ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

ভাইয়ের পরিবারকে তালাবন্ধ করেছে আরেক ভাই!

  মাদারীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২০, ১৮:১৮

ভাইয়ের পরিবারকে তালাবন্ধ করেছে আরেক ভাই!

ভাইয়ের পরিবারকে ৪ দিন যাবৎ তালাবন্ধ করে রেখেছে আরেক ভাই। এছাড়া বসতঘরের সকল চালের টিন খুলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্পেন প্রবাসী মজিবর রহমান তালুকদারের বিরদ্ধে। ঘটনাটি মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার বিভাগদী গ্রামের তালুকদার বাড়িতে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বসতঘরের উঠানে আসবাবপত্র বের করে রাখা। ঘরের সামনের দরজা তালাবন্ধ। চালের কোন টিন নেই। শুধু চালের ওপরের কাঠ পড়ে আছে। যেকোন সময় বৃষ্টি ও ঝড় আসলে বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হবে গিয়াসউদ্দিনের পরিবার। এই পরিবারে একটি দশম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে রয়েছে এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া একটি ছেলে রয়েছে। তাদের পড়াশুনা করতে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু পাশেই গিয়াসউদ্দিনের আরেক ভাই বিল্ডিং করে বসবাস করছে।

আরও জানা যায়, গিয়াসউদ্দিন এই বসতঘরটি অনেক কষ্ট করে প্রায় ২০ বছর যাবৎ নির্মাণ করেছে। এখনো সেই ঘরে সামনের দরজায় তালাবন্ধ রাখা আছে। মফিজুর নামে এক ভাই রয়েছে, তার কাছে গিয়াসউদ্দিনের এক আত্মীয়কে স্পেন নেয়ার জন্য ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিল। সেই টাকা আজ পর্যন্ত মফিজুর ফেরত দেয়নি। তবে বাধ্য হয়ে গিয়াসউদ্দিন নিজের পরিবারের সোনাগনা ও জমি বিক্রি করে তার আত্মীয়ের টাকা ফেরত দিয়েছে। আর এই টাকা যখনই ফেরত চায়, তখনই গিয়াসউদ্দিনের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়। তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ও ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।

গিয়াসউদ্দিনের দশম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে ঐশি কান্না করতে করতে বলেন, আমি আমার চাচার পায়ে পর্যন্ত ধরেছি, তারপর আমাদের ঘরে তালা দিয়ে রেখেছে। আমাদের ঘরের চালের সকল টিন খুলে নিয়ে গেছে। ঘরের সবকিছু এলোমেলো করে ফেলেছে। কয়েকদিন যাবত আমি পড়াশুনা করতে পারছি না।

গিয়াসউদ্দিন তালুকদার জানান, আমি আজ ১৫-১৬ বছর যাবত বিদেশে থেকে এসে অনেক কষ্ট করে এই ঘরটি দিয়েছি। কিন্তু আমার ভাই মজিবর রহমান বিদেশ থেকে এসে এই ঘর তার বলে দাবি করছে। আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। এমনকি আমার ঘরের চাল খুলে নিয়ে গেছে। আমার পরিবারের সকলকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।

গিয়াসউদ্দিনের স্ত্রী পাপিয়া জানান, আমার স্বামী অনেক কষ্ট করে এই ঘরটি দিয়েছে। আমিও অনেক কষ্ট করেছি। এখন আমার স্বামীর ভাই বিদেশ থেকে এসে আমাদের ঘর থেকে বের করে দিতে চেয়েছিল। ঘরের সকল আসবাবপত্র বাহির করে দিয়েছে। এরপর যখন বের হতে চাইনি, তখন আমাদের সকলকে ঘরের মধ্যে তালাবদ্ধ করে রেখেছে। এখনো আমরা সবাই তালাবদ্ধ হয়ে আছি।

অভিযুক্ত মজিবর রহমান তালুকদারকে বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়নি। পরে তার ফোনে একাধিকবার কল করেও তার সাথে কথা বলা যায়নি।

তবে তার আরেক ভাই মফিজুর তালুকদার জানান, মজিবর ভাই বিদেশে থাকা অবস্থায় যা ইনকাম করে দিয়েছে, তা গিয়াসউদ্দিনের কাছে দিয়েছে। এই ঘরের সকল টাকা তার, গিয়াসউদ্দিনের কোন টাকা নেই।

কালকিনি মডেল থানার ওসি মো. নাসির উদ্দিন মৃর্ধা জানান, আমি জানতে পেরেছি যে ঘরে গিয়াসউদ্দিন বসবাস করে, সেটা তার ঘর না। স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বসে একটি সমাধান করে দিয়েছিলাম, সেটা সে মানেনি। তবে তাকে থাকার জন্য একটি স্থান দেয়া হয়েছে। ঘরে চালের টিন খুলে নিয়ে ঠিক হয়নি। তালা দেয়ার কথা জানি না, আমি বিষয়টি দেখছি।

মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর, কালকিনি ও ডাসার) বদরুল আলম মোল্লা জানান, তারা অভিযোগ করলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কালকিনি উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামের সরকারি ফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মাদারীপুর জেলা প্রশাসকে বিষয়টি জানানো হয়।

জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, আমি বিষয়টি জানতাম না, কেউ জানায়নি। আমি বিষয়টি ওসিকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলছি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত