ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে ঐক্য নয়: বি. চৌধুরী

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৯:৪৫  
আপডেট :
 ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৯:৪৭

স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে ঐক্য নয়: বি. চৌধুরী

স্বাধীনতার বিরোধী যারা ছিলো আর যারা আছে তাদের সাথে ঐক্য নয় বলে সাফ জানিয়েছেন যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে সাথে নিয়ে ভারসাম্যের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য বেগবান হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শনিবার বিকেলে ঢাকা মহানগর নাট্য মঞ্চের মিলনায়তনে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া আয়োজিত এক নাগরিক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

'কার্যকর গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলুন' উপলক্ষে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, আমার পবিত্র স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, আমার পবিত্র পতাকার বিরুদ্ধে, লাখ লাখ মানুষের রক্তে ভেজা, লাখ মানুষের চোখের পানিতে ভেজা এই মাটির বিরুদ্ধে যারা ছিল, যারা আছে তাদের সাথে ঐক্য করবো না।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তির সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কারণ এখন রুখে দাঁড়ানোর সময়, এখন অধিকার আদায়ের সময়। প্রতিবাদের কণ্ঠকে ধারালো করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, একটি স্বেচ্ছাচারী, গণতন্ত্রবিরোধী সরকার গত ১০ বছরে যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে, এমনি আবারো একটি অনুরূপ সরকারের ঝুঁকি আমরা নিতে পারি কি? সংসদে, মন্ত্রিসভায়, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি করতেই হবে। না হলে স্বেচ্ছাচারমুক্ত বাংলাদেশের নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করা যাবে না।

জাতীয় নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ্য করে বি. চৌধুরী বলেন, আমরা বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি এবং বিএনপির সাথে আলোচনা করছি। আশা করি ফলপ্রসূ হবে। আসুন, সবাই ইতিবাচক স্বপ্নে জেগে উঠতে চাই। স্বপ্নভঙ্গের অধ্যায় রচনা করার জন্য নয়। সিদ্ধান্ত আপনার।

তিনি বলেন, সরকারের কাছে জনগণের প্রশ্ন, যে স্বাধীনতা আনতে লাখ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে, লাখ লাখ মা-বোনকে ইজ্জত দিতে হয়েছে, এর মূল্যবোধ কোনো পদদলিত? দিন-রাত প্রতিটি ঘন্টা নিয়ে, আতংকে কোনো থাকবে মা-বোনেরা, শংকায় থাকবে গুম, রাহাজানি নিয়ে, ইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধীদের ছাড় দিবে? কেনো ঘুষ দুর্নীতিকে ‘স্পীড মানি’ বলে সরকারিকরণ করা হলো? সমস্ত জাতির নৈতিকতাবোধকে পদদলিত করা হলো? এই অধিকার কে দিয়েছে আপনাদের?

সাবেক এই রাষ্ট্রপতি আরো প্রশ্ন রাখেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে কঁচি-কিশোরদের রাস্তায় নামতে হবে কেনো, কেনো, কেনো? কেনো কোটা সংস্কারের পক্ষে মেধাবি ছাত্রদের কেনো আন্দোলন করতে হবে? কেনো আপনাদের অপরাধের প্রতিবাদে কথা বলার জন্য সভা-সমাবেশ করার জন্য পুলিশের অনুমতি নিতে হবে? অথচ আপনারা যখন, তখন, যত্রতত্র সভা সমাবেশ করতে পারেন। কেনো, কেনো? আমরা আর সমাবেশের জন্য অনুমতি চাইবো না- বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

ইভিএম কেউ চায় না এ প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, কেনো আপনাদের সুবিধার জন্য ইভিএম গ্রহণ করতে হবে? কেনো সরকারি কর্মচারীদের দলীয়করণ করা হলো? কেনো তাদের সবসময় ভয়ভীতির মধ্যে রাখা হচ্ছে, কেনো, কেনো? কেনো স্বাধীন দেশের মা-বোনদের ও শিশুদের উপর নির্যাতন হচ্ছে, কেনো, কেনো?

তিনি বলেন, আমাদের রাষ্ট্র তুমি কোথায়? আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের সঙ্গী আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র কোথায়? কেনো গঙ্গার পানি পাবো না, কেনো বন্ধু রাষ্ট্র তিস্তার পানি দিবে না, কেনো, কেনো, কেনো?

সভাপতির বক্তব্য কামাল হোসেন বলেন, কেউ কেউ জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে ষড়যন্ত্র বলে অবহিত করছে। কিন্তু আমরা প্রকাশ্য বৈঠক ও মিটিং করছি। এই ঐক্যের মধ্যে দেশের মুক্তি আপনাদের উপস্থিতি প্রমাণ করছে।

দেশের দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে গণস্বাস্থ্য বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, মুক্তির পথ একটাই সুষ্ঠু নির্বাচন।কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এটা দিবেন না। আমি বলতে চাই, আপনার (শেখ হাসিনা) বাবা ৭৩ সালে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন দিয়েছিলেন। আপনিও সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন দিয়ে দেখুন না কী হয়।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুল রব বলেন, আমরা আর বন্ধ ঘরে থাকবো না, মাঠে যাবো। কারণ দেশটা খুন, গুম ও বেওয়ারীশ লাশে পরিণত হয়েছে। আর বাংলাদেশটা লুটের রাজ্য পরিণত হয়েছে। কারণ দেশে কোন সরকার নাই।

নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে রব বলেন, যারা নিরপেক্ষ সরকারের থাকবে তারা নির্বাচন করতে পারবেন না

নাগরিক ঐক্য আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ঐক্য হয়ে গেছে। কারণ তারা (যুক্তফ্রন্ট) যে ১৫ টি দাবি দিয়েছে, এই দাবির সাথে আমাদের দাবি মিলে। তাই ঐক্য ঘোষণার আনুষ্ঠানিকতা মাত্র বাকি।

তিনি বলেন, আমরা সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। তবে তার ব্যবস্থা আগে করতে হবে। কিন্তু সরকার আমাদের হাত-পা বেধে পানিতে ফেলে দিয়ে বলছে নির্বাচন করুন।

এসময় তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবি জানান।

সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক জুনায়েদ সাকি বলেন, সরকার বলছে, নির্বাচন হবে, আসলে আসেন- না আসলে আসবেন না। এটা সংঘাতের ভাষা। সুতরাং এই সরকার আবার ক্ষমতায় আসলে বিরোধী দল নিচিহ্ন হয়ে যাবে।

সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে আমরা জাতীয় সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছি সাকি বলেন, সরকার যদি এই সমঝোতার না আসে তাহলে বুঝতে হবে সরকার সংঘাতকে উস্কে দিচ্ছে। তখন আন্দোলন ছাড়া অন্য কোন পথ থাকবে না।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। এছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুল রব, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুলতান মোরশেদ, সব্রত চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত