ঢাকা, মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

কিশোর গ্যাং’এর উদ্ভব কোথায়?

  এম.এস রিয়াদ

প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২০, ২০:৪৪

কিশোর গ্যাং’এর উদ্ভব কোথায়?

শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা ও এর মামলাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও পত্রপত্রিকায় কিশোর গ্যাং নিয়ে ব্যাপক আলোরণ সৃষ্টিকারী সংবাদ প্রচারে ব্যস্ত সময় পাড় করছি। কিশোরদের যেকোন ধরণের অপরাধকে অতি সহজেই আমরা কিশোর গ্যাং কালচারের সাথে তুলনা করছি। স্কুলপড়ুয়া কিশোরদের চিটেফোটা ঝামেলাটিকেও আমরা কিশোর গ্যাং এর মধ্যে মিলিয়ে দিচ্ছি। আসলে কিশোর গ্যাং সৃষ্টি কিংবা কিশোর অপরাধের মূল উদ্ভব কোন জায়গা থেকে এসেছে বা হচ্ছে, তা নিয়ে কারোরই মাথা ব্যাথা তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না।

গুটি কয়েক পত্রিকায় কিশোর গ্যাং ও এর উদ্ভব বা ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তির পরিচয় উঠে আসলেও হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে সংবাদকর্মীকে। আমাদের সকলেরই জানা আছে একটি বিষয়। যখন একজন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয় একটি নবজাতক শিশুর; তখন কিন্তু পূত হিসেবেই তার জন্ম হয়ে থাকে। প্রত্যেক শিশুরই তার অঞ্চল, পরিবেশ ও পরিবার থেকে সূচনা হয় প্রথম শিক্ষা। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে শিশুটি বড় হতে থাকে। পরিপূর্ণ হয় একজন কিশোর রূপে।

তখন তার বয়স হয়ে দাঁড়ায় ১২-১৭ বছর। এই সময়টায় যেমন পরিবারের পাশে থেকে বন্ধু সুলব আচরণ পাওয়া প্রয়োজন। তেমনি এ সমাজের কাছ থেকেও ভালো কোনো সৌহার্দপূর্ণ আচরণ পাওয়াটাও একান্ত জরুরি। অবশ্য শিক্ষাজীবনে তখন প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিকে পা রেখে থাকে। তাই বিদ্যালয়ের বইয়ের শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক ও সমাজের প্রতি কর্তব্যমূলক কিছু শিক্ষাও প্রয়োজন। এই সময়টায় ছেলে অথবা মেয়েটি কার সাথে মিশছে? বন্ধুত্ব করছে? পড়াশুনার গতি কেমন? কথা বলা ও চলার ভঙ্গি কেমন? এ সবকিছুই পরিবারের সাথে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরো খেয়াল রাখাটা দায়িত্ব বলে মনে করি।

কিন্তু প্রায়শই দেখা যায়, এই কিশোর বয়সে তাদের আসল শিক্ষাটা না দিয়ে এমন কিছু শিক্ষা পেয়ে থাকে, যা দ্বারা এদের মনোভাব অতি সহজেই পরিবর্তন হয়। কেননা এ সময়টা এই কিশোরদের শরীরের সাথে মনও কোমল থাকে। ব্রেইন থাকে পরিষ্কার। তাই পারিবারিক আচরণ ও সমাজের আচরণ থেকে এমন কিছু অনৈতিক শিক্ষা লাভ করে থাকে, যেটা অনেকটা সময় পর্যন্ত এদের মনের মাঝে গেঁথে যায়। যা এই কিশোরদের ক্ষেত্রে হওয়াটা অতি স্বাভাবিক। আবার রাজনৈতিক বহু কর্মকাণ্ডে এদের অজান্তেই জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। যেটা বিদ্যালয় কিংবা বন্ধুদের দ্বারা গঠিত হয়ে থাকে।

যে বয়সটা তাদের গড়ে ওঠার উপরে নির্ভর করে দেশের একজন গর্বিত সন্তান হিসেবে। ঠিক সে সময়টায় এমন কিছু কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে ফেলে দিচ্ছে এই সমাজ। যার পাটকেলটি আমাদেরই খেতে হয়। আমরা নিবন্ধনকৃত যে দলই বলিনা কেনো, প্রতিটি দলেই ছাত্র সংগঠন রয়েছে। যেটা কিশোর গ্যাং এর আরেকটি অন্যতম মাধ্যম। ছাত্র সংগঠনের মূল যে কাজটি করার কথা; তা না করে এমন কিছু কর্মকাণ্ড করে থাকে। যে কর্মকাণ্ড দ্বারা একজন কিশোরকে অপরাধের দিকে প্রভাবিত করে অতি সহজেই।

ছাত্র সংগঠনের মূল কাজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা নিয়ে। যেখানে থাকবে, কিভাবে প্রকৃত একজন শিক্ষিত মানুষ তৈরি করা যায়, গরিব ও মেধাবী ছাত্রটিকে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়া যায়, শিক্ষক সঙ্কট মুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়া যায়। কিন্তু এসকল কর্মকাণ্ডের ঠিক উল্টো হতে দেখা যাচ্ছে। হচ্ছে দলের ভাগাভাগি, ক্ষমতার ধস্তাধস্তি, টেন্ডারবাজীসহ নানা ধরণের অপকর্ম। যা একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনে কিংবা ছাত্র সংগঠনের সংঘটিত কোন নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না। ঠিক ওই জায়গাটা দিয়েই সৃষ্টি হয় একটি সংঘবদ্ধ কোরাম কিংবা দলের। শিক্ষা জীবনেই পড়তে হচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক সত্য-মিথ্যে জড়ানো মামলা-মোকদ্দমায়। শেষ পর্যন্ত নিঃস্ব হতে থাকে ওই পরিবারটি। যাদের আশা ছিলো তাদের সন্তানটি হয়ে উঠবে এ সমাজ তথা দেশের একজন গর্বিত সন্তান। অথচ প্রজ্জ্বলিত হতে গিয়ে নিভে যায় এমন কিছু স্বপ্ন। যে স্বপ্ন বুকে লালন করে পূরণ না হওয়ার ব্যাথা নিয়ে সারাটি জীবন কাটাতে হয়।

একেকটি উজ্জ্বল নক্ষত্র ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে আমাদেরই বাঁচিয়ে রাখাটটা কর্তব্য। তাই শিক্ষা জীবনে শিক্ষাটাকেই মূল হাতিয়ার হিসেবে কোমলমতী শিশু-কিশোরদের মনের মধ্যে গেঁথে দেয়ার ব্যবস্থা এই সমাজেরই দায়িত্ব বলে মনে করি। আসুন, আজ থেকে আমরা শিশু-কিশোরদের নিয়ে এক সুখি-সমৃদ্ধ, সুন্দর ও পরিপাটি সমাজ গঠনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার প্রত্যয়ে নিজেকে গড়ে তুলি। তাহলেই বিশ্বের দরবারে একটি সুখি ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারব। অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠবে আমাদের এই গর্বিত বাংলাদেশ।

লেখক: বরগুনা প্রতিনিধি, বাংলাদেশ জার্নাল।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত