ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

ইনিংস ব্যবধানেই হারলো বাংলাদেশ

  স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০১৯, ১৬:০৯  
আপডেট :
 ১৬ নভেম্বর ২০১৯, ১৬:২৪

ইনিংস ব্যবধানেই হারলো বাংলাদেশ

প্রথম দিনের ব্যাটিং ব্যর্থতা, দ্বিতীয় দিনের ছন্দহীন বোলিংয়ে হতাশার দিন কাটানোর পর তৃতীয় দিনে ইনিংস ব্যবধানেই হারলো সফরকারী বাংলাদেশ। কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতাই দাঁড় করাতে পারেনি বাংলাদেশ। পাঁচদিনের টেস্টে দ্বিতীয়বার ব্যাট করতে নেমে ২১৩ রানের অলআউট হয়ে যায় মুমিনুলরা। এতে ১৩০ রানে হারতে হয়েছে সফরকারীদের। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৪ রান আসে মুশফিকের ব্যাট থেকে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে এটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ। কলকাতার ইডেন গার্ডেনে সিরিজের দ্বিতীয় তথা শেষ টেস্ট ম্যাচটি শুরু হবে ২২ নভেম্বর।

ইন্দোরে ভারতের বিপক্ষে টস জিতে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১৫০ রানে অলআউট হয়। জবাবে ভারত তাদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে ৪৯৩ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। এরপর বাংলাদেশ তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ২১৩ রানে অলআউট হয়।

দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় বাংলাদেশ। ঠিক যেন প্রথম ইনিংসের পুনরাবৃত্তি। প্রথম ইনিংসের মতো এবারও দুই অঙ্কে যেতে পারলেন না ওপেনার ইমরুল। দলীয় ১০ রানে ওপেনার ইমরুল কায়েস ৬ রানে ফিরে যান সাজঘরে। ভারতের হয়ে দিনের প্রথম আঘাত হানেন যাদব। অন্যদিকে সাদমানও হাঁটলেন প্রথম ইনিংসের মতই। ব্যক্তিগত ৬ রানেই ইশান্তের বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে পথে হাঁটা শুরু করেন। দলীয় ৩৭ রানের মাথায় মোহাম্মদ শামির বলে এলবির ফাঁদে পড়েন দলপতি মুমিনুল হক (৭)। এরপর শামির বলে আগরওয়ালের হাতে ধরা পড়েন ২৬ বলে ১৮ রান করা মোহাম্মদ মিঠুন। দলীয় ৪৪ রানে বাংলাদেশ চার উইকেট হারায়।

দলীয় ৭২ রানে বাংলাদেশকে আরো বিপদে ফেলে গেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শামির বলে রোহিত শর্মার ক্যাচ হয়ে ব্যক্তিগত ১৫ রান করেই ফিরতে হয়েছে তাকে। এরপর মাঠে নামেন লিটন দাস। মুশফিককে সাথে নিয়ে হাল ধরেন দলের। গড়েন ইনিংসের প্রথম ৫০ রানের পার্টনারশিপ। কিন্তু আশ্বিনের শিকার হয়ে ৩৫ রানে ইনিংসের সমাপ্তি টানেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। এরপর মিরাজকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন মুশফিক। ৫০ রানের জুটি গড়ার পাশাপাশি তুলে নেন ক্যারিয়ারের ২০ তম হাফ সেঞ্চুরি। তবে খুব বেশিদূর যেতে পারেননি মিরাজকে নিয়ে। চা বিরতির পরপরই উমেষ যাদবের দ্বিতীয় শিকার হন মিরাজ। ফেরেন ৫৫ বলে ৩৮ রান করে। টিকতে পারেননি তাইজুলও। ৬ রান করে মোহাম্মদ সামির চতুর্থ শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। ঠিক তার পরপরই অশ্বিনের বল ডাউন দ্যা উইকেটে এসে বড় শট খেলতে গিয়ে পূজারার তালুবন্দি হন মুশফিকুর রহিম। মুশফিকের আউটে ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়টা এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের। সবশেষে এবাদাত হোসেনের উইকেট নিয়ে সেই শঙ্কা পূর্ণ করেন অশ্বিন।

এর আগে দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশকে একাই ভুগিয়েছেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল। গেল অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভিসাখাপত্তনমে ২১৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের বিপক্ষেও ছুঁলেন দ্বিশতক। মিরাজের করা ৯৯তম ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন।

দিনের শেষভাগে ৩৩০টি বল খেলে ২৮টি চার ও ৮টি ছক্কার সাহায্যে ২৪৩ রান করে ফিরলেন এই ভারতীয় ওপেনার। দলীয় ৪৩২ রানে মিরাজের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে রাহির হাতে ক্যাচ হন তিনি। বল হাতে বাংলাদেশের আবু জায়েদ চৌধুরী রাহী ৪টি উইকেট নিয়েছেন। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও এবাদত হোসেন।

এর আগে ইন্দোরে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশ থেকে ৬৪ রানে পিছিয়ে থেকে ১ উইকেটে ৮৬ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন ব্যাটিংয়ে নামে ভারত। দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই চেতেশ্বর পুজারার উইকেট পেতে পারতেন আবু জায়েদ রাহী। কিন্তু স্লিপে কঠিন ক্যাচ নিতে পারেনি মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে নিজের ওভারে এসে ঠিকই পুজারাকে ফিরিয়েছেন রাহী। মিরাজের বদলী সাইফের দুর্দান্ত ক্যাচে ৫৪ রানেই সাজঘরে ফিরে পুজারা। এরপর মায়াঙ্ক আগারওয়ালের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বিরাট কোহলি। কিন্তু ভারতীয় দলপতিকে বেশিক্ষণ ক্রিজে রাখেনি রাহী। রিভিউ নিয়ে বিরাট কোহলিকে ফিরিয়েছে বাংলাদেশ। ভারত অধিনায়ক মেরেছেন ডাক। আবু জায়েদ রাহী পেয়েছেন তৃতীয় উইকেট।

কোহলিকে হারিয়ে কিছুটা হোঁচট খায় ভারত। তবে সেই হোঁচট কাটিয়ে দলের রানের চাকা সচল রাখেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল। আর তাকে সঙ্গ দেন আজিঙ্কা রাহানে। আগারওয়াল তুলে নেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক। আর রাহানে তুলে নেন অর্ধশতক। এই দুইয়ে মিলে গড়েন ১৯০ রানের বিশাল জুটি। এরপর নিজের ১৮তম ওভারে রাহানেকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন রাহী। ৮৬ রান করা রাহানে তাইজুল ইসলামের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান। ভারতের পতন হওয়ার প্রথম চার ব্যাটসম্যানকেই ফেরান রাহী।

ক্যারিয়ারের ৮ম টেস্টে খেলতে নেমে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসের ৯৯তম ওভারের ৫ম বলে মেহেদী হাসান মিরাজকে ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে পূর্ন করেন ডাবল সেঞ্চুরি। এরপর ব্যাট হাতে আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠে মায়াঙ্ক। ঝড়ো গতিতেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম আড়াইশত রানের ইনিংসের দিকেই। এর আগে অবশ্য জাদেজার সঙ্গে গড়েন ১২৩ রানের জুটি। ইনিংসের ১০৮তম ওভারের তৃতীয় বলে বাউন্ডারি লাইন থেকে মায়াঙ্কের ক্যাচ ধরেন রাহী। আর এতেই শেষ হয় মায়াঙ্কের ক্যারিয়ার সেরা ২৪৩ রানের ইনিংস।

তবে দিনের শেষ দিকে এসে এবাদত তুলে নেন এই টেস্টে নিজের প্রথম উইকেট। মায়াঙ্ক আউট হয়ে ফিরে গেলে উইকেটে আসেন ঋদ্ধিমান সাহা। আর ইনিংসের ১১১তম ওভারের পঞ্চম বলে ১২ রান করা সাহাকে ক্লিন বোল্ড করে বিদায় করেন এবাদত। উমেশ যাদবের সঙ্গে ঝড়ো জুটি গড়ার পথে ৭২ বলে ফিফটি করেন জাদেজা। ৬০ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি, আর ২৫ রানে খেলছিলেন উমেশ।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে গেছে ১৫০ রানে। দলের কোনো ব্যাটসম্যান করতে পারেননি ফিফটি। তিনবার জীবন পেয়ে মুশফিকুর রহিমের ৪৩ রান ছিল দলের সর্বোচ্চ। ইন্দোরের উইকেটে পেসারদের জন্য সহায়তা ছিল। তবে তাদের দারুণ বোলিংয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের পতন ডেকে এনেছে ব্যাটসম্যানদের বাজে শট নির্বাচনও।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত