ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

ঢাবির আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি বিনষ্ট হয়েছে: মঈন খান

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৯ মে ২০১৯, ১৪:০৭  
আপডেট :
 ১৯ মে ২০১৯, ১৪:২২

ঢাবির আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি বিনষ্ট হয়েছে: মঈন খান
ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি বিনষ্ট হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান। রোববার রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মঈন খান বলেন, আজ বলতে হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি বিনষ্ট হয়ে গেছে। একসময় অনেক বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী পড়তে এলেও আমার জানা মতে, এই মূহুর্তে একজনও বিদেশী শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত নাই। আমার জানা মতে, ভাষা ইন্সটিটিউটে পূর্ণকালীন ও খন্ডকালীন মিলিয়ে হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষক রয়েছেন। অন্য কোথাও কোন বিভাগে বিদেশী শিক্ষক বা গবেষকের দেখা বলতে গেলে মেলেই না।

তিনি বলেন, আমরা অনেক সময়ই বলি- ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’। এ কথাটি আজও কিন্তু সত্য। বলা বাহুল্য অনেকেই মনে করেন ইউরোপ-আমেরিকা-চীন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি হবার পেছনে বুঝি তাদের সম্পদ ও সমরাস্ত্র। কথাটি সঠিক নয়। দেখুন, বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অবস্থান কিন্তু আমেরিকা, ইউরোপ ও চীন দেশে। কাজেই একটি জাতির উন্নতির সোপান যে একমাত্র শিক্ষাই সেকথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। আর আজ যদি কেউ বলে, অশিক্ষা, কুশিক্ষা ও নকল দিয়ে সরকার এই কাজটিই এদেশে করছে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে, তাহলে অবাক হবার কিছু থাকবে কি?

যে চারটি বিষয়কে ভিত্তি করে টাইমস হায়ার এডুকেশনের র‌্যাঙ্কিংটি করা হয়েছে, সেগুলো বিশ্লেষণ করে মঈন খান বলেন, সম্প্রতি লন্ডন-ভিত্তিক টাইমস হায়ার এডুকেশন পরিচালিত র‌্যাঙ্কিং ব্যবস্থা এশিয়ার ৪১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে যেখানে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত আমাদের সবার গর্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থান করে নিতে পারেনি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় নেই এই তালিকায়। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে একসময় আমরা গর্ব করতাম, যে বিশ্ববিদ্যালয়কে সারা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার দর্পণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তার নাম এশিয়ার ৪১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাতেও নেই। বৈশ্বিক র‌্যাঙ্কিংয়ে হাজারের মধ্যেও নেই, কেন? সেটা আজ জাতির কাছে বড় প্রশ্ন। আসুন কারণগুলো একটু খতিয়ে দেখি।

তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব আজ চরম আকার ধারণ করেছে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাকে মূল্যায়ন না করে নিছক দলীয় রাজনৈতিক কর্মী, অর্থাৎ ছাত্র লীগের কর্মীকে নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে ভোটার তৈরির চেষ্টা করা হয় যাতে শিক্ষক রাজনীতিতে প্রভাব বজায় রাখা সম্ভব হয়।

বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীটি আজ পুরনো বইয়ের একটি প্রদর্শনী কেন্দ্রে যেন পরিণত হয়েছে যেখানে জ্ঞানান্বেষণে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা কদাচিৎ পা ফেলে থাকে। অথচ অনেকেই ভুলে গেছেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরীতে এমন সব দুষ্প্রাপ্য বই ও পাণ্ডুলিপি’র সংগ্রহ রয়েছে যা পৃথিবীর অনেক খ্যাতনামা লাইব্রেরীতেও নেই। অথচ আজ সেগুলোর আদৌ কোন ব্যবহার আছে কিনা সন্দেহ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান যে এত নীচে নেমে গেছে তাতে অবাক হবার কি আছে? সমস্যা যা দিন দিন আরো বাড়ছে বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত দলীয় কর্মীরূপী শিক্ষকদের কারণে।

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কার্যক্রম অপ্রতুল যা আমরা সবাই জানি। গবেষণা তহবিলের অপ্রতুলতার কথাও বহুল আলোচিত। কিন্তু প্রশ্ন হল, পর্যাপ্ত তহবিল দিয়ে দিলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বা রাতারাতি গবেষণা কার্যক্রম বিশ্বমানে পৌঁছাতে সাহায্য করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে? আমার মনে হয় তা না। বেশ কিছু সমস্যা রয়ে গেছে যা দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সমাধান করতে হবে।

মঈন খান বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকের যোগ্যতা যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয় তবে তাকে দিয়ে মানসম্মত গবেষণা করানো কতটুকু সম্ভব তার উত্তর সবারই জানা। ফলে দিন দিন এই প্রশ্নবিদ্ধ শিক্ষক নিয়োগের কুপ্রভাবটি আরো বেশী করে দৃশ্যমান ও স্পষ্ট হতে থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উৎপাদিত গবেষণার পরিমাণ ও মানের ক্ষেত্রে। আবার সাম্প্রতিককালে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের প্রশ্নবিদ্ধ যোগ্যতার কারণে গবেষণা কার্যক্রমে তাদের অংশগ্রহণের আগ্রহের ঘাটতিও পরিলক্ষিত হয়।

কেএস/এনএই্চ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত