ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩২ মিনিট আগে
শিরোনাম

ছি কক্সবাজার কলেজ ছাত্রলীগ!

  কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০১৮, ০০:১৩

ছি কক্সবাজার কলেজ ছাত্রলীগ!

‘হায় বাংলাদেশ! ছি ছাত্রলীগ। আমি দুঃখিত। তোমরা দেশরত্নের গর্বিত মাথা নিচু করে দিলে! ছি! কক্সবাজার কলেজ ছাত্রলীগ...’। এটি একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস। তবে কোনো রাজনীতিবিদ বা ছাত্র সংগঠনের কারো স্ট্যাটাস নয়। এটি কক্সবাজার সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক মুজিবুল হকের ফেসবুক স্ট্যাটাস।

সোমবার কক্সবাজার সরকারি কলেজে ছাত্রলীগ নেতারা অধ্যক্ষসহ শিক্ষকদের রুমের ভেতরে তালা দিয়ে আটকে রাখেন এবং নাজেহাল করেন। কলেজের বিরোধপূর্ণ জমির উপর নতুন করে সরকারি অনুদানে রাস্তা নির্মাণের দাবিতে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ব্যানারে কলেজ ছাত্রলীগ এ ঘটনা ঘটায়। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক মুজিবুল হক এই স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

কক্সবাজার সরকারি কলেজের বিরোধপূর্ণ জায়গার উপর সরকারি কাবিটার ১০ লাখ টাকা অনুদানে একটি সড়ক নির্মাণের কাজ চলছিল। কলেজ ছাত্রলীগ নেতারা টাকার বিনিময়ে ওই কাজের তদারকি করছিলেন। অভিযোগ আছে, স্থানীয় এফাজউল্লাহ নামে এক ব্যক্তির বিরোধপূর্ণ জায়গার রাস্তা করে দিতেই কলেজের জমিতে মূলত এই সড়কটি করা হচ্ছিল। কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে জমি দখল করে সড়ক নির্মাণের বিরোধিতা করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজ কর্তৃপক্ষ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও দেয়। তাদের আপত্তির কারণে গত রোববার ওই প্রকল্পের বরাদ্দ বাতিল করা হয়। এরপর থেকেই কলেজ কর্তৃপক্ষের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ছাত্রলীগ।

কলেজের মালিকানাধীন জমিতে 'শেখ রাসেল'-এর নামে রাস্তা নির্মাণ বন্ধ করে দেওয়ায় কক্সবাজার সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাণ্ডব চালান। সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কলেজের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ব্যানারে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবৈধ এই রাস্তা নির্মাণের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে বিক্ষোভ মিছিল, চেয়ার টেবিল ভাঙচুর, অধ্যক্ষের কক্ষে তালাসহ সাত শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন। পরে পুলিশ এসে তালাবদ্ধ কক্ষ থেকে শিক্ষকদের উদ্ধার করে।

তবে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ওই আন্দোলনের সাথে ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক নেই। আন্দোলনটি করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারাই অধ্যক্ষের কক্ষে তালা দিয়েছে। একটি মহল এ ঘটনায় ছাত্রলীগকে জড়িয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইসতিয়াক আহম্মদ জয় জানান, কক্সবাজার সরকারি কলেজ নিয়ে কোনো রকম ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না। এই কলেজ কক্সবাজারের ২৫ লাখ মানুষের সম্পদ। এই কলেজ আমাদের আবেগের সর্বোচ্চ স্থান। যে বা যারা কলেজের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছে, তারা দেশ ও দশের শত্রু। এতে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলেও ছাড় দেয়া হবে না।

তিনি বলেন, স্পষ্টভাবে বলতে চাই আমাদের অবস্থান অবশ্যই কলেজের স্বার্থে, কলেজ প্রশাসনের পক্ষে। সুতরাং এখানে কলেজ ছাত্রলীগেরও কলেজের স্বার্থ ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করার একবিন্দু পরিমাণ সুযোগ নেই।

কক্সবাজার সরকারি কলেজ শিক্ষক পরিষদের সভাপতি মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরাই কলেজে ভাঙচুর, অধ্যক্ষের কক্ষে তালা ও সাত শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেছে। কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি জাকির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন ক্যাম্পাসে উপস্থিত থেকেই এসবের ইন্ধন দিচ্ছিলেন বলে দাবি করেন তিনি।

কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ একেএম ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, ওই জমি নিয়ে কলেজের সাথে মামলা চলছে। তাই সেখানে রাস্তা নির্মাণ বন্ধ করতে কলেজের পক্ষ থেকে ইউএনও ও কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের কাছে আবেদন করা হয়।

তিনি আরো বলেন, এফাজ উল্লাহ নামে এক ব্যক্তি কলেজ ছাত্রলীগকে ব্যবহার করছেন। এই সড়কটি হলে এফাজ উল্লাহ উপকৃত হবেন। এই সড়ক কলেজের কোনো কাজে আসবে না বলে জানান অধ্যক্ষ।

কক্সবাজার সদর থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার বলেন, কলেজের পাশে একটি সড়ক নির্মাণ করা নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ করছে।

কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন প্রিন্স বলেন, এটি একটি বিরোধপূর্ণ জমি। ওই জমিতে স্থাপনা নির্মাণে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তথ্য গোপন করে প্রকল্পটির অনুমোদন নেয় আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ইয়াকুব আলী ও কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি জাকির হোসেন।

ইউএনও প্রিন্স আরো জানান, অনুমোদনে শর্ত ছিল আমার সাথে পরামর্শ করেই রাস্তাটি নির্মাণ করা হবে। কিন্তু তারা আমাকে না জানিয়েই গোপনে রাতের আঁধারে রাস্তা নির্মাণ করছিল। এ কারণে আমি ১৭ মার্চ প্রকল্পটি বাতিল করে রাস্তা নির্মাণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেই। তারপরও রাতের আঁধারে কাজ করার অপরাধে চারজনকে আটক করি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে একজনকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

এদিকে কলেজের সড়ক নির্মাণ নিয়ে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আগামীকাল জরুরি সভা ডেকেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।

/এসকে/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত