ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১২ মিনিট আগে
শিরোনাম

অকাট্য নষ্টের ভারে কাঁপছে কনস্টেবল

  রাজীব কুমার দাশ

প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২১, ২২:৩৮  
আপডেট :
 ৩০ এপ্রিল ২০২১, ২২:৪৪

অকাট্য নষ্টের ভারে কাঁপছে কনস্টেবল
ছবি: নিজস্ব

শুরুটা এভাবে হতে পারত বিজ্ঞ কৌসুলি একটি ধর্ষণের মামলা জিতে ভিকটিমের মুখে হাসি ফুটিয়ে বাসায় আদরের সোনামণি কোলে নিয়ে বউকে সারাদিনের সফলতার গল্পটা শেষ করে নিশ্চিন্তে টান- টান সন্ধ্যাঘুম দিতে পারতেন। কিন্তু বানভাসি সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে রাতে গভীর ঘুমের ঘোরে পরকালের জেরার দুঃস্বপ্নে একাকী তাপানকুল কক্ষে ও জবুথবু ঘামে ধারে-ভারে কাঁদতে-কাঁপতে থাকা সর্বহারাদের ক্ষীণকন্ঠের ভয়ার্ত আর্তনাদ যখন ছায়ামানব হয়ে ভেসে বেড়াতে দেখে তখন ভালো কিছু করার চৌম্বকীয় ইচ্ছাশক্তি সুযোগ ও পরিস্হিতি কোনটাই থাকে না।

দারোগা হয়ে ওসি এসপি, ডিসি ব্যাংক, ম্যাজিস্ট্রেট জজ-ব্যারিস্টার, ডাক্তার, তহশিলদার, কাস্টমস ভ্যাট হয়ে রাজনীতির অসংখ্য মেধাবী কনস্টেবল যদি তাঁদের অহর্নিশ রোজনামচা প্রতিদিন লিখে রাখতেন দেশে অকাট্য নষ্টদের ধারে-ভারে থাকা হায়নাদের হাতে দেশের সদা জাগ্রত কনস্টেবল কাঁদতে-কাঁপতে দেখতে হতো না।

ভীষণ হায়েনা দলের ধারে-ভারে দেশ প্রেমের সকল জাগ্রত কনস্টেবল কখনো কাঁদছে কখনো কাঁপছে। নষ্টদের কাছে কেজি-সের দরে নিজের মেধা-মনন বুদ্ধি বিবেক বিক্রি করে কাঁধে কাঁধ, হাতে হাত রেখে আমুদে বাসনা নিয়ে নিজেকে বিশ্বজয়ী আলেকজান্ডার ভেবে কখনো খাবার হোটেল, সভা সমাবেশ সেমিনার- সিম্পোজিয়াম অফিস পেরিয়ে ধারে- ভারে বুক ফুলিয়ে আমি-তুমি-সে বলি ‘আমি এমন জেরা করেছি, ভিকটিম সাক্ষী কিছুই বলতে পারেনি। শুধু কাঁদছে-কাঁপছে। ধর্ষণের ঘটনা সত্য! জমি স্কুল-কলেজ বাড়ি দখল হয়ে অন্দরমহলের সুন্দরী নারী ভাগিয়ে নেয়ার ঘটনা ও সত্য। তবে আমার অভিজ্ঞতার সনদের কারণেই আমার মক্কেল ‘doubt of benefit’ সুবিধাভোগী হয়ে বেকসুর খালাস পেয়েছে। তবে আপিলের দরজা খোলা আছে।

মধ্যযুগের সামন্ত-প্রভুদের হাত ধরে একধাপ এগিয়ে ব্রিটিশ বিস্তারবাদের থাবায় লণ্ডভণ্ড এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। নতুন-নতুন কৌশল চালে মধ্যযুগের সব হেরেমখানার বন্দিনীকে রাজনন্দিনী করে ভোগের উপাচারে উদ্দাম উদ্বাহু বাহুডোরে শাসন শোষণ করেছে। শাসন ও বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রহসনে পরিবার- সমাজ জাতিকে প্রজন্মান্তর মিথ্যের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে সমৃদ্ধ করে ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’।

মাই লর্ড সংস্কৃতি চালু করে একটি দুর্ভেদ্য ব্যক্তিত্ব, বর্ণচোরা কুম্ভিল, স্ব-বিরোধি উত্তরসূরি প্রজন্ম-চেতনা তৈরি করে গোঁফের আড়ালে ‘অর্ধহাসি’ উপহার দিয়ে চলে গেছেন।

ঐ যে চাঁদ মামার বিদায়: এ উপমহাদেশের বিপ্লবীরা ব্রিটিশ চাঁদ মামাদের বিদায়ে কী পেয়েছে? ব্রিটিশদের পশ্চাৎ-দেশে বিপ্লবীরা চাবুক মেরে হাত পা চোখ হারিয়ে আন্দামান দ্বীপের বনের রাজা হয়ে, ফাঁসির দড়িতে ঝুলে সর্বস্ব হারিয়ে মনের আনন্দে গান ধরেছে-

‘মনের সুখে গাইব গীত

বাজাইব সারিন্দা, গাইব আউল-বাউল

জারি সারি গান, লালন ফকিরে বাঁধিব

বন্দনা সঙ্গীত।’

বন্দনা সঙ্গীত বিপ্লবীদের বেশি দিন গাইতে হয়নি। বিপ্লবীরা সর্বহারা হয়ে অনেক কষ্টে নিজের ভিটেমাটিতে পৌঁছে দেখে ওখানে নিকটাত্মীয় বলতে কেউ নেই। ব্রিটিশদের রোষানলের আগুনে বাপ দাদার ভিটেমাটি ও রক্ষা পায়নি, বিপ্লবীদের ভিটেমাটি নিলামের টাকায় বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি, সুবিধাভোগী নিজের স্ব-গোত্রের গুপ্তচরদের ইংরেজ সরকার মাইনে দিয়েছে। বিপ্লবীরা তখন হয়ে এখনো ব্রিটিশদের হাত হতে বাঁচতে পেরেছে, বোমা বানিয়ে নিজের হাত উড়িয়ে ব্রিটিশদের মেরে তাড়িয়ে দিয়েছে কিন্তু সগোত্রের সুবিধাভোগী গুপ্তচর পাষণ্ডদের হাত হতে বাঁচতে পারেনি।

বিপ্লবীরা দেখে স্বদেশী আন্দোলন সত্যাগ্রহ হয়ে জালিয়ানওয়ালাবাগ নির্মম হত্যাকাণ্ড, নবাব সিরাজউদ্দৌলা হয়ে সেনাপতি মোহনলালের দেশপ্রেমের রেখে যাওয়া অবশিষ্ট বারুদ ইংরেজ সরকার নষ্ট করেননি। করেছে তাঁদের সগোত্রের আপনজন। বিপ্লবীর যেদিকে চোখ যায়, যেদিকে তাকিয়ে দেখে: সবাই ‘মাই লর্ড’ সংস্কৃতি নিয়ে ব্যস্ত। সারিন্দা ঢোল করতাল নেই বন্দনা সঙ্গীত ও কেউ গাইছে না, গীটার ড্রামে সবাই মশগুল তিড়িং তিড়িং নেচে হেরে গলায় বার বার সবাই তেড়ে আসছে।

ভিটেমাটি ফেরত পেতে আকুতি ভরা প্রার্থনায় সগোত্রের হয়ে বহুগোত্রের দরজায় কড়া নেড়ে চেয়ারম্যান, থানা পুলিশ হয়ে কুল কিনারা না পেয়ে অবশেষে আবার সে ‘মাই লর্ড’। যে ‘মাই লর্ড’ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে হাত পা হারিয়ে ব্রিটিশদের থানায় রাখা ভিসিএনবি (village crime note book) বই, দাগী ফেরারি রাষ্ট্রদ্রোহী তালিকা এখনো স্বদেশী স্যারদের হাতে লেখা হয়। থানায় লালকালিতে যখন সংরক্ষণ হয় বিপ্লবীদের বুঝতে আর বেশি কিছু বাকি থাকে না।

ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলন করে বিপ্লবীদের ভাগ্যের বন্ধ কপাট হয়ে ললাটে চুল পরিমাণ সরে আসেনি। সংস্কৃতির বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আসেনি, কুম্ভিল বর্ণসংকর সংস্কৃতি ভাবনার পরিবর্তন আসুক কেউ চায়নি।

বিপ্লবীরা এখন দেখছে ঘরে ঘরে তাঁদের সগোত্রে সবাই চরম ধোঁকাবাজ, গুপ্তচর, চরম মিথ্যুক, ভণ্ড- প্রতারক নারীলোভী শিশ্নবাজ। ভাবছে ব্রিটিশদের তাড়িয়ে এ জাতির কী-ই লাভ হল! বরং ক্ষতি হয়েছে অনেক বেশি। আগে সাদা চামড়া দেখে অনুমান করা যেত এখন যায়না মনে হচ্ছে এখন সবাই ইংরেজদের উত্তরসূরি। সারাজীবন ইংরেজদের পদলেহন গাত্রলেহন করে রাতারাতি নাইট, চোর-ডাকাত শিশ্নবাজ রায়বাহাদুর খানবাহাদুর হয়ে দিকে দিকে সবাই এখনো ইংরেজ সাহেব। বিপ্লবী কনস্টবল এবার সবহারা সর্বহারা হয়ে ব্রিটিশ উত্তরসূরিদের অকাট্য নষ্টের ধারে ভয়ে কাঁপছে। কেঁদে কেঁদে বলছে ‘দেশ মাতা চাইনা তোমার আশিস, শক্তি-সাহসের প্রমাণ...

~নষ্টদের সাধুবেশী করেছ মহীয়ান ~আমাকে দিয়ে বলিদান।

~নষ্ট-দলের এখনো আতঙ্ক আমি

~তোমার পাহারার কনস্টেবল বলে জানি।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কবি। পুলিশ পরিদর্শক

বাংলাদেশ জার্নাল/কেআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত