ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

কুলাউড়ায় কৃষকদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে কে!

  মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২০, ০৬:৪৯

কুলাউড়ায় কৃষকদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে কে!

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ধান পরিমাপ ও চেকিং করার কথা বলে কৃষকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক মোটা অংকের টাকা আদায় করে নিচ্ছেন ধান সংগ্রহে নিয়োজিত ঠিকাদারের শ্রমিকরা। গুদামের দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহীন মিয়াকে টাকা না দিলে ধান গ্রহণ করেন না তিনি। এমন অভিযোগ করেছেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলায় একটি পৌরসভাসহ ১৩টি ইউনিয়নে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ২৪ হাজার ৫০০ জন কৃষক আমন চাষ করেছেন। চলতি মৌসুমে ধান সংগ্রহের জন্য মোট ৪ হাজার ৪৯৬ জনের তালিকা থেকে লটারির মাধ্যমে দুই হাজার ২৪২ কৃষক সরকারের কাছে সরাসরি ধান বিক্রির সুযোগ পান। ৩ মাসে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ২ হাজার ২৪২ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে ধান সংগ্রহ অভিযানের প্রায় ২ মাস পার হলেও ধান ক্রয় করা হয়েছে মাত্র ৬৫০ মেট্রিক টন। এ হিসেবে গড়ে প্রতিদিন ১১ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হয়েছে। ধান ক্রয়ের কার্যক্রম চলবে আগামী ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বাকি সময়ে ২২৪২ মেট্রিক টন ধান ক্রয় আদৌ সম্ভব হবে কি না, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করছেন কৃষকরা। ধান সংগ্রহ কম হচ্ছে বলে স্থানীয়ভাবে রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ।

উপজেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, লটারি বাছাইয়ে নির্ধারিত ২ হাজার ২৪২ জন কৃষকের কাছ থেকে কেনা হচ্ছে এই ধান। প্রতি কৃষকের জন্য সর্বোচ্চ ১টন ধান বিক্রির সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রতি কেজি ধানের মূল্য ধরা হয়েছে ২৬ টাকা। কেনার ক্ষেত্রে খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ ধানের আদ্রতা নির্ধারণ করেছে ১৪ শতাংশ। গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে আমন ধান ক্রয়ের কার্যক্রম শুরু হয়।

সরেজমিন উপজেলা খাদ্য গুদামে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কৃষকরা তাদের ধান নিয়ে এসেছেন। অনেকেই সপ্তাহ খানেক আগে ধান জমা দিয়েছেন কিন্তুু টাকার রসিদ এখনো পাননি। কারণ সেখানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি সরব নেই।

কৃষকদের অভিযোগ, সেই সুযোগে ধান সংগ্রহে নিয়োজিত ১৪জন শ্রমিক কৃষকদের কাছ থেকে জোর করে টনপ্রতি ৩০০-৪০০ টাকা আদায় করে নিচ্ছেন। কোনো কৃষক টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে শ্রমিকরা ধান পরিমাপ ও গ্রহণ করবে না বলে টাকা দিতে বাধ্য করে তাদের। খাদ্যগুদামের কর্মচারী মনিন্দ্র সিংহ আদ্রতা চেক করার সময় কৃষকদের কাছ থেকে ১০০-১৫০ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন। ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬৫০ জন কৃষকের মধ্যে অনেকের কাছ থেকে টনপ্রতি ৩০০ টাকা করে প্রায় লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খাদ্য গুদামে ধান নিয়ে আসা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের কৃষক বলেন, ধানের আদ্রতা কম আছে জানিয়ে হয়রানি করেন তারা। আবার টাকা দিলে আদ্রতা ঠিক হয়ে যায়। কিন্তুু এখানে দায়িত্বরত শ্রমিকরা আমাদের কাছে জোরপূর্বক ধান পরিমাপে ৩০০ টাকা ও ধানের আদ্রতা চেকিংয়ের জন্য ১০০-১৫০ টাকা করে নেয়। তাদের কথা না শুনলে তারা ধান পরিমাপ করবে না বলে আমাদের হুঙ্কার দেয়।

তাছাড়া কয়েকজন কৃষক দাবি করে বলেন, গুদামের দায়িত্বরত শাহীন মিয়াকে ৫হাজার দিয়েছি। এরপর আমাদের ধান রিসিভ করেন।

ধান সংগ্রহে নিয়োজিত শ্রমিকদের সর্দার নেত্রকোণার বাসিন্দা বকুল মিয়া বলেন, ধান পরিমাপে কৃষকরা খুশি হয়ে যা দিচ্ছে তা আমরা নিচ্ছি। কৃষকরা টাকা না দিলে আমাদের পোষায় না। তাই টাকা নিচ্ছি।

ধান সংগ্রহে নিয়োজিত ঠিকাদার আকবর আলী বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে টাকা চেয়ে নেবার কোনো নিয়ম নেই। আমার কোন শ্রমিক যদি টাকা নিয়ে তাকে তাহলে বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

কুলাউড়া খাদ্য গুদামের দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহীন মিয়া টাকার বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, যারা ধান দিতে ব্যর্থ তারাই এমন কথা বলে।

এ ব্যাপারে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার দেব বলেন, আবহাওয়া প্রতিকূলে না থাকায় ধান ক্রয়ে একটু ধীরগতি হয়েছে তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গুদামের ভিতরে ধান পৌছে দেবার পর কৃষকদের কাছ থেকে টাকা নেবার কোন সুযোগ নেই। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ধান সংগ্রহের ঠিকাদারদের সাথে সভা করা হয়েছে কৃষকদের কাছ থেকে কোন টাকা না নেবার জন্য।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা ধান-চাল সংগ্রহ কমিটির সভাপতি এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে টাকা বা হয়রানি যাতে না করা হয় সেজন্য দুটি ব্যানার গুদামে লাগানোর নির্দেশনা দিয়েছি। ধান সংগ্রহে অভিযোগ কিংবা অনিয়মে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে.

বাংলাদেশ জার্নাল/আর

  • সর্বশেষ
  • পঠিত