ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

একজন দুর্ধর্ষ কেজিবি গুপ্তচরের গল্প

একজন দুর্ধর্ষ কেজিবি গুপ্তচরের গল্প

একজন গুপ্তচরকে অবশ্যই একজন ভালো অভিনেত্রীও হতে হয়। আর এর জলজ্যান্ত প্রমাণ এলোনা ভাবাইলোবা। যিনি প্রায় দুই দশক ধরে নিজের পরিচয় গোপন রেখে ‘ট্রেসি ফোলি’ নামের এক কানাডিয়ান নারীর চরিত্রে ‘অভিনয়’ করেছেন। তার পরিচয় আশপাশের লোকজন জানত না, এমনকি তার বাচ্চারাও না।

ভাবাইলোবা ও তার স্বামী ছিলেন মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নের দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির এজেন্ড। তারা মূলত কেজিবির কাছে সরবরাহ করার জন্য তথ্য সংগ্রহ করতেন।

‘ট্রেসি ফোলি’ নামধারী এলেনা কানাডিয়ান নারীর ছদ্মবেশে কাটান বিশ বছর। অন্যদিকে তার স্বামীর নাম ছিল ‘ডোনাল্ড হিথফিল্ড’। যার আসল নাম ছিলো ‘আন্দ্রে বেজরুভকভ’। তারা দুজন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত কেজিবির আন্ডারকাভার এজেন্ট ছিলেন।

২০১০ সালে ভাবাইলোবা এবং বেজরুভকভকে তাদের বোস্টনের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) অভিযান চালিয়ে এ চক্রের ১০ সদস্যকে আটক করে। যার মধ্যে তারা দুজনও ছিলেন। এ চক্রের বেশিরভাগ সদস্য সাধারণ আমেরিকান বা কানাডিয়ান হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতেন।

আটকের পর গোয়েন্দা বিনিময় চুক্তির আওতায় তাদের রাশিয়ায় পাঠিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তার সঙ্গে রাশিয়ার ফেরত অন্য দুজন দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা ছিলেন অ্যানা চ্যাপম্যান ও সেরগেই ক্রিপাল।

সম্প্রতি ভাবাইলোবা তার গোয়েন্দা ক্যারিয়ার নিয়ে ‘দ্যা উইমেন হু কেন কিপস্ সিক্রেট’ শিরোনামে একটি বই লিখেছেন। যাতে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে রাশিয়া পর্যন্ত কেজিবি এজেন্টদের ‘অবৈধ কার্যক্রমের’ বিরল সব তথ্য তুলে ধরেছেন।

প্রশিক্ষণ ভাবাইলোবা’র বইয়ের সূত্র ধরে জানায় যায় কেজিবি গোয়েন্দাদের দীর্ঘ সময় ধরে ভাষা শেখানো হতো। তাছাড়া কঠোর নজরধারী, কোডিং এবং অন্যান্য বিষয়গুলোতে কিভাবে প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হবে তাও দেখানো হয় তাদের। তাছাড়া তারা যেসব জায়গা সম্পর্কে জানেন না তাতে অবাধ বিচরণের জন্য তাদের কিছু কৌশল শিখিয়ে দেওয়া হয়।

বাস্তবে তিনি এবং বেজরুভকভ বিয়ে করেন সোভিয়েত ইউনিয়নে থাকাকালীন সময়। তারা ১৯৮০ দশক শেষে আলাদা আলাদাভাবে কানাডায় যান এবং সেখানে গিয়ে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। তারা কানাডায় কখনো রাশিয়ান ভাষায় কথা বলতে পারেননি। এ সময়টাতে তারা খুব সাবধানে শুদ্ধ ইংরেজী বলতেন।

গ্রেপ্তারের আগে এই দম্পতি বোস্টনে বাস করছিলেন। এখান থেকে বহু বাধা পেরিয়ে কেজিবি হেড কোয়ার্টারে তথ্য পাঠাতেন।

ভাবাইলোবা বইয়ের বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে তার দুই সন্তানকে নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি জানান, যখন এফবিআই তাকে এবং তার স্বামীকে আটক করেন, তখন তার ছেলে অ্যালেক্সের বয়স ছিল ১৬ এবং টিমের বয়স ছিল ২০। তাদের গ্রেপ্তারের সময়ও তাদের সন্তানরা জানতেন তারা বাবা-মা সাধারণ কানাডিয়ান।

ভাবাইলোবার গল্পটি মার্কিন টেলিভিশন সিরিজ ‘দ্যা আমেরিকান’ ভক্তদের কাছে পরিচিত। কারণ এর নির্মাতা তাদের পরিবারের কাহিনী নিয়ে শোটি তৈরি করেছিলেন। যেখানে তার জীবনের ১৯৮০ এর দশক থেকে আটকের সময় পর্যন্ত দেখানো হয়। ভাবাইলোবা বলেন, ছোট এই টিভি সিরিজটি আসলেই অনেক বাস্তব সম্মত।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত