ মালিকের মেয়ে শত কোটি টাকার মালিক!

২০০০ সালের দিকে নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমনের উত্থান শুরু। শৈশব থেকেই চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ব্ল্যাকমেইল ছিল সুমনের প্রধান পেশা। দূরদর্শী, চতুর ও মাস্টারমাইন্ড সুমন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন।

২০০১ সালে পৌরসভার কমিশনার মানিক মিয়াকে যাত্রা প্যান্ডেলে গিয়ে হত্যার পর তিনি আলোচনায় আসেন। এরই মধ্যে পাপিয়া চৌধুরীকে বিয়ে করেন সুমন। এরপর তার স্ত্রী পাপিয়াকে রাজনীতিতে কাজে লাগান।

আরো পড়ুন: পাপিয়ার হোটেলবাসের তথ্য দিতে রাজি নয় ওয়েস্টিন​

১৫ দিনের রিমান্ডে পাপিয়া

জাল টাকা উদ্ধার, অস্ত্র ও মাদকের পৃথক তিন মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমানের ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বিমানবন্দর থানার জাল টাকা উদ্ধারের মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম মাসুদুর রহমান পাঁচ দিন এবং শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে দায়ের করা মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীম পাঁচ দিন করে মোট ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

পাপিয়া-মফিজুর দম্পতির সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া তাদের সহকারী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবাকে শুধু বিমানবন্দর থানার জাল টাকার মামলায় আসামি করায় তাদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।

আরো পড়ুন: অবশেষে পাপিয়ার ভিডিও ভাইরাল

রিমান্ড আবেদনের প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, পাপিয়াসহ চার আসামি সংঘবদ্ধভাবে অবৈধ অস্ত্র, মাদক কারবার, চোরাচালান, জাল নোটের ব্যবসা, চাঁদাবাজি, তদবির বাণিজ্য, জমি দখল-বেদখল, অনৈতিক ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে এবং আসামিদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত বৈদেশিক মুদ্রার উৎস ও জাল টাকা তৈরি চক্রের সক্রিয় সদস্যসহ মূল হোতাকে গ্রেপ্তার, আসামিদের নিয়ে পুলিশ অভিযান পরিচালনা ও ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ রিমান্ড একান্ত প্রয়োজন। পুলিশ জাল টাকা উদ্ধারের মামলায় ১০ দিন, অস্ত্র ও মাদক মামলায় ১০ দিন করে ২০ দিন রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছিল।

ঢাকা মহানগর আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, পাপিয়া ও তাঁর স্বামী মফিজুর রহমানকে অস্ত্র, মাদক ও জাল টাকার পৃথক তিনটি মামলায় পাঁচ দিন করে মোট ১৫ দিন এবং তাঁদের দুজনের ব্যক্তিগত সহকারীকে বিমানবন্দর থানায় করা জাল টাকার মামলায় পাঁচ দিন করে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।

আরো পড়ুন: সেই পাপিয়ার ভিডিও ক্লিপে যা আছে​

প্রসঙ্গত, গত শনিবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন এবং তাদের সহকারী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবাকে।

পরদিন রোববার সকালে পাপিয়ার ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে র‌্যাব নগদ ৫৮ লাখ টাকা, অস্ত্র, গুলিসহ নানা জিনিস উদ্ধার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। সেই মামলাগুলো র‌্যাব তদন্ত করতে চায়।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত