ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

ব্লাস্টের বালাই না থাকলেও

কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণাঞ্চলের ৮ জেলায় গম চাষীরা হতাশ

  কাঞ্চন কুমার, কুষ্টিয়া

প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:৪০

কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণাঞ্চলের ৮ জেলায় গম চাষীরা হতাশ

কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণাঞ্চলের ৮ জেলায় গম চাষে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনা কৃষি সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন গমে ব্লাস্ট সংক্রমণের ফলে কুষ্টিয়াসহ দেশের ৮ জেলায় গম চাষ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জেলাগুলো হচ্ছে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, মাগুড়া, নড়াইল ও ভোলা।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারীতে মেহেরপুর জেলায় এমন সংক্রমণ দেখা দিলেও এসকল জেলায় পরপর ৩ বছর গম চাষ না করার নির্দেশনা আসে কৃষি মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু কৃষি বিভাগের সেই নির্দেশনা সত্ত্বেও গত বছর এ অঞ্চলের কৃষকরা গম চাষ করে ব্যাপক ফলন পান। ভাল ফলন পাওয়ায় এবারও গম চাষে আগাম প্রস্তুতি নিয়েছেন কৃষকরা। তবে বিএডিসি বীজ সরবরাহ বন্ধ রাখায় চাষীদের খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। বীজ না পেয়ে দোকানে দোকানে কৃষকের ভীড় করতে দেখা গেছে। বিএডিসি কর্মকর্তাদের দাবী এ সকল অঞ্চলে বিএডিসি বীজ বরাদ্দ দিলেও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর বীজের সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।

কৃষি বিভাগের এমন সিদ্ধান্তে হতাশ চাষীরা। বীজ না পাওয়ায় হতাশার কথা জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বড়–রা গ্রামের লুৎফর শেখ। তিনি জানান, গতবার ৩ বিঘা জমিতে গমের আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছিলাম। এবারও গমের আবাদ করব বলে বীজ কিনতে এসেছি দোকানে। কিন্তু সরকার বীজ না দেয়ায়, বীজ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছি। বীজ নিতে আসা আরেক চাষী পলাশ আলী জানান, গমের আবাদের বিষয়ে আমাদেরকে কোন পরামর্শ দেয়নি কৃষি বিভাগ। কিন্তু হঠাৎ করেই বিএডিসি’র বীজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা বিপাকে পড়েছি। বিভিন্ন কোম্পানীর বীজ বেশি দামে কিনে তা আবাদ করতে হচ্ছে।

বিএডিসি’র উপ-পরিচালক (বীজ ও বিপনন) এ.কে.এম কামরুজ্জামান জানান, কুষ্টিয়া অঞ্চলে এবার গমের বীজের বরাদ্দ নেই। বিএডিসি প্রথমে বীজ বরাদ্দ দিলেও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর বীজের সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। সে কারনে কৃষক এবং ডিলারদের মাঝে বীজ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তাছাড়া কৃষি বিভাগ থেকেও গম উৎপাদনের বিষয়ে কোন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি।

বিএডিসি’র ডিলার সাগর আহমেদ জানান, বিএডিসি বীজ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় চাষীরা বীজ নিতে এসে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। তাছাড়া কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কোন পরামর্শও নেই গম চাষের বিষয়ে।

কুষ্টিয়া বীজ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফখরুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, চাষী পর্যায়ে গম বীজের ব্যাপক চাহিদা আছে। প্রতিদিন গম বীজ কিনতে চাষীরা দোকানে ভীড় করছেন। কিন্তু বিএডিসি গম বীজ বিতরণ না করায় আমরা চাষীদের বীজ দিতে পারছি না।

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, ২০১৫ সালে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের বেশ কিছু জেলায় গমে ব্লাস্ট রোগ শনাক্ত হয়। এর ফলে কৃষি বিভাগ থেকে গম চাষে বিরত থাকতে চাষীদের পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। বিশেষ করে বারি ২৬ জাতের গম চাষ না করার কঠোর নির্দেশনা ছিল। পরের বছরের বীজ শোধন করে বপনের নির্দেশনা দেয়া হলেও কিছু কিছু জমি পুনরায় এ রোগে আক্রান্ত হয়। গতবছর জেলায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছিল গমের ফলনও ছিল ভালো। তবে যেহেতু কৃষি বিভাগের নির্দেশনা পর পর তিন মৌসুম গম চাষ কর যাবে না। সেই কারনে এবারও গম চাষে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে না। তবে ওই কর্মকর্তা জানান, যারা গমের আবাদ করতে ইচ্ছুক তাদেরকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছেনা। অবশ্য যারা গম উৎপাদনে ইচ্ছুক তাদেরকে বিরতও থাকতে বলা হচ্ছেনা।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা খামারবাড়ির অতিরিক্ত পরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ হায়াত মাহমুদ বলেন, যারা গমের আবাদ করবেন তাদেরকে বীজ শোধন করে আবাদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তবে বারি ২৬ জাতসহ যেসব গমে ব্লাস্টের সংক্রমন দেখা দিয়েছে সেইসব জাতের গমের আবাদ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। তবে বারি-২৮, ২৯ ও ৩০ জাতের গম আবাদে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে চাষীদের। এসব জাতের গমে ব্লাস্টের সংক্রমন নেই। অবশ্য আরো কিছু কিছু জাত রয়েছে সেই সব জাতের গম আবাদের পরামর্শ দেয়া হবে। তবে এখনই নয়।

/এসএস/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত