ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২২ মিনিট আগে
শিরোনাম

বাবার পর চলে গেলেন মা, শোকে স্তব্ধ মাহি

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০১৮, ১৭:২৪  
আপডেট :
 ২৩ মার্চ ২০১৮, ১৭:৪২

বাবার পর চলে গেলেন মা, শোকে স্তব্ধ মাহি

কাঠমান্ডুতে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের পাইলট আবিদ সুলতানের মৃত্যুর শোক আর কাটিয়ে উঠতে পারলেন না তার স্ত্রী আফসানা খানম। সুলতান-আফসানা দম্পতির একমাত্র ছেলে তানজিব বিন সুলতান মাহি অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে মা- বাবাকে হারিয়ে শোকে দিশেহারা। অথচ বাবার মতো পাইলট হওয়ার অদম্য ইচ্ছে ছিলো সুলতান-আফসানা দম্পতির ‘ও’ লেভেল পরীক্ষার্থী একমাত্র ছেলে তানজিব বিন সুলতান মাহির।

আর ক’দিন পরেই ও লেভের পরীক্ষা। পড়ার বইয়ে যখন মন বসানোর কথা উত্তরার মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ছাত্র তানজিব বিন সুলতান মাহির, তখন ১১ দিনের মধ্যেই দুইবার তাকে বহন করতে হলো জন্মদাতা পিতা-মাতার কফিন। ৩ দিন আগে লাইফ সাপোর্টে থাকা মাকে হাসপাতালে রেখেই বিমানবন্দর থেকে বাবার মরদেহ গ্রহণ করতে গিয়েছিলো তাদের একমাত্র সন্তান মাহি। শুক্রবার যে তাকে মায়ের শেষকৃত্যও সারতে হবে- কে জানতো!

আফসানার চাচা ইয়াদ আলী জানান, ‘ভোরেই আমরা জানতে পারি ওর অবস্থা খারাপের দিকে। আমরা আসতে আসতে ওর অর্গানগুলো অকার্যকর হতে থাকে। পরে সাড়ে ৯টায় মারা যায়।’

তিনিই জানান, বাবার পর মায়ের মৃত্যুতে একেবারে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে মাহি।

আবিদের ছোট ভাই খুরশীদ মাহমুদ বলেন, ‘আপনারা প্লিজ আমাদের একটু একা থাকতে দিন। আমাদের স্বাভাবিক হয়ে উঠতে দিন।’

আফসানার ফুপাতো ভাই ইঞ্জিনিয়ার শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, গত রাতেও হাসপাতালে ছিলো মাহি। মায়ের খোঁজ খবর রেখেছে। ভোরে বাসায় চলে যায়। কিন্তু সাড়ে ৯টার দিকে মৃত্যু হয় মা টপির। সাড়ে ১০টায় দুঃসংবাদটি জানানো হয় মাহিকে। কান্নায় ভেঙে পড়েছে মাহি। কোনোভাবে বোঝানো যাচ্ছে না। বারবার মায়ের কাছে যেতে চাইছে।

শাহিন বলেন, একটা ছেলে যার বাবার পর মাও এক সপ্তাহের ব্যবধানে মারা গেল তার মনের অবস্থাটা বুঝুন। আমরা সবাই ওকে সহযোগিতা করবো। আপনারা ওর জন্য দোয়া করবেন। দেশবাসীর কাছে অনুরোধ আবিদ-টপির জান্নাত কামনায় দোয়া করবেন। মাহি যেন শোক কাটিয়ে শক্ত হতে পারে সেজন্য দোয়া কামনা করছি।

ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র আবিদ সুলতান একসময় বাংলাদেশ এয়ারফোর্সের বৈমানিক ছিলেন। তাদের গ্রামের বাড়ি নওগাঁর রানীনগরে। বাবা এম এ কাশেমও ছিলেন বৈমানিক। পাঁচ হাজার ঘণ্টা ফ্লাইট চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল আবিদের। নেপালের বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত ড্যাশ ৮-কিউ ৪০০ এয়ারক্রাফটটি ক্যাপ্টেন তিনিই কানাডা থেকে বাংলাদেশে উড়িয়ে এনেছিলেন।

আর আফসানাদের গ্রামের বাড়ি নাটোরে। তার বাবা এ কাশেম শেখ একজন চিকিৎসক। ছেলেকে নিয়ে তারা থাকতেন উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর সড়কের ৩৮ নম্বর বাসায়।

১২ মার্চ নেপালের কাঠমাণ্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয় ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট। ওই সময় বিমানটির ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হলেও পরের দিন পাওয়া যায় তার মৃত্যু সংবাদ।

তার স্ত্রী এই খবরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। গত রোববার ভোরে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। পরে উত্তরার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আবিদ সুলতানের স্ত্রীকে। সেখান থেকে ন্যশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনরা।

হাসপাতালে আফসানা খানমের মস্তিষ্কে অস্ত্রপচারের পর নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। কিন্তু তার অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার থেকেই লাই সাপোর্টে ছিলেন তিনি।

/এসকে/

আরও পড়ুন :

মারা গেছেন পাইলট আবিদের স্ত্রী

স্বামীর পাশেই সমাহিত হচ্ছেন আফসানা

  • সর্বশেষ
  • পঠিত