আতঙ্কে প্রাথমিক শিক্ষকরা
জাকির হোসাইন
প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৭:১৩
প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে সবচেয়ে বড় বাঁধা হচ্ছে শিক্ষককে তার স্বাধীন মতো পাঠদান করতে না দেওয়া, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ও উৎসাহের চেয়ে চাকুরী বিধির হুমকিই বেশি দেওয়া। বর্তমানে এক একজন শিক্ষক, সে মেধার প্রতিযোগিতা করেই, অনেক আশা আকাঙ্খা নিয়েই শুরু করে শিক্ষকতা। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিদিনের এক একটা পরিপত্রে শিক্ষকেরা আতঙ্কে থাকে, এই বুঝি কি হবে!
আমরা কেন সহজ করে সহজ কথা বলছি না, কিভাবে শিশুরা শিখবে তার দায়িত্ব আপনাদের। মুঠো ফোনে ভিজিট করে ৯ টায় স্কুলে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে পারলেই কি দায়িত্বের দায়িত্বশীলতা বাড়বে! তারপর ৪.৩০ টা পর্যন্ত শিক্ষকের আন্তরিকতা ছিল , না কর্মকর্তার ভয়ে ক্লাস ছেড়ে, ক্লাসের মাঝে পরিপত্রে জারি হওয়া তথ্যগুলো সাজাতে ব্যস্ত ছিল?
শিশুদের প্রতিদিন একটি শব্দ বা একটি শব্দের রেজিস্ট্রার মজবুত করতে,কোনদিন কোন অধ্যায় পড়ানো হলো তার রেজিস্ট্রার ঠিকঠাক করতে বা ক্লাসের পারফরমেন্স যাইহোক পাঠটিকা ঠিক থাকলেই তো বাঁচা যাবে, সবমিলে যেন শিক্ষক যে সবচেয়ে বড় মেথড এ যেন হারিয়ে গেছে চিরসত্য বাক্যটি।
মনে হয় আমার প্রাক্তন সেই ছাত্রটি শফিকুল ইসলামের কথা। যাকে গণিতের একটি অংক শেখাতে ২৭ বার কেটে দিয়েছি,একটুও রাগ বা বিরক্তি করিনি। ২৮ বারের বার সেই অংকটিতে টিক দিয়েছি। সত্য হলো আমার সেই ছাত্রটিই প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাতে গণিতে ১০০ নম্বর পেয়েছিল। বৃত্তিও পেয়েছিল।
সরকারকে খুশী করতে পাশের হার বাড়াতে হবে, শিক্ষার্থীদের বাবা-মাকে খুশী করতে পরীক্ষার আগে প্রশ্ন ফাঁস করে নম্বর বেশী করাতে হবে, স্কুল যেন শোকজ না খায় তাই ভেবে পরীক্ষার হলেই পাশ নম্বর পাওয়ার মতো সহযোগীতা করতে হবে, কিন্তু কেন? কেন?
তাই বলি পাশে হার বাড়াতে পরীক্ষা নয়, পড়ালেখার অগ্রগতি কতটা বৃদ্ধি পেল তা যাচাই করতে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে না কেন? কেন সেই স্কুলের শিক্ষকেরা দায়বদ্ধ হচ্ছেনা আপনার বিদ্যালয়ের ফলাফল খারাপ হলো কেন? ৫ বছর পর একটি শিক্ষার্থীও কি এ+ পাওয়ার যোগ্য হবেনা তা কি করে বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে?
বিদ্যালয়টি হোক শিক্ষকের, শিক্ষার্থীদের দায়িত্বের প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক মহোদয় কর্মকর্তার ভয়ে নয় আপন দায়িত্বে দায়িত্বশীল। সহযোগী হোক অধিদপ্তর, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহোদয়, তবেই এগিয়ে যাবে শিক্ষা, সুশিক্ষা হবে জাতির মেরুদণ্ড। প্রাথমিক শিক্ষা হবে সকল শিক্ষার বুনিয়াদ।
লেখক: প্রাথমিক শিক্ষক