বিএফইউজে’র ভোটগ্রহণ শেষ, ফলাফলের অপেক্ষা
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০১৮, ১৭:১৬
শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন- বিএফইউজে নির্বাচন। এবার নির্বাচনে ১০টি পদের বিপরীতে ৩৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শুরুবার সকাল ৯ টায় শুরু হওয়া এই ভোটগ্রহণ বিরতিহীনভাবে চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
বিএফইউজে নির্বাচনে ঢাকাসহ সারাদেশে মোট ভোটার ৪ হাজার ১৪১ জন। শুধু ঢাকাতে ভোটার সংখ্যা তিন হাজার ২৫০ জন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র জাতীয় প্রেস ক্লাব ও তার আশেপাশের এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। নির্বাচনের জন্য জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে মঞ্চ এবং প্রেস ক্লাব চত্বরে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল। নির্বাচন উপলক্ষে রাজধানীর তোপখানা রোডের জাতীয় প্রেস ক্লাব এবং এর আশপাশে এলাকায় প্রার্থীরা ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, প্লেকার্ড লাগিয়ে চলছে জমজমাট ভোটের প্রচারণা।
সবমিলিয়ে বিএফইউজের নির্বাচনে ভোটের দিনেও সরগরম প্রচার প্রচারণা চলে। সব প্রার্থীই জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। তবে ভোটার বলছে এবারের নির্বাচনে যে কোনো মূল্যে সৎ, যোগ্য ও মেধারী নেতৃত্বেকে নিয়ে আসতে হবে। সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় এই ইউনিয়নের সঠিক নেতৃত দিতে হলে যোগ্য ও পেশাদার সাংবাদিকদের নেতৃত্বে আনতে হবে। অন্যথায় সাংবাদিকদের মর্যাদা ধরে রাখা যাবে না।
এ ব্যাপারে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও বিএফইউজে নির্বাচনের ভোটার আবু জাফর সূর্য্য বলেন, ‘ভোট তাকে দিয়ে চাই, যিনি সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষা করবেন। সাংবাদিকদের স্বার্থ বেচাকেনা করবেন না।’
আরেক ভোটার সাঈদ সিপন বলেন, ‘সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃত্বে যারা আসবেন তাদের সৎ থাকতে হবে এবং লোভ লালসাকে দূরে ঠেলে দেওয়ার মতো গুণ থাকতে হবে। যাদের এই গুণটি থাকবে আমরা চাই তারাই নেতৃত্বে আসুক।’
আরেক ভোটার তাবারুল হক বলেন, ‘আমরা পরিবর্তন চায়। এমন নেতৃত্ব প্রত্যাশা করি যারা স্বাধীন সাংবাদিকতার কাজ করবে। সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পেশার মর্যাদা রক্ষায় সোচ্চার থাকবেন।’
অন্যদিকে সভাপতি প্রার্থী আবদুল জলিল ভুঁইয়া বলেন, ‘নির্বাচন খুবই আনন্দ উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে হচ্ছে। আমরা চাই, এই সাংবাদিক ইউনিয়নের মাধ্যমে যারাই নির্বাচিত হবে তারা সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষা আন্দোলনে সোচ্চার থাকবেন।’
বিএফইউজের আরেক সভাপতি প্রার্থী ওমর ফারুক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হচ্ছে। আমি আশাবাদী, সাংবাদিকরা আমার অতীতের শ্রম, মেধা, দক্ষতা আলোকে বিচারে বিশ্লেষণ করলে আমি বিজয়ী হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি সাংবাদিকদের রুটি-রুজি-মর্যাদা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সবকিছু করব। বিশেষ করে ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার জন্য ওয়েজবোর্ড কার্যকর এবং প্রিন্ট মিডিয়ার জন্য নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করব।’
স্বতন্ত্র থেকে সভাপতি প্রার্থী মোল্লা জালাল বলেন, ‘পেশাদার সাংবাদিকদের এক ছাতার নিচে আনার জন্য আমি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। আশা করছি, ভোটারা সেটি মনে নেখে আমাকে নির্বাচিত করবে। আমি নির্বাচিত হলে সত্যিকারভাবে একটি কার্যকর ইউনিয়ন গঠন করব।’
এদিকে নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা কারণে প্রেসক্লাব সংলগ্ন টেনিস গ্রাউন্ডে প্রবেশপথের বাইরেই সব প্রার্থী ও সমর্থকদের প্রচারণা সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। ভোটারদের দেয়া ছোট-বড় নির্বাচনী কার্ডও ওই সীমানার বাইরেই রেখে যেতে হচ্ছে। ভোটারদের সুবিধার্থে বাইরে হাউস অনুযায়ী ভোটারের নাম ও নম্বর সম্বলিত ব্যানার টানিয়ে দেয়া হয়েছে। ভোটাররা খুবই স্বাচ্ছন্দ্যে টেনিস গ্রাউন্ড সংলগ্ন পথ দিয়ে পায়ে হেঁটে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারছেন। ভেতরে বিভিন্ন এজেন্টদের সারিবদ্ধভাবে বসতে দেখা যায়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার আলমগীর হোসেন, নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম রতন ও হাসান আরেফিনকে অডিটোরিয়ামের ওপর ডায়াস থেকে সার্বিক নির্দেশনা দিতে দেখা যায়। অডিটোরিয়ামের ভেতরেও পর্যাপ্ত সংখ্যক বুথ দেখা যায়। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় প্রার্থী, সমর্থক ও ভোটাররা সবাই খুশি। সবার এক কথা এর আগে সাংবাদিকদের কোনো নির্বাচনে এতো সুন্দর পরিবেশ ছিল না।
এবারের নির্বাচনে দুইটি পূর্ণ পরিষদ ছাড়াও অনেকে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। প্যানেল দুইটি হলো, ফারুক-শাবান-দীপ পরিষদ এবং জলিল-কাজল-মধু পরিষদ। ফারুক-শাবান-দীপ পরিষদে সভাপতি পদে ওমর ফারুক, সহসভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা ও মহাসচিব পদে শাবান মাহমুদ, যুগ্ম-মহাসচিব রফিকুল ইসলাম সবুজ, কোষাধ্যক্ষ দীপ আজাদ, দফতর সম্পাদক পদে হেমায়েত হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।নির্বাহী সদস্য রয়েছেন স্বপন দাসগুপ্ত, মফিদা আকবর, শফিউদ্দিন আহমেদ বিটু ও নুরে জান্নাত সীমা।
জলিল-কাজল-মধু পরিষদে সভাপতি পদে আবদুল জলিল ভুঁইয়া, সহ-সভাপতি ড. উৎপল কুমার সরকার ও মহাসচিব পদে জাকারিয়া কাজল, যুগ্ম-মহাসচিব নাসিমা আক্তার সোমা, কোষাধ্যক্ষ মধুসূদন মণ্ডল, দফতর সম্পাদক পদে বরুণ ভৌমিক নয়ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ ছাড়া এই পরিষদে নির্বাহী সদস্য পদে, জহুরুল ইসলাম টুকু, খায়রুজ্জামান কামাল, শেখ মামুনুর রশিদ ও আখতার জাহান মালিক।
প্যানেলের বাইরে স্বতস্ত্র প্রার্থী হিসেবে সভাপতি পদে মোল্লা জালাল, কোষাধ্যক্ষ পদে নজরুল কবির, যুগ্ম-মহাসচিব পদে আবদুল মজিদ, খায়রুল আলম, দীপংকর গৌতম, ফজলুল হক বাবু ও মানিক লাল ঘোষ, দফতর সম্পাদক পদে রেজাউল করিম রেজা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এছাড়াও নির্বাচনে প্যানেলের বাইরে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, সেবিকা রানী, মীর আফরোজ জামান, আবদুল খালেক লাভলু, শামসুর রহমান ও আখতার জাহান মালিক।
গত ৬ জুলাই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও শ্রম আদালতের নির্দেশে নির্বাচনের ঠিক আগের দিন অর্থাৎ ৫ জুলাই নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। পরবর্তীতে রিট খারিজ হলে ১৩ জুলাই নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হয়।