ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

৪৩ জলদস্যু-সন্ত্রাসীর আত্মসমর্পণের নেপথ্যে

  কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:৩৫

৪৩ জলদস্যু-সন্ত্রাসীর আত্মসমর্পণের নেপথ্যে

কক্সবাজারের মহেশখালীর পাহাড়ি অঞ্চলসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা বাহীনির ক্রমাগত অভিযান, গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি এবং কৌশলগত পদক্ষেপের কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে জলদস্যু ও সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম। বর্তমানে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও সুন্দরবন অঞ্চলে জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের পর স্বাভাবিক জীবন যাপন তাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে। অনেকেই এখন স্বাভাবিক জীবনে ফেরার স্বপ্ন দেখছেন।

র‌্যাব-৭ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো: মাশেকুর রহমান বলেন, সুন্দরবন অঞ্চলের জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের ফলে দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলে জলদস্যুদের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মহেশখালী-কুতুবদিয়া অঞ্চলের জলদস্যুরা দস্যু জীবনের অবসান ঘটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে উৎসাহী হয়। এর প্রেক্ষিতে র‌্যাব ও তাদের জন্য সুযোগ করে দেয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুন্দরবন অঞ্চলে জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ করানো ছিল যুগান্তকারী ঘটনা। ২০১৬ সালের ৩১ মে মাষ্টার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে এ অগ্রযাত্রার শুরু হয়। এ পর্যন্ত ২৬টি বাহিনীর ২৭৪ জন জলদস্যু/বনদস্যু ৪০৪টি অস্ত্র ও ১৯ হাজার ১৫৩ রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করেছে। এদের অধিকাংশ জলদস্যু বর্তমানে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে সুন্দরবন অঞ্চলে নতুন করে কোন জলদস্যু বাহিনীর উত্থান ঘটেনি।

শনিবার কক্সবাজারের মহশেখালীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসর্মপণ করে জলদস্যুতাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছয়টি সন্ত্রাসী বাহিনীর ৪৩ সদস্য। তাদের মধ্যে দুই জলদস্যু বাহিনীর প্রধানসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ১২ জন জলদস্যু রয়েছে।

শনিবার বেলা ১২ টার দিকে মহশেখালীর আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র জমা দেয়ার পাশাপাশি স্বাভাবিক জীবনে ফেরার অঙ্গিকার করেন তারা। আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে আনজু বাহিনীর ১০ জন, রমিজ বাহিনীর ২ জন, সন্ত্রাসী বাহিনী নুরুল আলম প্রকাশ কালাবদা বাহিনীর ৬ জন, জালাল বাহিনীর ১৫ জন, আইয়ুব বাহিনীর ৯ জন ও আলাউদ্দিন বাহিনীর ১ জন সদস্য রয়েছে। তারা মোট ৯৪ টি দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও ৭ হাজার ৬৩৭টি গুলি জমা দিয়েছেন। এসব বাহিনীর অস্ত্র-গোলাবারুদসহ দলবলে আত্মসমর্পনের ফলে সাগরের মহেশখালী-কুতুবদিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে দস্যুবৃত্তিতে নিয়োজিত অন্যান্য জলদস্যু ও সন্ত্রাসীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে উৎসাহী হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আত্মসর্মপণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে ছিলেন, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ, কক্সবাজার সদর ও রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন, র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে: কর্ণেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ, র‌্যাবের পরচিালক (মিডিয়া) মুফতি মাহমুদ, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. সিরাজুর মোস্তফা, কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজবিুল ইসলাম প্রমুখ।

আত্মসমর্পণকারী দুই জলদস্যু বাহিনীর সদস্যরা হলেন, মহেশাখালীর সোনাদিয়া দ্বীপের ‘আনজু বাহিনী’র প্রধান আনজু মিয়া (৩৩), অপর ৯ জন সদস্য সোনাদিয়া দ্বীপের মৃত মোস্তফার ছেলে সুমন মিয়া (৩৮), সোনাদিয়ার পূর্ব পাড়া গ্রামের মৃত এখলাছ মিয়ার ছেলে মকছুদ মিয়া (৩২), আব্দুর রহমানের ছেলে মোনাফ মিয়া (২৮), মোজাফ্ফরের ছেলে মোবারক (২৭), বাহাদুর মিয়ার ছেলে মনজুর মিয়া (৩০), বাদশা মিয়ার ছেলে নুরুল মোস্তফা প্রকাশ নাগু (৩০), নুরু মিয়ার ছেলে ছৈয়দ হোসন (৩০), মৃত বাহাদুরের ছেলে নবাব মিয়া (২৯) ও আব্দুল গফুর প্রকাশ নাগু মেম্বারের ছেলে ইমতিয়াজ উদ্দিন প্রকাশ নকিব (৩১)। কুতুবদিয়ার ‘রমিজ বাহিনী’র প্রধান রমিজ উদ্দীন (৩৫) ও তার সহযোগী ছালেহ আহমদ প্রকাশ ছইল্যা ডাকাত (৪৬)।

র‌্যাব-৭ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো: মাশেকুর রহমান বলেন, এসব বাহিনীর অস্ত্র-গোলাবারুদসহ দলবলে আত্মসমর্পণের ফলে বঙ্গোপসাগরের মহেশখালী-কুতুবদিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে দস্যুবৃত্তিতে নিয়োজিত অন্যান্য জলদস্যু ও সন্ত্রাসীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে উৎসাহী হবে। মহেশখালী কুতুবদিয়াসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের জলদস্যু, সন্ত্রাসীদের ধরতে র‌্যাবের অভিযানও অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/কে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত